শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৯ অপরাহ্ন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঁচ বছরে ৯৯ খুন, মামলা ১৯০৮

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২
  • ১৬৭ Time View

ডেস্কনিউজঃ একের পর এক হত্যাকাণ্ড, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবারের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অস্থিরতা বিরাজ করছে রোহিঙ্গা শিবিরে। পুলিশের তথ্য মতে, ২০২১ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত চার বছরে ক্যাম্পে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৩৪ জন নিহত হয়েছেন। ২ হাজার ৮৫০ জনের বিরুদ্ধে ১ হাজার ২৯৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার বেশিরভাগই হয়েছে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অভিযোগে। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। আর এ সময়ের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং ক্যাম্পে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ খুন হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে একটি মাদ্রাসার ছয়জন ছাত্র-শিক্ষককে একসাথে হত্যার ঘটনা সবাইকে বিচলিত করে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা, আতঙ্কে অনেকেই রাতে ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বর্তমানে রোহিঙ্গারাই তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এপিবিএন পুলিশের সাথে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন।সর্বশেষ মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২ টার দিকে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে উখিয়া জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দুর্গম পাহাড়ের ঢালে।

নিহতরা হলেন, ক্যাম্প ১৫ সি-১ ব্লকের আব্দুর রহিমের ছেলে প্রধান মাঝি আবু তালেব (৪০) এবং সি ৯ ব্লকের ইমাম হোসেনের ছেলে সাব ব্লক মাঝি ছৈয়দ হোসেন (৩৫)।

ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) মোঃ কামরান হোসেন জানান, ১টি দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গা গ্রুপের সদস্যররা দল বেঁধে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হেড মাঝি আবু তালেব ও সাব ব্লক মাঝি ছৈয়দ হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পে ব্লক রেইড এবং অভিযান চলছে। এখনো সক্রিয় ১৫টি অপরাধী দল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কথিত আরসা, আল ইয়াকিনসহ কমপক্ষে ১৫টি অপরাধী দল সক্রিয়। এসব অপরাধী দলের নেতৃত্বে চলে মাদক কারবার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে সশস্ত্র মহড়া, অপহরণ, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ। রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতনের ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে থাকছে এসব রোহিঙ্গারা।

দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গা গ্রুপের সদস্যরা দল বেঁধে টার্গেট কিলিংয়ে নেমেছে। গত ১০ আগস্ট দুই মমাঝিকে এরা গুলিল করে হত্যা করেছে। এ নিয়ে গত পাঁচ বছরে এদের হাতে খুন হয়েছে অন্তত ১৫ জন মাঝি। গুমের শিকার হয়েছেন অন্তত আরো ১৫ জন। এর মধ্যে গত দুই মাসেই খুন হয়েছে আটজন রোহিঙ্গা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের তথ্যমতে, দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গারা খুনাখুনি, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, অগ্নিসংযোগসহ ১৪ ধরনের অপরাধে জড়িত। এসব অপরাধের কারণে ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত থানায় ১ হাজার ৯০৮টি মামলা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে খুনের ঘটনা ঘটেছে ৯৯টি।

গত বছরে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুলল্লাহ ও আজিমুদ্দিন হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত তথাকথিত আরসা গ্রুপের সদস্যসহ ৩২ জন রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১২ জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এর পর থেকেই ক্যাম্পে রাতের বেলা রোহিঙ্গারাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে স্বেচ্ছায় পাহারা দিতে শুরু করে। এ কারণে দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গারা আবারো মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে।

শুধু রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ বা রোহিঙ্গা মাঝি আবু তালেব ও ছৈয়দ হোসেন হত্যাকাণ্ডই নয়, এর আগেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন সময় সেখান থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছুদ্দোজা নয়ন জানিয়েছেন, ক্যাম্পে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মাঝি রয়েছেন। এই মাঝিরাই সাধারণ রোহিঙ্গাদের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় খাবারসহ মানবিক সেবা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এসব রোহিঙ্গা আগমনের প্রায় পাঁচ বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।

কিউএনবি/বিপুল/১১.০৮.২০২২/ সন্ধ্যা ৬.৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit