মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
জুলাই-আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বিচারের গতি সন্তোষজনক : আইন উপদেষ্টা মালয়েশিয়ায় দুইদিনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো ৩ বাংলাদেশির চীনে বৈঠকের পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন বার্তা দিলেন পুতিন নোয়াখালীতে ২৯ বছর পর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়, ট্রাম্পকে কড়া হুঁশিয়ারি ফ্রান্সের সুদানে ভয়াবহ ভূমিধসে পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন, সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেন এসবিপ্রধান গোলাম রসুল ও র‌্যাব ডিজি শহিদুর রহমান জিওসিসহ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে অন্তত ৮০০ মানুষ নিহত: জাতিসংঘ প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করেও ডাকসু নির্বাচন হবে: ঢাবি উপাচার্য

ব্ল্যাকমেইল-নারী নির্যাতনসহ তৌহিদ আফ্রিদির কুকীর্তি ফাঁস

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি ও তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে। প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইল এবং নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তাদের সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ করেছে অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান ‘ক্রাইম এডিশন’।

সেখানে ইউটিউবার ও ব্লগারদের আওয়ামী লীগের পক্ষে জোর করে কাজ করানোসহ তৌহিদ আফ্রিদির নানা কুর্কীতির তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ জুলাই ২০২৪—অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার ওপর চলে অবর্ণনীয় গণহত্যা। সেই গণহত্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিশেষত ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদ ছিলেন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে থাকা ছয় সমন্বয়ককে আটকের পর আন্দোলন এক প্রকার স্তব্ধ হয়ে পড়ে।

ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন তার ইউটিউব চ্যানেলে ডিবি প্রধান হারুনুর রশিদের এক নারীর সঙ্গে করা আপত্তিকর একটি ভিডিও আপলোড করেন। ওই ভিডিও প্রকাশের পর হারুন ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করে নিজের উলঙ্গ ভিডিও সরানোর অভিযানে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দিন বিকেলেই হারুনুর রশিদ ইউটিউবার তৌহিদ আফ্রিদিকে তার কার্যালয়ে আসতে বলেন। যেভাবেই হোক সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ওই ভিডিও সরাতে আফ্রিদিকে অনুরোধ করেন। হারুনের ভিডিও সরাতে আফ্রিদি বাসা থেকে তুলে আনেন সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট মোহাম্মদ জুবায়েরকে। জুবায়ের জানান, রাতভর তাকে ডিবি কার্যালয়ে আটকে রেখে বিভিন্ন পেজ থেকে হারুনের ভিডিও সরাতে বাধ্য করা হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তৌহিদ আফ্রিদিকে শুধু একজন ইউটিউবার মনে করলে ভুল হবে। বরং তিনি ছিলেন অনলাইন মাফিয়া। তার নিয়ন্ত্রণেই চলতে হতো সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় সব কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের। কথামতো না চললেই শুরু হতো নির্যাতন।

আফ্রিদির কথা না শুনে উপায়ও ছিল না। কারণ, ডিবি, সিআইডি, এটিইউ কিংবা সিটিটিসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়া সংশ্লিষ্ট যেকোনো কাজে এসব গোয়েন্দা সংস্থা আফ্রিদিকে ব্যবহার করত।

৩০ জুলাই রাতে হারুনুর রশিদের ভিডিও প্রকাশের পর আব্দুল্লাহ আল ইমরান নামে আরেকজনকে তুলে আনা হয়। তাকেও জোরপূর্বক ওই ভিডিও সরানোর কাজে বাধ্য করা হয়।

তৌহিদ আফ্রিদির নির্যাতনের শিকার হন জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্বপন আহমেদ। স্বপনের মূল ‘অপরাধ’ ছিল—তিনি আলেমদের পক্ষে এবং ভারতের বিপক্ষে কনটেন্ট তৈরি করতেন। এ কারণে আফ্রিদি তাকে এ ধরনের কনটেন্ট বানাতে নিষেধ করেন। কিন্তু স্বপন আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে রাজি না হওয়ায় তাকে আদালতের বারান্দায় পর্যন্ত যেতে হয়েছে।

হাসি-খুশির আবরণে ভয়ঙ্কর এক অন্ধকার জগৎ গড়ে তুলেছিলেন আফ্রিদি। সেই রহস্যময় জগতের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে আছে মানুষের দীর্ঘশ্বাস।

প্রতিবেদনে আফ্রিদির একটি আস্তানা দেখানো হয়। বলা হয়, নতুন কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে রাজি হলে সেখানে তাকে বরণ করা হতো। তবে ওই আস্তানায় যখন কাউকে শাস্তি দেওয়া হতো, সেই ভিডিও ধারণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

তৌহিদ আফ্রিদির নির্মম নির্যাতনের শিকার ব্লগারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন সায়েম। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পাশে একটি ভবনে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। সায়েমকে ৩০ থেকে ৩৫টি থাপ্পড় মারা হয়। সরকারি বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনেই আফ্রিদি তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন।

প্রতিবেদনে আফ্রিদির নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী একজন সেই ভয়াবহ দিনের কথা তুলে ধরেন। ভুক্তভোগী জানান— “যেভাবেই হোক একটা ভিডিও করাবে। যদি কোনো ভিডিও ব্ল্যাকমেইলের জন্য যথেষ্ট না হয়, তখন কী করবে? একটা মেয়ে দিয়ে দেবে। কারণ ওই জিনিস মানুষকে সমাজে কলঙ্কিত করে। কোনোদিন যদি ভুক্তভোগী আফ্রিদির বিপক্ষে যায়, তখন ওই ভিডিও দিয়ে তাকে ফাঁদে ফেলে ধ্বংস করে দেয়।”

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই আন্দোলন চলাকালে আফ্রিদি দেশের জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের হুমকি দিয়ে সরকারের পক্ষে কাজে লাগানোর চেষ্টা চালিয়েছেন। তাছাড়া, আফ্রিদির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করার অভিযোগও উঠেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানান, দীর্ঘদিন সম্পর্কে থাকার পর আফ্রিদি হঠাৎ করেই তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। পরে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে গায়েব করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ফলে সংসার করার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তার।

ওই নারী আরো বলেন— ‘আমার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করলে উল্টো আফ্রিদি আমাকে হুমকি দেয়, মুনিয়ার মতো আমাকেও পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। আমি জানতে পারি, তার একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি মুনিয়া নামের একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি প্রতিবাদ করলে সে আমাকে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করে। সরাসরি না বললেও ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয়, মুনিয়ার মতো আমারও পরিণতি হবে।’

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ওই নারীর অভিযোগের সূত্র ধরে কিছু ফোন রেকর্ড হাতে আসে। যেখানে মুনিয়ার বাসায় আফ্রিদির যাতায়াত এবং ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ মেলে। মুনিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির সম্পর্ক এবং আরেক প্রেমিকার সাক্ষ্য মিলিয়ে দেখলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে।

আফ্রিদির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে—জুলাই আন্দোলনে আসাদুল হক বাবু নামের এক বিক্ষোভকারীকে হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তিনি জড়িত। আরেকটি মামলা হয়েছে বাড্ডা থানায়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই মধ্য বাড্ডা ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় আফ্রিদি।

কিউএনবি/অনিমা/২৬ আগস্ট ২০২৫/দুপুর ১২:২৭

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

September 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit