ডেস্ক নিউজ : খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। বিবাদমান হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যকার দূরত্ব কমতে শুরু করেছে। সবাই একবিন্দুতে তথা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে নতুন প্রাণের যেন সঞ্চার হয়েছে। খুলনায় বিএনপির সংগঠন সব সময়ই শক্তিশালী ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্বে ঘুণে ধরেছে ঐক্যে। কেন্দ্র থেকে কয়েক দফা দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সফল হয়নি।
খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বরাবরই ফ্যাক্টর। তারা এতোদিন দল থেকে তারা দূরে ছিলেন। পোড় খাওয়া এই নেতাদের অনুসারীদের অনেকেই অভিমানে নিজেদের গুটিয়ে রাখেন। তবে মঞ্জু পদ না থাকলেও নিজ উদ্যোগে দলীয় কর্মসূচি চালিয়ে গেছেন আলাদা ব্যানারে।
তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির।মঞ্জু খুলনা-২ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর সব হিসেব উল্টে যায়। মঞ্জু শিবিরে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে যায়। তবে একই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন স্বভাবতই মনঃক্ষুণ্ন হন। সেটি সুরাহার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে।
সেই উদ্যোগ সফল হতে যাচ্ছে। এতে করে বরফ গলতে শুরু করেছে খুলনা মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে। খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মনোনয়ন দেওয়ায় কিছুটা বিভ্রান্তিতে ছিলেন বর্তমান কমিটির নেতারা। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন। দলীয় মনোনয়নের পর নজরুল ইসলাম মঞ্জুসহ তাদের অনুসারী এবং বর্তমান কমিটির দূরত্ব কমিয়ে আগামী নির্বাচনে একত্রে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার জন্য কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে খুব দ্রুত খুলনার-২ এবং খুলনা-৩ আসনে ধানের শীষের পক্ষে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রোববার নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাসভবনে একান্ত বৈঠক করেন রকিবুল ইসলাম বকুল। সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে খুলনা ক্লাবে বর্তমান মহানগর বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও সাবেক কেসিসির মেয়র মনিরুজ্জামান মনি বৈঠক করেন। এর আগে রকিবুল ইসলাম বকুল মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে এবং সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নেতাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।
দীর্ঘ চার বছর নজরুল ইসলাম মঞ্জু মহানগর বিএনপির সঙ্গে না থাকার কারণে মহানগর বিএনপির কমিটি ও খুলনা-২ আসনের দুটি থানার কমিটি প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনীহা প্রকাশ করে। এতে মহানগর বিএনপির সঙ্গে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর দূরত্ব থেকে যায়। এ বিষয়টির সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া রকিবুল ইসলাম বকুলকে। এরপর তিনি কয়েক দফা শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। অবশেষে সেই বরফ গলতে শুরু করেছে। রকিবুল ইসলাম বকুলের সমঝোতায় খুব দ্রুতই খুলনা মহানগরীর দুটি আসনে ধানের শীষের পক্ষে প্রচার ও পরিকল্পনা করা হবে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা জানান, মঞ্জু ভাইয়ের সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। আরও বৈঠক হবে। দীর্ঘদিনের একটু দূরত্ব ছিল সেটি আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা নির্বাচন করব। নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, আমি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পরে এখনো সুস্থ হয়ে উঠতে পারিনি। মহানগর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আমরা কয়েক দফা বৈঠক করেছি। আমরা আবারও বসব। পদবঞ্চিত যারা আছেন তাদের এবং বর্তমান মহানগর কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা আগামীতে দুটি আসনের নির্বাচনি প্রচারণা একত্রে শুরু করব। সবাইকে নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করার প্রস্তাব রয়েছে। সংসদ সদস্য প্রার্থী, মহানগর বিএনপির কমিটি এবং পদবঞ্চিত নেতাদের নিয়ে যৌথ একটি সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনাও আছে। খুব দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি ধানের শীষের পক্ষে মাঠে নামবে।
খুলনা-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, আগামীতে কীভাবে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনে নির্বাচনি কাজ করব তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। মহানগরের বর্তমান কমিটি ও সাবেক কমিটির নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ হারান খুলনা-২ (সদর-সোনাডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু। আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পান বর্তমান নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন।
এ ঘটনার পর নজরুল ইসলাম মঞ্জু তার অনুসারীদের নিয়ে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। পদত্যাগ করেন তার অনুসারী শতশত নেতাকর্মী। এর পরপরই কেন্দ্রীয় বিএনপির খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ২০২১ সালের পর থেকে মাঠ ছাড়েননি নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিভিন্ন ব্যানারে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করেছেন তার অনুসারীদের দিয়ে। খুলনায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সমাবেশে তিনি তার অনুসারীদের নিয়ে শোডাউনসহ মিছিলও করেছেন। ঈদ, পূজাসহ সব সামাজিক অনুষ্ঠানে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখলেও দল থেকে পাননি তেমন মূল্যায়ন। শেষ পর্যন্ত দল তার গুরুত্ব বুঝেছে।
কিউএনবি/আয়শা/১২ নভেম্বর ২০২৫,/রাত ৯:৩৮