বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৭:৪৭ পূর্বাহ্ন

ওমিক্রনে বাড়ছে উৎকণ্ঠা, স্বাস্থ্যবিধি উধাও আসছে বিধিনিষেধ

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৭১ Time View

 

ডেস্ক নিউজ :  করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের মুখে দেশ। ভাইরাসটির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের তা-ব শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশেও হু হু করে বাড়ছে রোগী। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশে মাত্র ১০ জন ওমিক্রন রোগী শনাক্ত হলেও হঠাৎ করে কভিড আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি ও আশপাশের দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টের দাপট শুরু হওয়ায় নতুন করে উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। সংক্রমণ মোকাবিলায় আগামী সাত দিনের মধ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ জারির চিন্তা করছে সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ফের লকডাউনের চিন্তা আছে বলেও গতকাল জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ৬৫ দিন পর গত ২৪ ডিসেম্বর শনাক্তের হার আবারও ২ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৯১ শতাংশে, যা ৯৭ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৮৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৭৫ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সবশেষ এক দিনে এর চেয়ে বেশি ৭৯৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৩ মাস আগে গত ৪ অক্টোবর। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন করোনা রোগী, যা নতুন বছরে এক দিনে সর্বাধিক মৃত্যু। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার চলতি মাসের চার দিনই ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে।

আসছে বিধিনিষেধ : গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা এক সপ্তাহ ধরে লক্ষ্য করছি, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। করোনাভাইরাস ও ওমিক্রনকে আমাদের রুখতে হবে। এ নিয়ে গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে মিটিং করেছি। বৈঠকে কিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ এসেছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত বিধিনিষেধসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। তিনি বলেন, যানবাহনে কেউ মাস্ক ছাড়া চলাচল করলে জরিমানা করা হবে। যানবাহনে যাত্রী সংখ্যা অর্ধেক করার প্রস্তাব এসেছে। রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে মাস্ক ছাড়া গেলে দোকানদারের জরিমানা হবে, যে যাবে তারও জরিমানা হতে পারে। হোটেল-রেস্টুরেন্টে খেতে হলে টিকা কার্ড দেখাতে হবে। রাত ১০টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা যাবে। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চলবে। সংক্রমণ বেশি বাড়লে স্কুল বন্ধের বিষয়ে চিন্তা করা হবে। অবস্থা আওতার বাইরে চলে গেলে লকডাউনের চিন্তাও মাথায় আছে। আমরা দেশকে নিরাপদে রাখতে চাই। শুধু সরকার কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা পারবে না। সবাইকে সচেতন হতে হবে। ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মিটিংয়ে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর করার কথা হয়েছিল। কিন্তু ১৫ দিন অনেক বেশি। এর মধ্যে রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই সাত দিনের মধ্যে বিধিনিষেধ প্রয়োগের কথা বলেছি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবও একমত হয়েছেন।

দেশে ওমিক্রন সংক্রমিত কত : বাংলাদেশে গত ৯ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়ে ফেরত দুই নারী ক্রিকেটারের দেহে প্রথম ওমিক্রন ধরন শনাক্তের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ১০ জনের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, বিদেশ ফেরতদের পাশাপাশি তাদের সংস্পর্শে এসে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের নমুনারও জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে। তবে গত ৩০ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ২৪০ জনকে খুঁজেই পাচ্ছে না সরকার, তাদের মোবাইলফোনও বন্ধ। ফলে তাদের কেউ ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে অন্যদের মধ্যে ছড়ালেও তারা জিনোম সিকোয়েন্সের আওতায় আসেনি।
জানুয়ারির শেষে ওমিক্রন তান্ডবের আশঙ্কা : জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, এখনো বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের আধিপত্য চলছে। তবে ওমিক্রন সংক্রমণ শুরু হয়েছে। কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে চলতি মাসের শেষে বা ফেব্রুয়ারির শুরুতেই দেশে ওমিক্রনের তান্ডব শুরু হতে পারে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওমিক্রনের জন্য নয়, মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়া, মাস্ক না পরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই দেশে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে দেশে সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। আমাদের এখানে এখনো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব বেশি। যেসব রোগী কভিড পজিটিভ হচ্ছে তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। ওমিক্রনে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় কম। তবে ওমিক্রন রোগী সামনে বাড়বে। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে ও ভ্যাকসিন নিতে হবে। সংস্থাটির উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, রোগতাত্ত্বিকভাবে ১০ জন ওমিক্রন রোগী শনাক্তের অর্থ আরও রোগী আছে। সংক্রমণ থেমে নেই। ঢাকাতেই মূলত ওমিক্রন সংক্রমণ বাড়ছে। তবে এখনো গুচ্ছ সংক্রমণ (পরিবারের সদস্য বা বিশেষ শ্রেণির মধ্যে) চলছে, সামাজিক সংক্রমণ শুরু হলে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এই মাসের শেষে সামাজিক সংক্রমণ শুরু হতে পারে।

বিশ্ব পরিস্থিতি : বিশ্বের শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন। মহামারিকালের সব রেকর্ড ভেঙে গত সোমবার এক দিনেই ১০ লাখের বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কেবল এ দিনেই ৩ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করে দেশটি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ মানুষের দেহে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস, তুরস্কসহ ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই ওমিক্রনের কারণে স্থবির হয়ে গেছে জনজীবন।

কিউএনবি/অনিমা/৫ই জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ/সকাল ৯:০৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit