ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমটির মতে, ‘এই সামরিক ঘাঁটি প্রকল্পটি হবে ‘ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রথম বৃহৎ আকারের মার্কিন সামরিক স্থাপনা, যা গাজায় যুদ্ধোত্তর স্থিতিশীলতা প্রচেষ্টার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গভীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটাবে।’ গাজায় ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র তেল আবিবে একটি থাড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করে, যা ইসরাইলের সাথে ১২ দিনের সংঘর্ষের সময় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
গাজা যুদ্ধবিরতির পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, ‘গাজায় কোনো মার্কিন সেনা থাকবে না।’ কিন্তু যুদ্ধবিরতি তদারকির নামে এরই মধ্যে ২০০ মার্কিন সেনা গাজা সীমান্তে মোতায়েন করা হয়েছে যারা ইসরাইলের দক্ষিণে কিরিয়াত গাতে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিভিল-মিলিটারি কোঅরডিনেশন সেন্টারে (সিএমসিসি) অবস্থান করছে।
ইসরাইলি কর্মকর্তাদের মতে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রটি (সিএমসিসি) গাজায় মানবিক সাহায্য বিতরণের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে পরিকল্পিত ঘাঁটিটি ঠিক কোথায় নির্মাণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি ইসরাইলি সংবাদপত্রটি। প্রতিবেদনের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরাইলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
এদিকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের এক মাস পরও গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহে অব্যাহতভাবে বাধা দিয়ে চলেছে ইসরাইল। দুর্বিষহ পরিবেশে জীবন বাঁচানোর রসদ থেকেও বঞ্চিত লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। ১০ অক্টোবর কার্যকর অস্ত্রবিরতি ভঙ্গুর হলেও তুলনামূলক স্বস্তি ফিরেছিল উপত্যকায়। জাতিসংঘ বলছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত পানি, স্যানিটেশন সামগ্রী, কম্বল ও শীতের পোশাকের মতো জরুরি পণ্যের প্রবেশ ১০৭ বার আটকে দিয়েছে ইসরাইল।
গাজার স্থানীয় একজন বাসিন্দা বলেন, ‘চলতি বছর ফেব্রুয়ারির পর থেকে আমি সামান্য ত্রাণও পাইনি বললেই চলে। বিশুদ্ধ পানি পাওয়া ভীষণ কঠিন। আংশিক পরিশুদ্ধ লবণাক্ত পানিও দুই দিন আগে থেকে মিলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে পানি সরবরাহ বিচ্ছিন্ন। প্রতিটা দিনই ভীষণ কঠিনভাবে কাটছে।’ জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের তথ্য, যুদ্ধ কবলিত উপত্যকায় আগস্ট থেকে শিশুদের টিকার জন্য জরুরি ১০ লাখ সিরিঞ্জ, এমনকি বেবি ফর্মুলাও ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরাইল।
ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পাইরেস বলেন, ‘ইউনিসেফ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে বাধা কাটানোর চেষ্টা করছে, সেটি হলো গাজায় সিরিঞ্জ ও সৌরশক্তিচালিত রেফ্রিজারেটর আনা, যা কয়েক মাস আগে কেনা হয়। আমরা ১৬ লাখ সিরিঞ্জ কিনেছি, যার বেশিরভাগই এখনও গাজায় ঢুকতে পারেনি।’ এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় যৌথ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে শক্তিশালী করতে আইনি, সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়ে কাজ করবে কমিটিটি। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) প্যারিসে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
বৈঠকের পর ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে, শান্তি পথ খুলতে এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে ফ্রান্স। এ লক্ষ্যে আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সুসংহতকরণে যৌথ কমিটি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কমিটি সাংবিধানিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংগঠনিকসহ সব আইনি দিক নিয়ে কাজ করবে। নতুন সংবিধান তৈরিতে সাহায্য করবে।’
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, ‘সব বেসামরিক হত্যা ও অপহরণের বিরুদ্ধে আমরা, যার মধ্যে হামাসের ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এর হামলাও অন্তর্ভুক্ত। একইসঙ্গে আমরা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কারণ এটি আমাদের নীতি ও মূল্যবোধবিরোধী। আমরা সংলাপ ও শান্তির সংস্কৃতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার, বহুত্ববাদ আর ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ গণতান্ত্রিক, নিরস্ত্র রাষ্ট্র চাই।’