ডেস্ক নিউজ : কয়েকদিনের টানা ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছে জামালপুরের খোলাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার একমাত্র সড়ক। এতে চরম বিপাকে পড়েছে বাহাদুরাবাদ নৌ-থানাসহ ১৫-২০ হাজার মানুষ। ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৬টি গ্রাম। সড়ক নিয়ে পাউবো এবং এলজিইডি একে-অপরকে দোষারোপ করছে।
উপজেলায় যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানী, জিঞ্জিরাম নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার সব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাপ্রবণ এই উপজেলায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কায় মানুষের মাঝে ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।খবর নিয়ে জানা গেছে, সড়কটি ২০২০ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে সড়কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে কিছু বালুর বস্তা ফেলে চলাচল উপযোগী করা হয়। কয়েকদিন আগে নতুন করে বালু ফেলে সড়ক উঁচু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছিল। তবে যে বালু ফেলা হয়েছিল তা এখন আর কোনো কাজে আসবে না। দীর্ঘ দুই বছর পার হলেও পাউবো এবং এলজিইডি- এই দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলিতে কাজ তেমন কিছুই হয়নি। এক দপ্তর আরেক দপ্তরকে বলছে এই সড়ক তাদের না।
দেওয়ানগঞ্জের উপজেলা প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ জানান, এই সড়ক দু’বছর আগেই বন্যায় ভেঙে গিয়েছিল। এখন মাটি কেটে সড়ক উঁচু করাসহ দু’পাশে জিও ব্যাগ দিয়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না তুললে তার আগেই এলজিইডি বিভাগ সেই সড়কের কাজ কীভাবে করবে? অন্যদিকে, গত তিন বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়ক ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বেহাল হয়ে পড়ে থাকলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। তারা বলছে, সড়কের এ অংশের কাজ তাদের না। সড়ক দিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা পুলিশসহ হাজার হাজার মানুষ। ইউনিয়নে দীর্ঘ দিন থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নদীভাঙনের কবলে পরে নিঃস্ব হয়েছে খোলাবাড়ীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, হাট বাজারসহ ইউনিয়নের ৪ ওয়ার্ডের মানুষ।
ইউপি চেয়ারম্যান মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ জানান, বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা, খোলাবাড়ী, মোন্নে বাজার, ফারাজি পাড়া, কাজলা পাড়া, মন্ডল বাজার, গুচ্ছগ্রাম ও ৬টি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সড়ক এটি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি গত ৩ বছর থেকে ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের পথে থাকলেও নদীভাঙন রোধে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো।এলাকাবাসী জানায়, ২০২০ সালে সড়কটিতে প্রথম ভাঙন শুরু হয়। চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের প্রথমদিকে নদীভাঙন শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে কিছু বালির বস্তা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেনের ব্যক্তিগত অর্থায়নে বাঁশ দিয়ে এ ভাঙন প্রতিরোধে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গৃহিত হয়নি। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এই অঞ্চলের মানুষ।
বাহাদুরাবাদ নৌ-থানা ওসি মিজানুর রহমান জানান, এ সড়ক বিলীন হবার পর থেকে আমাদের এই পথে যাতায়াত করা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চরম অবহেলার কারণে সড়কটি রক্ষার কোনো ব্যবস্থা কেউ গ্রহণ করেনি। সেজন্য এই জনপদের মানুষের চলাচলের একমাত্র সড়কটি এখন বিচ্ছিন্ন থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকা দিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। এ জন্য তারা এই উপজেলা এবং ইউনিয়নের রাজনৈতিক দলাদলিকে দায়ী করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ বলেন, আমি খবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি, সেই সড়ক পানি উন্নয়ন বোর্ডের না। তারপরও আমাদের যদি কিছু করার থাকে আমি সরেজমিনে ভিজিট করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
কিউএনবি/আয়শা/১৮.০৬.২০২২ খ্রিস্টাব্দ/দুপুর ২:৪৯