ডেস্ক নিউজ : পবিত্র মাহে রমজানে রোজা রাখা। পূর্ণ ত্রিশটি রোজা পালন করা, সকল মুসলমানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আমল। মহা গ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা বাকারা : ১৮৩)
প্রতি বছর ঘুরে রমজান মাস আসে আমাদেরকে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অনুশীলনের মহান শিক্ষা দিতে। অন্তরে আল্লাহর প্রকৃত ভয়কে জাগ্রত করে গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে শেখায় এই রমজান মাস। এজন্য যাবতীয় ঝগড়া বিবাদ কলহ মারামারি ও অন্যায় অশ্লীলতা এবং গুনাহের কাজ পরিহার করা। সকল ধরনের মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই মাহে রমজানের প্রকৃত শিক্ষা। এভাবেই গুনাহ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে আমাদের প্রকৃত সংযম ও সিয়াম সাধনা।
সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ। সুতরাং, (রোজাদার কখনও) অশ্লীলতা করবে না এবং মূর্খের মতো কোনো কাজ করবে না। যদি কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুবার বলে, আমি রোজা রেখেছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই একজন রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশককের সুগন্ধির চাইতেও উত্তম। (আল্লাহ তায়ালা বলেন,) সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। রোজা আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় হলো দশ গুণ। (সহিহ বুখারি: ১৮৯৪)
এ হাদিস থেকে আমাদের জন্য শিক্ষা হলো, রমজানে সর্বপ্রকারের মন্দ কাজ ত্যাগ করতে হবে। বিশেষশত সর্বপ্রকারের মারামারি ঝগড়া বিবাদ ও গালাগাল থেকে বিরত থাকতে হবে। যাবতীয় অন্যায় অশ্লীল কাজ ত্যাগ করার অনুশীলনের মাধ্যমে তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে। একইভাবে সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল করা বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। (সহিহ বুখারি : ১৯০৩)
উপর্যুক্ত এ হাদিস থেকেও বুঝে যায় যে, রোজাদার ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো, মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা। দেখা গেল, একজন লোক রমজানে রোজা রাখছেন নিয়মিত। কিন্তু তিনি মিথ্যা কথা বলেন। কর্মক্ষেত্রে মিথ্যার আশ্রয় নেন। কিংবা কথা বলার ক্ষেত্রে মিথ্যা বলেন। তো হাদিসের নির্দেশনা মতো এমন ব্যক্তির পানাহার বর্জনে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। তথা এমন রোজার কোনো মূল্য নেই আল্লাহ তায়ালার কাছে।
এজন্য রোজাদার ব্যক্তির জন্য আবশ্যক হলো, তিনি যাবতীয় অন্যায় আচার ব্যবহার ও মন্দ আচরণ ও কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে আল্লাহর ভয়কে অন্তরে জাগরুক রাখবেন। মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকবেন। আর এভাবেই একজন রোজাদার ব্যক্তি প্রকৃত তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জন করতে সক্ষম হবেন। যা তার জন্য (মন্দ আচরণ ও গুনাহ) ত্যাগ ও সংযমের অনুশীলন হবে। আর এভাবেই একজন রোজাদার প্রকৃত গুনাহ বর্জন, সত্যিকার ত্যাগ ও সংযমী হতে পারেন। যা তাকে পূর্ণ মুত্তাকি হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আসুন, রমজান আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নেওয়ার আগেই, এই রমজানই যেন হয় আমাদের ত্যাগ ও সংযমের অনুশীলনে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির মহান লক্ষ্য। আমিন।
লেখক: খতিব, ভবানীপুর মাইজপাড়া হক্কানি জামে মসজিদ, গাজীপুর
কিউএনবি/আয়শা/২৭ মার্চ ২০২৫,/বিকাল ৪:৫৪