নিউজ ডেক্স : বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল হান্নান নরসিংদীতে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদায়ন পেতে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। তা তিনি দিয়েছিলেন ২০২৩ সালে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর গত বছরের নভেম্বরে তিনি নরসিংদীর এসপি হন। এর পরই ক্ষমতার প্রভাবে ঘুষের টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা ফেরতও নেন তিনি। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। সেই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে লঘুদণ্ড ‘তিরস্কার’ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘুষের মতো একটি ফৌজদারি অপরাধের বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। এমন নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও তিরস্কার দণ্ড দেওয়ায় তোলপাড় ও কানাঘুষা চলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ প্রশাসনে।
গত রবিবার সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সই করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সম্প্রতি গঠিত বিভাগীয় তদনন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালে নরসিংদীর পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদায়নের উদ্দেশ্যে তিনি কথিত রবিউল মুন্সী নামের এক ব্যক্তিকে ৫০ লাখ টাকা দেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে এ পদায়ন বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৯ নভেম্বর নরসিংদীতে এসপি হিসেবে যোগদানের পর তিনি এবং তাঁর অধীন ডিবি ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক এস এম কামরুজ্জামান অনুমতি ছাড়া ঢাকায় গিয়ে মণিপুরিপাড়ায় রবিউল মুন্সীর অফিস থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ও শুনানি কমিটির সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাঁকে তিরস্কার দণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের বিতর্কিত অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর। সম্প্রতি তাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের কাউকে কাউকে পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন করারও পাঁয়তারা চলছে। এ জন্য বড় ধরনের লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে বলে চাউর আছে। তবে সরকারের শীর্ষমহলকে বোঝানো হয়েছিল যে তাঁরা ওএসডি থাকলে বা ঢাকায় থাকলে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। নির্বাচন বানচাল করতে পারে।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সংস্কার করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই মন্ত্রণালয়ে। এখনো পুলিশের বদলি, পদায়নে বাণিজ্য চলছে; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রেট বেড়েছে। শুধু পুলিশ নয়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও কারাগারেও বদলি, পদায়ন বাণিজ্য চলছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মানুষ কত গল্প বানায়! এটা ৫০ লাখ টাকার ঘুষের বিষয় নয়, আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে ব্যবসাসংক্রান্ত লেনদেনের বিষয়। আমার বিবেক অনুযায়ী লঘুদণ্ড দিয়েছি। এখানে ঘুষের কোনো বিষয় নেই। আর এসব কাজে আমার কোনো আত্মীয়ও নেই।
তারা এসব থেকে অনেক দূরে থাকে।’ব্যবসার বিষয় হলে আপনার সই করা প্রজ্ঞাপনে ঘুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ভেতরের গল্প হয়তো তারা জানে না। এটা হয়তো আমার অফিসারদের ভুল হতে পারে।’প্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসন বিষয়ক বহু গ্রন্থপ্রণেতা মো. ফিরোজ মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ অপরাধে দুদকে মামলা হওয়ার কথা। সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী এ শাস্তি হতেই পারে। এটা আইনের গলদ। কিন্তু আমাদের সমাজে ঘুষকে বড় অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের অপরাধের শাস্তি তিরস্কার হলে তা সমাজে ঘুষকে উসকে দেওয়ারই শামিল।’