এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় বাজারে সয়াবিন তেলসংকট দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। খোলা কিংবা বোতলজাত, কোনোটাই মিলছে না। তেল কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় এমন কৃত্রিম সংকট সৃষ্ট হয়েছে বলে ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন। বছরের অন্য সময় মোড়কে লেখা দামে যখন ইচ্ছে তেল কেনা গেলেও, কয়েক দিন ধরে বাড়তি দামেও টাকা মিলছে না। এমনকি খোলা তেলও মিলছে না।এমনকি গত বৃহ¯পতিবার উপজেলা প্রশাসন দরিদ্রদের মাঝে বিতরণের জন্য সয়াবিন তেল কিনতে গেলেও তারা খালি হাতে ফিরেছে।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এবং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোস্তানিছুর রহমান জানান, দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রীর সঙ্গে সয়াবিন তেল দেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও গত দুই দিন ধরে উপজেলার কোথাও তেল কিনতে পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের চারটি প্রধান কোম্পানি সয়াবিন তেল বাজারে সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গোটা দেশে তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সুযোগ পেয়ে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছ থেকে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলে অতিরিক্ত প্রায় আড়াই শ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্যাকেজ প্রথা। ডিলাদের কাছ থেকে তেল কিনতে হলেই ওই কোম্পানির নানা ধরনের পণ্য বাধ্যতামূলক কেনা লাগছে। তেলের সঙ্গে নিতে হচ্ছে হালিম মিক্সড, সরিষার তেলসহ নানা পণ্য।
পৌর শহরের বড় বাজারসহ বিভিন্ন মুদি দোকান ও উপজেলার ছোট বড় মুদি দোকানসহ কোনো দোকানেই সয়াবিন তেল নেই। দোকানগুলোতে অন্য সব মালামাল থাকলেও তেলের ব্যারেল খালি। একই সঙ্গে বোতলজাত তেলের তাকও খালি। খোলা তেলের দাম বাড়ানোর কারণে দোকানি ও পরিবেশকেরা চালাকি করে বোতল খুলে খোলা তেল বলে বিক্রি করায় বাজারে ব্যারেলজাত খোলা সয়াবিন তেলের সঙ্গে বোতলজাত তেলও হাওয়া হয়ে গেছে। কেন, কী কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা কেউ বলতে পারছেন না। মাঝারি ও ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চলতি সপ্তাহ থেকে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট শুরু হয়েছে। যশোর জেলায় চারটি বড় কোম্পানির ডিলারের কাছে বারবার ফোন করেও ব্যবসায়ীরা ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ প্রথম দিকে ডিলারের প্রতিনিধিরা তাদের ফোন রিসিভ করে তেল পাঠানো হচ্ছে বললেও এখন তারা ফোনই রিসিভ করছেন না। কী কারণে কো¤পানিগুলো তেল সরবরাহ করছেন না সে বিষয়েও ডিলাররা কিছুই বলতে পারছেন না।
ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলার কয়েকটি বড় কো¤পানির গুদামে বিপুল পরিমাণ তেল মজুত রয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে তারা বাজারে তেল সরবরাহ করছেন না। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের ডিলাররা খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে তেল সংক্রান্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। ঈদকে সামনে রেখে দেশে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতেই কোম্পানিগুলো সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা। উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিনিয়তই বাজারে ভোজ্যতেল কিনতে গিয়ে দোকানিদের সঙ্গেক্রেতাদের গোলযোগ কথা-কাটাকাটি হচ্ছে। কিছু ব্যবসায়ী পাঁচ লিটারের তেলের বোতল ৭৬০ টাকার পরিবর্তে ৯৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।
পৌর শহরের একজন ব্যবসায়ী বলেন, গত চার দিন ধরে সয়াবিন তেল সরবরাহকারী কো¤পানির প্রতিনিধি ও পরিবেশকদের মোবাইল ফোনে কল দিয়েছি, কিন্তু কেউ ফোন ধরছেন না। আগে ডিলাররাই এসে তেল লাগবে কি না, তা জানতে চাইতেন। এখন ফোন দিয়েও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই আমার দোকানে তেল কিনতে আসা ক্রেতারা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। এ সময় তাদের নানা কটু কথাও শুনতে হচ্ছে। একই অভিযোগ করেন পুড়াপাড়া বাজারের একজন মুদি দোকানি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, চৌগাছায় যিনি ডিলার আছেন তিনি তো দীর্ঘদিন ধরে আমাদের তেল দিচ্ছেন না। অথচ খুচরা ক্রেতারা গেলে অতিরিক্ত মূল্য নিয়ে তেল বিক্রি করছেন।
যশোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, যশোরের বাজারে সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না, বিষয়টি আমরা শুনেছি। অধিদপ্তরের অভিযানের তথ্য লিপিবদ্ধ করার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে। এ জন্য মাঠে নামতে কিছু বিলম্ব হয়েছে। আজ থেকে আবারও মাঠে নামবো। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, সয়াবিন তেলের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যশোরের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি ও পরিবেশকদের বৈঠকের কথা রয়েছে। এরপর তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/৩০শে এপ্রিল, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৭:০৪