রাশিদুল ইসলাম রাশেদ রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে আলোচিত রফিকুল হত্যা মামলার আসামিসহ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদান ঘিরে তুমুল সমালোচনার ঝড় বইছে। নারী কেরেঙ্কারি, চিহ্নিত ভূমিদস্যু এবং সাধারণ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছে তৃণমুলের নেতা-কর্মী ও জেলার সাধারণ মানুষ ।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজ এ ঘটনাকে ‘ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন’ এবং ‘শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২০ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন এসব নেতাকর্মী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা সহ জেলা নেতৃবৃন্দ এসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাতে ফুল দিয়ে দলে বরণ করে নেন।
বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, আল হারুনুজ্জামান হারুন, মোস্তফা কামাল, জমশেদ আলী টুংকু, আবদুল মালেক এবং সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সহিরন বেগম ও মুক্তা বেগমসহ মোট নয়জন।
এদের মধ্যে আনিসুর রহমান কুড়িগ্রামের আলোচিত লগি-বৈঠার আন্দোলনে নিহত ছাত্রশিবিরের কর্মী রফিকুল হত্যা মামলার এজাহারভূক্ত অন্যতম আসামী। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের সাথে জড়িত যোগদানকারী কুড়িগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মালেক জুলাই আন্দোলনে নিহত আসিক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মো. লায়নের পিতা।
অপরদিকে, যোগদানকারী হলোখানা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মকবুল হোসেন, নারী কেলেঙ্কারি, চিহ্নিত ভূমিদস্যু এবং সাধারণ মাসুষের কাছে একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তিনি সাধারণ মানুষের বাড়িঘর লুটপাট এ জ্বালিয়ে দেয়ার প্রধান আসামী। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। অনেকেই বিএনপির এই সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক আদর্শের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন।
অভিমত জানতে কুড়িগ্রাম পৌর কাউন্সিলর আনিসুর রহমান, ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুল মালেক ও হলোখানা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য মকবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক লোকমান হোসেন লিমন বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট নেতাদের দলে নিয়ে বিএনপি শত শত শহীদদের আত্মত্যাগ ও হাজারো আহত জুলাই যোদ্ধার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক মুকুল মিয়া বলেন, ‘বিতর্কিত নেতাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া মানে পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া। এটি জুলাই আন্দোলনে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতার শামিল।’কুড়িগ্রাম জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, “২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা হামলার সময় ছাত্রশিবিরের কর্মী রফিকুল হত্যা মামলার নামীয় আসামিসহ পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের বিএনপিতে আশ্রয় দেওয়ায় আমরা লজ্জিত। এটা আবু সাঈদ-মুগ্ধ ও হাদির রক্তের সাথে বেঈমানি। “
কুড়িগ্রাম পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বিপ্লব বলেন, “সাবেক কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিগত দিনে বিএনপির অন্যতম কর্মী। পৌরসভার কাউন্সিলর করার সুবাদে আওয়ামীলীগ নেতাদের চাপের মুখে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাস্টিসরা পরাজিত হওয়ায় তিনি আবারো বিএনপিতে ফিরে এসেছেন। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
কিউএনবি/আয়শা/২১ ডিসেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৩৩