এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় বোরোর ধানের ক্ষতি পুষাতে আউশ ধান চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে আউশ ধানের আবাদে বেশ ঝুঁকে পড়েয়ে এ উপজেলার কৃষকরা। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চাইতে তিনশ হেক্টর জমিতে বেশী আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার তিনশ মেট্রিকটন। ফলে আউশ ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় উচ্চ ফলনসীল জাতের ব্রি হাইব্রিড-৭, বিনা-১৯, ব্রি-৪৮ ও স্থানীয় জাতের আউশ ধানের আবাদ হয়। উচ্চ ফলনসীল জাত হওয়ায় কৃষকরা বেশি বেশি এ ধানের আবাদ করছেন। আউশ ধানে রাসায়নিক সারের পরিমানে কম লাগে ও সেচ ছাড়াই আউশ ধানের আবাদ হয়। ফলে এ ধান চাষে এ অঞ্চলের কৃষকেরা দিনদিন উৎসাহিত হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার চাইতে তিনশ হেক্টর জমিতে বেশী আবাদ হয়েছে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ হাজার তিনশ মেট্রিকটন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ গত মৌসুমের চাইতে তিনশ হেক্টর বেড়েছে। আউশ ধানের আবাদ ভালো হওয়ায় বেড়েছে এ ধানের চাষ। এছাড়া চলতি মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১ হাজার ৭শ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে উচ্চ ফলনসীল জাতের ব্রি হাইব্রিড-৭, বিনা-১৯, ব্রি-৪৮ জাতের ধানের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। বিনামূল্যে বীজ প্রদানের জন্যই কৃষকদের মাঝে ব্যাপকহারে বেড়েছে আউশ চাষের আগ্রহ। আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষি অফিস নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আউশ চাষি জহির উদ্দীন, হযরত আলী, নারয়নপুর ইউনিয়নের পেটভরা গ্রামের আনছার আলী, ইউনুস আলী, পাতিবিলা ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের দেবনাথ ঘোষ, অকিল ঘোষ, পুড়াহুদা গ্রামের আব্দুল লতিফ, আব্দুল মজিদ ও আমিনুর রহমান জানান, বোরো ধান ঘরে তুলেই আউশ চাষের জন্য জমি প্রস্তুুত করেছেন তারা। ইতি মধ্যে প্রস্তুুতকৃত জমিতে উন্নত জাতের আউশ ধানের চারা রোপন করেছেন। তবে বোরো ধানের বাজারদর তুলনামুলক অনেকটা কম থাকায় হতাশ হওয়ায় পাশাপাশি আউশ ধান চাষ করতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। তারপরও গত আউশ মৌসুমে বা¤পার ফলন হওয়ায় চলতি মৌসুমে সবাই আউশ চাষে আগ্রহী হয়ে চাষ করছেন।
পাতিবিলা গ্রামের আউস চাষি বিল্লাল হোসেন, দেবীপুর গ্রামের আরশাদ আলী, মাঠচাকলা গ্রামের শাহাবুদ্দীন, শমসের আলী জানান, এ মৌসুমে আউশ ক্ষেতে সেচসহ সার কিটনাশক কম লাগাই আশপাশের সব জমিতে উচ্চ ফলনসীল আউশ ধানের আবাদ করা হয়েছে। তারা জানান, আড়াই একর জমিতে আউশ ধান চাষের জন্য বীজতলা তৈরী করা হয়ে ছিলো। কিছু জমিতে আউশ ধান রোপন করা হয়ে গেছে। আর বাকি জমিতে চারা রোপন করা চলছে। তবে একটু ভারি বৃষ্টি না হলে আউশ ধানের ক্ষেত প্রস্তুুত করতে আবার সেচ নিতে হবে ফলে খরচ বেড়ে যাবে।নারায়পুর ইউনিয়নের চাঁদপাড়া গ্রামের আউশ চাষি আবু তালেব, কাটু খা, টিপুসুুলতান ও আরব আলী জানান, অতিবৃষ্টিতে তাদের বোরো ধানের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। সেই ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে তারা চলতি আউশ মৌসুমে বেশি-বেশি জমিতে উচ্চ ফলনসীল জাতের আউশ ধানের চাষ করেছেন। এ সব কৃষকেরা জানান, উচ্চ ফলনসীল জাতের ব্রি হাইব্রিড-৭, বিনা-১৯, ব্রি-৪৮ ও স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করেছেন। এছাড়া হাকিমপুর, জগদিশপুর, পাতিবিলা, নারায়নপুর, ধুলিয়ানী ও পাশাপোল ইউনিয়নের চাষিরাও এ জাতের ধান চাষ করেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, প্রাকৃতিক বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায়। তাই বাড়তি সেচের কোন প্রয়োজন হয় না। চলতি মৌসুমে আমরা ১ হাজার ৭শ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে উচ্চ ফলনসীল জাতের ব্রি হাইব্রিড-৭, বিনা-১৯, ব্রি-৪৮ ধানের বীজ বিতরণ করেছি। এ জন্য উপজেলায় দিনদিন আউশ ধান চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার পাশাপাশি নানা পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
কিউএনবি/অনিমা/২৭.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৯:৫৫