ডেস্ক নিউজ : নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) নির্বাচনি এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ তুলছেন এক গ্রুপ অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিভিন্ন নেতার ভিন্ন এঙ্গেলের বক্তব্যে সাধারণ কর্মীরা এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। এমনকি দুপক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘাতের আশংকাও করছেন অনেকে।
নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজিজ দাবি করেছেন, ১২ অক্টোবর রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে তাকে ফোন দিয়েছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাকে নির্বাচনি মাঠে থাকার এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন বলে দাবি আজিজের। ৪ মিনিটের ওই ফোনালাপে তারেক রহমান দলীয় ঐক্য বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও দাবি করেন এই বিএনপি নেতা।
পরদিন নাটোর-বনপাড়া মহাসড়কের আহম্মেদপুর বাসস্ট্যান্ডে এক পথসভায় কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আব্দুল আজিজকে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ফোন দিয়েছেন। আমি তার পাশে আছি। তার নির্বাচনি এলাকায় আমি নিজেও প্রচারে অংশ নেব। তিনি দলীয় কর্মীদের আজিজের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
আজিজের ওই দাবির পরপরই নাটোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবু হেনা মোস্তফা কামাল রঞ্জু পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সোমবার রাতে গুরুদাসপুরে তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের ফোন পাওয়া নিয়ে আজিজের দাবির বিষয়টি তাদের কাছে স্পষ্ট নয় বলে জানান।
তিনি বলেন, এমন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। অতীতেও এমন ভুয়া খবর ছড়ানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি হাইকমান্ডকে জানিয়েছি, কোনো সত্যতা পাইনি। রঞ্জু অভিযোগ করেন, আজিজ সমর্থকরা এখন আমাদের ব্যানার ও সাইনবোর্ড ছিড়ে ফেলছে, অফিস বন্ধের হুমকি দিচ্ছে। তবে তিনি সব কর্মীদের ধৈর্য ধারণ ও দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহবান জানান।
বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বললে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে আব্দুল আজিজ-ব্যারিস্টার রঞ্জুর মধ্যে যা শুরু হয়েছে তাতে যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত হতে পারে। কেন্দ্রীয় নেতাদের উচিত তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া। এমনভাবে চলতে থাকলে বিএনপির এ আসনে জয় পাওয়া কষ্ট সাধ্য হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল আজিজ বলেন, ব্যানার ফেস্টুন সাইনবোর্ড কখনো ছিঁড়ে ফেলা হয়নি। অফিস বন্ধ করে দেওয়ার কোনো কথাও আসেনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে মিথ্যা বলার দুঃসাহস আমার নাই। বিএনপির সব নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে বিপুল ভোটের ব্যাবধানে এই আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে চাই।
এদিকে গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাবেক পৌর মেয়র মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ধানের শীষ যার, আমরা তার। মনোনয়ন না হওয়া পর্যন্ত সবাইকে শান্ত থেকে ধৈর্য ধরতে হবে। নেতাকর্মীদের সংঘাতে এড়িয়ে চলার আহবান জানান তিনি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ এ বিষয়ে বলেন, দলীয়ভাবে এমন কোনো বার্তা আমাদের কাছে আসেনি। যেহেতু বিষয়টি তারেক রহমানকে জড়িয়ে বলা হচ্ছে, তাই আমি মন্তব্য করতে চাই না। রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম জানান, বিষয়টি নিয়ে তাদের কাছেও কোনো বার্তা বা নির্দেশনা নেই।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট এম. রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাকে মনোনয়ন দেবেন তিনিই আমাদের প্রার্থী। এখানে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া ১৭ বছর যারা নির্যাতিত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, তাদের বাদ দিয়ে রাজনীতি হয় না।
কিউএনবি/আয়শা/১৫ অক্টোবর ২০২৫,/বিকাল ৪:৩০