আলমগীর মানিক,রাঙামাটি : দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তা হুমকি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে পার্বত্য রাঙামাটিতেও রাজনৈতিক সহিংসতার চেষ্টার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হওয়া একটি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের কয়েক সদস্যের মোবাইল ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম অ্যাপ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার ইঙ্গিতপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বের সাথে নিয়েছে রাঙামাটির সংশ্লিষ্ট্য আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, রাঙামাটি অঞ্চলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কয়েকজন স্থানীয় নেতা এবং কিছু সাংগঠনিক কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে হামলার ছক থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। উদ্ধার করা ডিজিটাল ডিভাইসে রাঙামাটি অঞ্চলে সম্ভাব্য নাশকতা, হামলার পরিকল্পনা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করার তথ্য পাওয়া যায়। তবে এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত চলছে।
শৃঙ্খলাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদককে জানান, আমরা সম্প্রতি নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের একজনকে গ্রেফতার করে তার মোবাইল ডিভাইসে পলাতক নেতাদের সাথে গ্রুপ চ্যাটের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও টেলিগ্রাম গ্রুপের বিষয়টি উঠে আসে। কিছু যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে জানা যাচ্ছে, স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিছু নেতাকে টার্গেট করার আলোচনা ছিল। তবে কারা এর সঙ্গে যুক্ত এবং পরিকল্পনা কতটা বাস্তবসম্মত তা তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছে সংশ্লিষ্ট্যরা। সূত্রগুলো বলছে, তদন্ত দল সম্ভাব্য টার্গেটদের –িনরাপত্তাঝুঁকি মূল্যায়ন করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাঙামাটির বর্তমান বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ঘায়েল করতে আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারস্থ হচ্ছে পতিত ফ্যাসিস্টদের পলাতক নেতৃবৃন্দ। এখনো পর্যন্ত খোদ রাঙামাটির নানিয়ারচর, বন্দুকভাঙ্গা, বালুখালী, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়িতে বিপুল অংকের অর্থের বিনিময়ে আঞ্চলিকদলগুলোর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তাদের নিজস্ব ঢেড়ায় অবস্থান করে এসব নাশকতার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিস্টরা জানতে পেরেছে।
পুলিশের একটি সূত্র প্রতিবেদককে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতের প্রথমসারির কিছু নেতার সাথে পতিত ফ্যাসিস্ট সংগঠন ও নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি অংশ ব্যবসায়িক বা চাকুরি কারনে যুক্ত থাকা কর্মচারি, ব্যবসায়িক পার্টনার, ঠিকাদারি কাজের সাথে যুক্ত থেকে বিএনপি ও জামায়াতসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য ইলেট্রনিক্স ডিভাইসের নানান গ্রুপের মাধ্যমে পলাতক নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
বিষয়টি নজরে আনলে রাঙামাটি জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) মো: জসিম উদ্দিন চৌধুরী-পিপিএম প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা যারা করবে তাদের ব্যাপারে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে অবগত হয়েছি এবং নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। রাঙামাটিতে যেকোনো ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা প্রতিরোধ করার জন্য রাঙামাটির জেলা পুলিশের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক সহিংসতা বা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক পক্ষের সতর্ক থাকা উচিত। রাঙামাটির সংশ্লিষ্ট্য প্রশাসন ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। পর্যটন অঞ্চল হওয়ায় স্থানীয় জনগণ ও ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিজিবিলিটি পেট্রোল, চেকপোস্ট নজরদারি এবং বিশেষ টহল বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট্য সূত্রে জানাগেছে।
কিউএনবি/আয়শা/১৭ নভেম্বর ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:২০