শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:২১ অপরাহ্ন

ভিন্ন কোনো দেশের কারণে ঢাকা–বেইজিং সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: চীনের রাষ্ট্রদূত

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঝুঁকতে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতার প্রেক্ষাপটে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছেন, কোনো তৃতীয় দেশের কারণে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দুর্বল হবে না।

সাবেক কূটনীতিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসাডরস (এওএফএ–আউফা) তাদের নিয়মিত আয়োজনের অংশ হিসেবে এদিন চীনের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে মতবিনিময়ের আয়োজন করে। চীনের রাষ্ট্রদূত বক্তৃতা দেওয়ার পর প্রশ্নোত্তরপর্বে অংশ নেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য রাষ্ট্রদূতের ঢাকা–চীন সম্পর্ক নিয়ে এক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে ইয়াও ওয়েনের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। সেই শুনানিতে বাংলাদেশ–চীন সম্পর্ক নিয়ে ওয়াশিংটনের উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে প্রশ্নোত্তরপর্বে ক্রিস্টেনসেন বলেছিলেন, ঢাকায় দায়িত্ব পালনের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত হলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির ঝুঁকির বিষয়টি বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরবেন।

আজকের অনুষ্ঠানে সেই শুনানির বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীন ও আত্মনির্ভর পররাষ্ট্রনীতির প্রশংসা করি। এটাই বাংলাদেশের অতীতের সরকারগুলো অনুসরণ করে এসেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনা ছাড়া পরিচালিত হয়েছে। চীনের অবস্থান হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীন ও নিজস্ব শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নীতি অনুসরণকে সমর্থন করা। আপনাদের কোনো বিদেশি শক্তির নির্দেশনায় পরিচালিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এই অবস্থানকে আমরা সমর্থন করি।’

আন্তসম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমার মতে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক জনগণের কল্যাণে। বাংলাদেশের সরকার, রাজনৈতিক দল, রাজপথের জনগণের বিষয়ে আমরা মুগ্ধ। বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখুন। গত মার্চে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চীনে গিয়েছিলেন। ভুলে যাবেন না গুরুত্বপূর্ণ সফরটি ছাড়াও বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের তিনটি প্রতিনিধিদলের গুরুত্বপূর্ণ সফর হয়েছে চীনে। ওই তিন দলের নেতারাসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারাও চীন সফর করেছেন। তারা দুই দেশের মাঝে সহযোগিতা চান। এটাই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের শক্তি। এই সম্পর্ক দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে।’

বৈশ্বিক অঙ্গনে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা চললেও বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে এবং তা তৃতীয় কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে নয় বলে মন্তব্য করেন ইয়াও ওয়ান। তিনি বলেন, ‘তাই আমাদের এই সহযোগিতা অন্যের দ্বারা পরিচালিত হবে না। নির্বাচনের পরও বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণে দুই দেশের এই সহযোগিতা আরও এগিয়ে যাবে। সহযোগিতা আরও টেকসই হবে। এই সম্পর্ক বিদেশি কোনো রাষ্ট্রের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।’

আউফা সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন শাহেদ আক্তার, গোলাম মোহাম্মদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব গাউসুল আজম সরকার।

‘রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চীনের সক্ষমতার বাইরে’

মতবিনিময়ে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান নিয়ে প্রশ্ন করা হয় চীনের রাষ্ট্রদূতকে। দীর্ঘদিন ধরে জিইয়ে থাকা রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায় বাংলাদেশ। ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারকে রাজি করাতে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে আসছেন বিশ্লেষকেরা।

ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চীনকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়ই অনুরোধ করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনেও তারা চেষ্টা করেছেন। তবে বিষয়টি একা চীনের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটি চীনের সক্ষমতার বাইরে। এটি অত্যন্ত জটিল সংকট। এর সঙ্গে অনেক স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) জড়িত। আমরা যখন ২০২৩ সালে প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করেছি, অন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো আমাদের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করেছে। প্রত্যাবাসন হোক, কিছু দেশ ও সংস্থা তা চায় না।’রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সব অংশীদারের ভূমিকা রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, চীন তার ভূমিকা পালন করবে।

‘তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে’

তিস্তা অববাহিকা নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ চীনের অর্থায়ন চেয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। অন্তর্বর্তী সরকারেরর সময়ে এসে তার কোনো অগ্রগতির খবর আছে কি না, মতবিনিময় সভায় তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ইয়াও ওয়েনের কাছে।

ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশ ও উত্তরাঞ্চলে বসবাসরত মানুষের কাছে এ প্রকল্পের গুরুত্ব সম্পর্কে তারা জানেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বিগত সরকারের কাছে তিস্তা প্রকল্পে একটি সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব করেছিলেন তারা। এর জন্য দুটি ভাগে প্রকল্পটিকে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথমটি বন্যা নিয়ন্ত্রণে নদীর ওপর বাঁধ তৈরি এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে একটি শহরতলির মতো করে গড়ে তোলা, যেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রম থাকবে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের আগপর্যন্ত অর্থাৎ আড়াই বছর তিস্তা প্রকল্প সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি বলে জানান চীনের রাষ্ট্রদূত। তবে এরপর সাড়া পান জানিয়ে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রস্তাব পান তারা। এরপর চীনা বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

ইয়াও ওয়েন জানান, এ প্রকল্পে প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয় হতে পারে। প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে সাত-আট বছর লাগবে তা সম্পূর্ণ হতে।

বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল নিয়ে ‘কঠিন পরিশ্রম’ করছেন। অবকাঠামো নির্মাণের আগে যে নথিপত্র সইয়ের বিষয় রয়েছে, তা আগামী নভেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদী।

ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৩০টি চীনের প্রতিষ্ঠান ১০০ কোটি ডলারের ওপর বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে।’

বাংলাদেশ–চীন–পাকিস্তান সম্পর্ক

শক্তিশালী বাংলাদেশ গড়তে চীন ভূমিকা রাখতে চায় বলে জানান রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। তিনি আরও বলেন, সার্ক অকার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান ত্রিদেশীয় সুসম্পর্ক এই অঞ্চলের অগ্রগতিতে নতুন ভূমিকা রাখবে।

চীনের প্রেসিডেন্টের বৈশ্বিক সুশাসন উদ্যোগ (জিজিআই) নিয়ে প্রশ্ন করলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বছরের সেপ্টেম্বরে সাংহাই কো–অপারেশন সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট জিজিআই ঘোষণা করেছেন। এটা ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়। সবার জানা যে একটি দেশ তার নীতির মাধ্যমে বিশ্বে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করছে। ফলে দক্ষিণের এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো চীনের কাছে যায়। আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দিতে এবং বিশ্বকে একত্র করতে তারা চীনকে ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানায়।

‘ফলে আমাদের এসব আন্তর্জাতিক আইনকে সুরক্ষা দিতে হবে। না হলে পুরো বিশ্বের জন্য জঙ্গলের শাসন কায়েম হয়ে যাবে। এ কারণেই চীন জিজিআই প্রস্তাব নিয়ে এসেছে,’ বলেন তিনি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৯ অক্টোবর ২০২৫,/রাত ১০:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit