ডেস্ক নিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের ১৮টি হলে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। মোট ৫৯৩ জন শিক্ষার্থী এই হল কমিটিতে পদ পেয়েছেন। এর মধ্যে ত্যাগী কর্মীদের বঞ্চিত ও অবমূল্যায়ন এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন- এমন শিক্ষার্থীদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ছয় শিক্ষার্থীকে কমিটি থেকে অপসারণ করেছে ছাত্রদল।
শনিবার (৯ আগস্ট) এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ছয় নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এর আগে, কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কিত পদায়নের অভিযোগ উঠতে থাকে।
যাদের নামে অভিযোগ
ছাত্রদলের এ আহবায়ক কমিটিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের শামসুননাহার হলের উপ-গণযোগাযোগ সম্পাদক নিতু রাণী সাহাকে ছাত্রদলের হল কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদে দেখা গেছে। ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোছাদ্দেক আল হক শান্ত অতীতে এলাকায় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার বাবা আওয়ামী লীগ মনোনীত নশিপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, ৫ আগস্টের পর বাবাকে রক্ষা করার জন্য শান্ত ছাত্রদলে যোগ দেন।
একই হলে পদায়িত হন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জীববিজ্ঞান অনুষদের সহ-সভাপতি পদে থাকা রাকিবুল হাসান সৌরভ। তিনি হল ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদ পেয়েছেন। গত বছরের ৩ আগস্ট রাতে খালেদা জিয়াকে ব্যঙ্গ করে পোস্ট করা ও নিয়মিত ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া রাজু শেখ নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক পদ পেয়েছেন।
এছাড়াও, গত বছরের জুলাইয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বয়কট করা আহমেদ জাবির মাহাম হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের নতুন ঘোষিত ছাত্রদলের কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। গতবছর আগস্টে বিভিন্ন পোস্টে তার দেওয়া ‘সারা বাংলায় খবর দে, এক দফার কবর দে’ এমন কমেন্টের প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া, একই হলের এস এন সায়মনের বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।
এর বাইরে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন বা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ছবি আছে এমন আরও অনেকেই ছাত্রদলের নতুন ঘোষিত আহবায়ক কমিটিতে পদ পেয়েছেন।
পদ থেকে অব্যাহতি পেলেন ছয় নেতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের অধীনস্থ হল কমিটি ঘোষণার পর ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল কমিটির আহবায়ক মোসাদ্দেক আল হক শান্ত ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক রাকিবুল হাসান সৌরভ, শামসুন নাহার হল কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক নিতু রানী সাহা, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক রাজু শেখ এবং হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল কমিটির সদস্য আহমেদ জাবির মাহাম ও এন এস সায়মনের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির শনিবার এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। এর আগে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল কমিটি নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে এক কমিটি গঠন করা হয়। এ তদন্ত কমিটিতে আছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মাসুম বিল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন শাওন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূর আলম ভূঁইয়া।
‘ত্যাগীদের’ অভিযোগ
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন, কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। স্যার এ এফ রহমান হলের পদবঞ্চিত নেতা মুহাম্মদ মাহাদী হাসান তার ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘২০২২ সাল থেকে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বুকে লালন করে রাষ্ট্রযন্ত্রের বুট-বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। অথচ আজ আমার ত্যাগ ও বিশ্বস্ততার প্রতিদান দিলেন ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, স্বজনপ্রীতি করে তার আপন ছোট ভাইকে আমার জায়গায় বসিয়ে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম মিয়াও তার বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “২০১৯ সাল থেকে প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবেই ঢাবি ছাত্রদলের সঙ্গে প্রকাশ্যে মিটিং-মিছিল করেছি। ক্লাসে না গিয়ে মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের বিপরীতে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়েছি। সে বছরই মধুর ক্যান্টিনে একবার হামলার শিকার হই এবং আহত ভাইদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “২০২০ সালে হল কমিটির জন্য সিভি জমা দিয়েও জুনিয়র হওয়ায় পদবঞ্চিত হয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগানের বিপরীতে যারা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিত, তাদের অনেকের নামও এবারের কমিটিতে এসেছে।”
২০২১ সাল থেকে ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী আবু তালিব অভিযোগ করে বলেন, ‘শেখ মুজিব হলের ৫৪ সদস্যের নতুন কমিটিতে আমার নাম নেই। অথচ ২০২২ সালে ক্যাম্পাসে আসা অনেক জুনিয়র নেতাও পদ পেয়েছেন।’
অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আবেদনপত্র নিয়েছিলাম, যারা যুক্ত হতে চেয়েছে তাদের পদায়ন করা হয়েছে। আবেদনের সময় অনেকে তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে- এ সব বিষয় আমরা আগে জানতাম না। তাই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা
আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রাখার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হলে সেটা ‘বলবৎ’ রাখার কথা বলেছেন ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান। শনিবার (৯ আগস্ট) দিবাগত রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি বলেন, ১৭ জুলাইয়ের ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।
কিউএনবি/অনিমা/৯ আগস্ট ২০২৫/রাত ৯:৩১