আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের জার্মানির অর্থনৈতিক দুরবস্থা হিটলারের নাৎসি পার্টিকে ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দিয়েছিল। ভার্সাই চুক্তির বিরূপ শর্ত ডেকে এনেছিল মুদ্রাস্ফীতিসহ নানা অর্থনৈতিক বিপর্যয়। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতি সত্যিকার অর্থেই যে ইতিহাসের পথ বদলে দিতে পারে, তা ইতিমধ্যে প্রমাণিত।
মুদ্রাস্ফীতি শুধু আপনার অর্থের ক্রয়ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে না। বিশেষজ্ঞরা মুদ্রাস্ফীতিকে বলেন, ‘সব পরিবর্তনের সূচনাকারী। ‘ প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মানির অবস্থা আমরা দেখেছি। ইউরোপ আবার যুদ্ধে লিপ্ত। আবার সামনে এসেছে মুদ্রাস্ফীতি। দ্রব্যমূল্যের অভিঘাতে সারা বিশ্বে আবার মাথাচাড়া দিয়েছে গণবিক্ষোভ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুদ্রাস্ফীতি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ছাড়াও বৃহত্তর পরিসরে চারটি বিষয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। এগুলো হচ্ছে রাজনীতি, নীতি, অগ্রাধিকার ও দারিদ্র্য।
রাজনীতি
মুদ্রাস্ফীতির একটা ধাক্কা হলো ক্ষুব্ধ জনগণ ভোটের বুথে শোধ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে জিমি কার্টার ক্ষমতায় থাকার সময় তেল ও খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছিল। বেড়েছিল বেকারত্ব। মুদ্রাস্ফীতিই তার পতন ঘটিয়েছিল। তিনি পুনর্নির্বাচনের লড়াইয়ে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে
হেরে যান।
আজ যুক্তরাষ্ট্রে খাবার ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১০ ও ৮ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সামনে মধ্যবর্তী নির্বাচন। এতে তিনি বিপদে পড়তে পারেন। যা অনেকটাই বদলে দেবে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির গতিপথ।
ভারতে ২০১৪ সালে মনমোহন সিং সরকারের পতনের পেছনে মুদ্রাস্ফীতিকে অন্যতম প্রধান কারণ মনে করা হয়।
বর্তমানে বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি ৭ শতাংশের বেশি। খাদ্যের দাম বেড়েছে অন্তত ৭ শতাংশ। অন্তত ৫০টি দেশে এ বছর ও আগামী বছরে নির্বাচন। অনেক দেশে সরকারের পতন ঘটতে পারে। এর অন্যতম বড় কারণ দ্রব্যমূল্য।
নীতি
মুদ্রাস্ফীতি সরকারকে বাধ্য করে নীতি বদলাতে। বিশ্বের কিছু দেশ কিছু কিছু খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করেছে। এর লক্ষ্য নিজ দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঠেকানো। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে সরকারের নীতি হয় জাতীয়তাবাদী, সংরক্ষণমুখী। অভ্যন্তরীণ বাজার বেশি অগ্রাধিকার প্রায়। মুদ্রাস্ফীতি ইউরোজোনে রেকর্ড উঁচু পর্যায়ে উঠেছে। ইউরোপের ৪০ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। রাশিয়ার বিরদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয়দের ভোগাচ্ছে। ইতালিতে পাস্তার দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এক জরিপে দেখা যায়, এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপীয় চায় ইউক্রেনের পক্ষে ভূখণ্ডগত ছাড় দিয়ে হলেও এ যুদ্ধ শেষ হোক। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ জরিপের প্রভাব ইউরোপীয় নীতিতে পড়বে বলেই মনে করা হয়।
অগ্রাধিকার
মুদ্রাস্ফীতি বৈশ্বিক অগ্রাধিকারেও রদবদল ঘটাতে বাধ্য করেছে। অনেক কষ্টের বিনিময়ে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতি তা পাল্টে দিয়েছে। ইউরোপের অনেক দেশই আবার কয়লাচালিত বিদুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকছে। যুক্তরাষ্ট্রও কিছু অঙ্গীকার থেকে সরে যাচ্ছে। জ্বালানির বাড়তি দামের কারণে দেশগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার মতো সস্তা মাধ্যমের দিকেই ঝুঁকছে।
দারিদ্র্য
এখন বিশ্বের ১১০ কোটি মানুষের খাদ্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সংগতি নেই। তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে। এতে বাড়বে অনেক সামাজিক সমস্যা। যেমন অপুষ্টি, গর্ভপাত, শিশুমৃত্যু,অপরাধ ও বেকারত্ব। মুদ্রাস্ফীতি একটা ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ ঘটাতে পারে, যা থামাতে অনেক বছর লাগতে পারে।
সূত্র : উইঅন নিউজ
কিউএনবি/আয়শা/০৪ জুলাই ২০২২, খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৩৩