আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এক ভয়ংকর পোকা। এটি পরিচিত ‘চুম্বনকারী পোকা’ (কিসিং বাগস) নামে। এই পোকার কামড় থেকে হতে পারে প্রাণঘাতী চাগাস রোগ। স্থানীয় প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
এবিসি৭ আইউইটনেস নিউজ-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরজীবী সংক্রমণ এখন ক্যালিফোর্নিয়াতেও দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, সময় মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে এই সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
পোকা কেন ‘চুম্বনকারী’ নামে পরিচিত?
এই পোকা মূলত রাতে মানুষের ঘুমন্ত অবস্থায় মুখের চারপাশে, বিশেষ করে ঠোঁট ও চোখের কাছে কামড় দেয়। রক্তচোষা স্বভাবের কারণে এটি মানুষ, পোষা প্রাণী এবং বন্য প্রাণীর ওপর নির্ভর করে। টেক্সাস এঅ্যান্ডএম-এর কিসিং বাগস প্রোগ্রাম অনুসারে, মুখের এই সংবেদনশীল অংশে কামড়ানোর প্রবণতার জন্যই এই পোকার এমন অদ্ভুত নামকরণ হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রিফিথ পার্কের মতো বনাঞ্চলে এদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।
চাগাস রোগ কী?
চাগাস রোগ আমেরিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস নামেও পরিচিত। এটি একটি পরজীবী সংক্রমণ। এটি ‘ট্রাইপানোসোমা ক্রুজি’ নামক এক ধরনের পরজীবীর মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত, পোকা কামড়ানোর পর মলত্যাগ করে এবং সেই মল থেকে পরজীবী মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
রোগের লক্ষণসমূহ
চাগাস রোগের লক্ষণ দুটি পর্যায়ে দেখা যায়:
প্রাথমিক পর্যায়: সংক্রমণের প্রথম দুই মাস এই পর্যায়টি স্থায়ী হয়। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, এবং শরীর বা বুকে ব্যথা। বিরল ক্ষেত্রে, ত্বকে ক্ষত বা চোখের পাতা ফুলে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যেতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়: সঠিক চিকিৎসা না হলে প্রায় ১০ থেকে ৩০ বছর পর এই রোগ দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়ে চলে যায়। এই সময় পরজীবী হৃৎপিণ্ড এবং হজমতন্ত্রের পেশিগুলোতে লুকিয়ে থাকে। এক তৃতীয়াংশ রোগীর হৃৎপিণ্ডের সমস্যা দেখা যায় এবং দশ জনের মধ্যে একজন হজমতন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র বা উভয় ধরনের জটিলতায় ভোগেন। এর ফলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া, ক্রমশ হৃদরোগের অবনতি এবং হঠাৎ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
চাগাস রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। ‘বেনজনিডাজল’ বা ‘নিফুরটিমক্স’ নামক ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে থাকে। গর্ভবতী নারী, কিডনি বা লিভারের সমস্যাযুক্ত রোগী, এবং স্নায়বিক বা মানসিক রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকা তাড়ানোর স্প্রে মুখে ব্যবহারের পরিবর্তে সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ হলো সচেতনতা বাড়ানো। নিজেদের এবং পোষা প্রাণীদের সুরক্ষিত রাখতে রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা জরুরি।
স্থানীয় বন্যপ্রাণী, যেমন ইঁদুর এবং স্কঙ্ক-এর মধ্যে এই পরজীবী পাওয়া গেছে। যদিও এই রোগ সরাসরি পশু থেকে মানুষে ছড়ায় না, তবে পোকার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
কিউএনবি/অনিমা/০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, /দুপুর ১২:৫৩