এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় এক মাছ চাষীর মাছের ভেড়িতে দিনের বেলায় গ্যাস ট্যাবলেট দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। এতে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষাধিক টাকার মাছ মরে গেছে। ২ মার্চ বুধবার সকালে উপজেলার হাজীপুর গ্রামের মর্জাদ বাওড়ের হ্যাচারী ভেড়িতে এই ঘটনা ঘটে। ভেড়ির মালিক মৎস্যচাষী ভুট্টো মিয়া বলেন, তিন বছর ধরে বাওড় ব্যবস্থাপকের সাথে বছরে চার লাখ টাকা চুক্তিতে বাওড়ের পড়ে থাকা হ্যাচারীর অংশ সংস্কার করে আমি মাছ চাষ করে আসছি। আগের ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেনের কাছে দুই বছরের চার লাখ করে আট লাখ টাকা এবং বর্তমান ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমানের কাছে এক বছরের চার লাখ টাকা দিয়ে বাওড়ের একটি ভেড়িতে মাছ চাষ করি। এখানে মাছচাষের জন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে সাত/ আট লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। হঠাৎ করে বুধবার সকালে হাজীপুর গ্রামের হেলাল ও জসিম, নলভাঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য হাসানের নেতৃত্বে নলভাঙ্গা গ্রামের জাহিদ ও বিপ্লব আমার মাছের ভেড়িতে নেমে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে ভেড়িরসব মাছ মেরে ফেলে। এ সময় হাজীপুর গ্রামের রুবেলসহ অন্যরা ভেড়ির পাড়ে দাড়িয়ে ছিলো।
তিনি বলেন, উক্ত ব্যাক্তিরা গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে আমার কাছ থেকে নগদ টাকা চাঁদা ও মাছ নিয়ে আসছে। গত ২০/২৫ দিন আগেও চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবেদুর রহমানের উপস্থিতিতে রুবেল আমার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তা ছাড়া বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবের নেতৃত্বে সম্প্রতি হ্যাচারী অংশের প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক মাটি অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন। আমার মাছ চাষে ক্ষতি হওয়ায় মাটি কাটাই আমি প্রতিবাদ করি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে বাওড় ব্যবস্থাপক মাহবুবের ইঙ্গিতে হেলাল, জসিম, রুবেল, হাসান মেম্বর, জাহিদ ও বিপ্লবরা একজোট হয়ে আমাকে ভেড়ি অংশ ছেড়ে দিতে বলে। আমি ভেড়ি ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে পানি সেচে কমাতে শুরু করলে আমার কাছে অতিরিক্ত চাঁদা দাবি করে বলে, তুই যখন আমাদের মাটি কাটায় বাঁধা দিয়েছিস, তখন চাঁদা দিবি।
আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে দিনে দুপুরে তারা আমার ভেড়িতে কীটনাশক দিয়ে এভাবে সব মাছ মেরে ফেলেছে। এখানে আমার আরো একটি মাছের ভেড়ি রয়েছে। এসব মাছের চাষ করতে গিয়ে আমি পানি তুলতে মোটর স্থাপন করেছি। তারা হুমকি দিয়ে বলেছে আমাদের নামে কোথাও কোন অভিযোগ করলে তোকে এখানে মাছ চাষই করতে দেবো না। তোর মোটরসহ কোন কিছুই বাড়ি নিয়ে যেতে দেবো না। ভেড়ির নাইটগার্ড, শাহাদৎ হোসেন ও ছায়েদ আলী বলেন, আমরা সকালের খাবার খেতে বাড়িতে গেলে তারা ভেড়িতে কীটনাশক দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে।
ভেড়িপাড়ের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, সকালে আমাদের সামনেই হেলাল, রুবেল, জসিম, বিপ্লব ও জাহিদরা ভেড়িতে গ্যাস ট্যাবলেট দেয়। পানিতে নেমে বিপ্লব ও জাহিদ গ্যাস ট্যাবলেট দেয় এবং অন্যরা ভেড়ির উপরে দাড়িয়ে ছিলো। ভেড়িতে গণহারে মাছ ধরতে থাকা চৌগাছার হাজীপুর, যাত্রাপুর, কালীগঞ্জের নলভাঙা ও ধোপাদী গ্রামের বাসিন্দারাও বলেন, সকালে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ মেরে ফেলেছে। মরে যাওয়া মাছ ভেড়ি মালিক ভুট্টোর সামনেই আমরা ধরে নিচ্ছি।
ভেড়ির মালিক ভুট্টো মিয়া বলেন, বাওড়ের হ্যাচারী অংশ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে ছিলো। সেখানে পানি থাকতো না। তখন বাওড়ের তৎকালীন ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেন আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে মাছ চাষ করতে বলেন। ব্যবস্থাপকের সাথে প্রতি বছরে চার লাখ টাকার মৌখিক চুক্তিতে আমি সেখানে মাছ চাষ করতে সম্মত হই। আমি বিষদিয়ে মাছ মারার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবো। তবে এ বিষয়ে বর্তমান মর্জাদ বাওড়ের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান এবং সাবেক ব্যবস্থাপক আশরাফ হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তাদের নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কিউএনবি/আয়শা/২রা মার্চ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সন্ধ্যা ৬:৫৯