এম রায়হান চৌধুরী,চকরিয়া প্রতিনিধি : হাসপাতালের বেডেই ক্যান্সার আক্রান্ত মুমূর্ষ প্রেমিকাকে বিয়ে করে প্রেমের সম্পর্ককে বাস্তবে রূপ দিলো সত্যিকারের প্রেমিক ও মানবতাবাদী যুবক মাহমুদুল হাসান। দেখতে স্বাস্থ্যবান ও টগবগে যুবকটি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের জৈষ্ট ছেলে। নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ (অনার্স) এমবি এ পাস করা ছেলেটির পরিবারটি অনেকটা উচ্চবিত্তই। সংসারে সোনার চামচ নিয়ে জন্ম নেওয়া ছেলে মাহমুদুল হাসান। নর্থ সাউথ থেকে এমবিএ আর চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়াতে জন্ম নেয়া ফাহমিদা কামাল ইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেছে। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ রাতে আরেক ভালোবাসার অমর উপাখ্যান রচনা করলো হাসান ও ফাহমিদা। তাদের সেই বিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে ঝড় উঠে।
শিক্ষাজীবনে দুজনের পরিচয়। লাবণ্যময়ী স্মার্ট সুন্দরী তরুণী ফাহমিদাকে ভালো লাগা শুরু হয হাসানের। এর পর ক্রমশ দুজন প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ভালোবাসার অমর বন্ধনে হয়ে উঠে দু’জন দু’জনার। হাতে হাত ধরে স্বপ্নেবিভোর রঙিন ভুবনে উড়তে থাকে অচেনা হাজারো পথে। সুখ আনন্দ সবই যেন ভরপুর। বিয়ে সংসার কত না মধুর সুখ চোখের কোনায়। প্রেম মানেনা হাজারও বাধা, মানেনা ঝড়-বৃষ্টি, তুফান। প্রেমের চোখে দেখেনা দুঃখ, প্রেম দেয় শুধু সুখ আর সুখ। তেমনি প্রেমের পরিণতি হবে পরিণয়, স্বপ্ন ছিল দু’জনের এটাই। কিন্তু বিধতা! তার বদলে তাদের সামনে হাজির করলো কঠিন পরীক্ষা। ফাহমিদার দেহে ধরা পড়লো ক্যান্সার। চিকিৎসা নিতে ভর্তি হলো হাসপাতালে। ফাহমিদা এবং হাসানের স্বজনরা নিশ্চয় মনে আসলো ফাহমিদা হয়তো আর বাচবেনা। ফাহমিদাকে হানোর ভয়ে ব্যাকূল হাসান। মরণঘাতী ক্যান্সার ধরা পরার পর সাথে সাথে তাকে ঢাকা এভারকেয়ার, পরবর্তীতে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হসপিটালে নেয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর ডাক্তাররা সাফ জানিয়ে দেয়, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়, ইঙ্গিত দেয়, বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই।
ভুকভরা কষ্ট নিয়ে পরিবারের লোকজন ২০ বছর বয়সী ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করায়। সেখানে চলে চিকিৎসা। কিন্তু ক্রমাগত ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রেয়সী ফাহমিদার অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা প্রেমিক মাহমুদুল হাসানের সহ্য হয় না। ফাহমিদার কষ্ট সে ভাগ করে নিতে বিভোর। চোখের জল মুছে দিতে চায়, কপালে হাত রেখে ফাহমিদাকে বলে, আমি আগের মতো এখনো তোমার পাশে আছি। হাতে হাত রেখে বলতে চায়, আমি তোমাকে খুব বেশি ভালোবাসি। তুমিই আমার জীবন তুমিই আমার সব। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতে চায়। বুকে জড়িয়ে নিয়ে কষ্টগুলো নিজের করে নিতে চায়। কিন্তু তা কী করে সম্ভব! হাসান ফাহমিদার প্রেমিক হলেও সমাজের চোখে পরপুরুষ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ফাহমিদা নিঃশেষ হতে চলেছে।
এবার হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ফাহমিদাকে যদি মরতে হয়, তাহলে তার বুকে মাথা রেখেই মরতে হবে। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিলো সে, ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চাই। মৃত্যু পথযাত্রী ফাহমিদাকে হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে বুঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অটল।অবশেষে উভয় পরিবার সম্মত হয়। বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে উঠে নির্মল স্বর্গীয় হাসি। আনন্দ অশ্রুতে দু’জনের পৃথিবী দোল খেতে থাকে। বাতাসে নাচতে থাকে রঙিন প্রজাপতি।
অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আক্দ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালা বদল হয়। খেজুর মিষ্টি খাওয়ানো হয়।ক্ষণিকের জন্য মরণঘাতী ক্যান্সারকে জয় করে ফাহমিদা হয়ে উঠে অন্য এক পৃথিবীর বাসিন্দা। সমস্ত স্বর্গীয় সুখ তাকে ঘিরে রাখে। হারিয়ে যাওয়া সোনালি দিনগুলো আবার যেন ফিরে পায়। আনন্দে আত্মহারা ফাহমিদার আরো বাঁচতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে হাসানের বুকে মাথা রেখে হাজার বছর বাঁচতে। এ পৃথিবীতে আর একটি প্রেমের মহাবিজয়!
কিউএনবি/অনিমা/১৫ই মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ১১:৩৬