ডেস্কনিউজঃ এখনো পানির নিচে বিস্তীর্ণ এলাকা। ডুবে আছে সড়ক, ঘরবাড়ি। পানি ঘরে ওঠায় অনেকে উঠেছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। আশ্রয়কেন্দ্রেও যাদের ঠাঁই হয়নি তারা আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন উঁচু সড়কে। সড়কের পাশেই ত্রিপল, পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে তাঁবু তৈরি করা সেখানে বসবাস করছেন। কোথাও কোথাও আবার নিজের ছাউনির ভেতরে গবাদিপশুরও বসবাস। শুধু সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেই নয়, মূল সড়ক থেকে বিভিন্ন উপজেলামুখী সড়কেও এ চিত্র।
এখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সংকট। পানি না কমায় অস্থায়ী আশ্রয় থেকে ঘরে ফিরতে পারছেন না এসব মানুষ। এছাড়া যেসব এলাকায় পানি কিছুটা নেমেছে সেখানেও শুরু হয়েছে নতুন দুর্ভোগ। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। মহাসড়কে থাকায় তাদের অনেকে ত্রাণ দিচ্ছেন।
স্বপ্নের ফলানো ধান শুকাতে দিয়ে সড়কের পাশেই বসা ছিলেন আমির আলী। তিনি বললেন, ‘বানের পানিতে তার ছয় মাসের খাবার পচে গলে নষ্ট হয়েছে। তবুও আশা ছাড়ছেন না তিনি। শুকাচ্ছেন মনের তাগিদে। এগুলোই যে তার একমাত্র সম্বল। তার সাফ কথা, দুর্গন্ধ ছড়াক তাতে কিছু যায় আসে না। খেয়ে বেঁচে থাকা তো যাবে।’
একই সড়কে থাকছেন সমর আলী। পরিবার নিয়ে তিনি সড়কের পাশে আবাস গড়েছেন সাত দিন ধরে। তার ঘরে এখনো হাঁটু পানি। তাই যাচ্ছেন না ঘরে। রোববার তিনি ঘরটি দেখেও এসেছেন। কিন্তু ঘর আর ঘরের জায়গায় নেই। ভিটেমাটি প্রায় ধ্বংসস্তুপ। পানি নেমে গেলে কিভাবে ঘর উঠাবেন সে চিন্তায় ঘুম নেই তার। এমন শত শত বানভাসির বাস এখন সড়কে ছাউনি টানিয়ে। কোনো ত্রাণের গাড়ি আসলে তাদের খাবার জুটে। নয়তো না খেয়েই ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে হয় অনিশ্চিত অন্ধকার দেখে দেখে।
১০ দিন ধরে পানিবন্দী সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলাবাসী। যা ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া মানুষের বাইরে আজিজপুর বাজারসহ বাজারের আশপাশে তাঁবু বানিয়ে আরো প্রায় দু’-আড়াইশ’ পরিবার গবাদিপশু নিয়ে একসাথে বসবাস করছেন।
সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলার চিত্রও একই। ১৩ উপজেলার মাঝে সবগুলো উপজেলার বেশিরভাগ ডুবে আছে এখনো। বিশেষ করে বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর, ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের অনেক গ্রাম এখনো পানিতে টইটুম্বুর। কিছু এলাকায় পানি অল্প কমলেও বেশিরভাগ এলাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব এলাকায় বেসরকারি পর্যায়ে তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয়।
সরকারি হিসাবে, সিলেট জেলায় বন্যায় চার লাখ ১৬ হাজার ৮৫১টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৫১ জন প্লাবিত হয়েছেন। এর বিপরীতে সরকার বরাদ্দ দিয়েছে এক হাজার ৪১২ টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দু’ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ বানভাসিরা মাথাপিছু ৬৪৫ গ্রাম চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। অন্যদিকে একেকজন বানভাসির বিপরীতে প্রায় ১০ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
কিউএনবি/বিপুল/২৮.০৬.২০২২/ রাত ১১.৩০