বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

হিরোশিমার ৮০ বছর: ইতিহাসের ভয়াল এক সকালের স্মৃতি

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ১১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে জাপানের হিরোশিমা শহরে যুক্তরাষ্ট্র ফেলে ‘লিটল বয়’ নামের একটি পারমাণবিক বোমা। মুহূর্তেই শহরের বড় অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। প্রাণ হারান অন্তত ৬০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ। বছরের শেষে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারে। যারা বেঁচে ফিরেছিলেন, তাদের অনেকেই আজও বহন করছেন সেই দিনের ক্ষত—শুধু শরীরে নয়, মনে ও সমাজে।

ধ্বংসস্তূপে বেঁচে যাওয়া একমাত্র মানুষ

পারমাণবিক বিস্ফোরণের কেন্দ্রবিন্দু (হাইপোসেন্টার) থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই মারা যান। তবে ওই এলাকার একজন বেঁচে যাওয়া মানুষ এখনো জীবিত আছেন—৮৯ বছর বয়সি তসুনেহিরো তোমোদা। হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে, ওই এলাকায় মাত্র ৭৮ জন তখন বেঁচে ছিলেন, যাদের বয়স ছিল ৫ মাস থেকে ৫৪ বছর পর্যন্ত।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যারা বিস্ফোরণের সময় ২০ বছরের কম বয়সী ছিলেন, তাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ পরবর্তীতে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সিদের মধ্যে এই হার ৪২ শতাংশ এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে ক্যানসার আক্রান্তের হার ছিল মাত্র ৬ শতাংশ।

স্মৃতির আগুন এখনো নিভেনি

তৎকালীন ১০ বছর বয়সী ইয়োশিকো নিয়ামা দুই দিন পর শহরে প্রবেশ করেন বাবাকে খুঁজতে। শহর তখনো জ্বলছিল, চারদিকে ছড়িয়ে ছিল লাশ। তার বাবা কাজ করতেন শহরের কেন্দ্রে এক ব্যাংকে, কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিয়ামা বলেন, তিনি দীর্ঘদিন কাউকে কিছু বলেননি। কারণ অনেকেই ভেবেছিলেন, যদি এসব কথা ছড়িয়ে পড়ে তবে বিয়ে বা চাকরি পাওয়া যাবে না। তখন ধারণা ছিল, পারমাণবিক বিস্ফোরণে আক্রান্তদের সন্তানদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

অপমান আর অবহেলার মধ্যে বেঁচে থাকা

হিরোশিমায় সেসময় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার কোরিয়ান ছিলেন, যাদের অনেকেই জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত ছিলেন। তাদেরই একজন শিম জিন-টায়ে। তার পরিবার গোলাবারুদের কারখানায় কাজ করতেন। বিস্ফোরণের পর কোরিয়ানদের দিয়ে লাশ পরিষ্কারের কাজ করানো হতো। স্ট্রেচারে না পেরে ধুলো ঝাড়ার ফালি দিয়ে টেনে এনে স্কুল প্রাঙ্গণে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হতো।

যুদ্ধের পরে শিম দেশে ফিরলেও সমাজ থেকে পেয়েছেন অবহেলা। তার ভাষায়, ‘জাপান দায় নেয়নি, আমেরিকা ক্ষমা চায়নি, আর কোরিয়া আমাদের ভুলে গেছে।’ এখন তিনি কোরিয়ান পারমাণবিক বোমা ভুক্তভোগী সমিতির হ্যাপচন শাখার পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তার মতো আরও অনেক পরিবার এখনো দারিদ্র্য, রোগ ও বৈষম্যের চক্রে আটকে আছে।

হিরোশিমার ঘটনা শুধু অতীতের ইতিহাস নয়, বরং তা এক চলমান বাস্তবতা। যারা বেঁচে ছিলেন, তারা আজও বহন করছেন সেই ভয়াবহ স্মৃতি আর সামাজিক অবহেলার বোঝা। ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও হিরোশিমা আজও মানবসভ্যতার এক ভয়ংকর শিক্ষা হয়ে আছে—যুদ্ধ শেষ হলেও ক্ষত শেষ হয় না।

কিউএনবি/অনিমা/০৬ অগাস্ট ২০২৫/রাত ১১:৪০

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

August 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit