বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪০ অপরাহ্ন

কে ফিরিয়ে দেবে সেই সুবর্ণ দিনগুলো?

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৮৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : জেলা জজ আখতারুজ্জামানকে হাসিনা হাইকোর্টের জজ বানিয়ে দেন। কারণ ওই লোক জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ভুয়া অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। মামলা হবার পর থেকেই হাসিনা ও তার চ্যালাচামুন্ডারা তারস্বরে প্রচার করতে থাকেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। আসল ঘটনা কি তাই?

খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের আমলে জিয়াউর রহমানের নামে ‘কিছু একটা করার জন্য’ কুয়েতের আমির বাংলাদেশের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসম মোস্তাফিজুর রহমানের মাধ্যমে কিছু টাকা দেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় সোয়া চার কোটি টাকা। এটা ছিল কুয়েত ফাণ্ডের টাকা থেকে জিয়ার সম্মানে অনুদান। এ টাকা সোনালী ব্যাংকের একটা অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং  সমান দুই ভাগ করে একভাগ বগুড়ায় এবং আরেক ভাগ বাগেরহাটে জিয়াউর রহমানের নামে দুটি এতিমখানা করার জন্য বরাদ্দ করা হয়। দুটি ট্রাস্টও গঠিত হয়। মুস্তাফিজ সাহেব বাগেরহাটে ওই টাকায় এতিমখানা করেন। বগুড়ায় ওই টাকা থেকে এতিমখানার জমি কেনা হয়। তবে এতিমখানার কাজ খুব একটা এগোয়নি। টাকা ব্যাংকেই ছিল। এক পয়সাও তছরূপ হয়নি, বরং বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল।

ওই টাকা বা ট্রাস্টের সঙ্গে খালেদা জিয়া বা প্রধানমন্ত্রী অফিসের কোনো সম্পর্কই ছিল না। ওই টাকা সরকারি টাকাও নয়। ম্যাডাম জিয়ার ছেলেরা ও বগুড়ার আত্মীয়স্বজন ওই পারিবারিক ট্রাস্টে ছিলেন। এক-এগারো জামানায় ওই মামলা তদন্তে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সংশিষ্টতার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তদন্ত কর্মকর্তা কোর্টে সে কথা জানান। কিন্তু হাসিনা ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়াকে জড়িত করতে কতকগুলো ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে তার ফটোকপি আদালতে জমা দেয়। তারা দাবি করে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামের একটি তহবিলে এ টাকা জমা হয়েছিল। অতএব এটা সরকারি টাকা। আসলে এই দাবি ভুয়া ও মিথ্যা। ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে কোনো তহবিল কখনো ছিল না। কুয়েত সরকারও লিখিত চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা সরকারকে নয়, জিয়ার স্মৃতিরক্ষায় কিছু একটা করতে জিয়া পরিবারকে ওই অনুদান দিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত ওই চিঠি বিবেচনায় নিতে অস্বীকার করে।

আদালতে ম্যাডাম জিয়া যে জবানবন্দি দেন তা আমার লেখা। তাতে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ দিয়ে একটি বাক্যে ম্যাডাম প্রশ্ন করেন- ‘দুর্নীতি আমি করেছি?’ আর জজ আখতারুজ্জামান সেই বাক্যটিকে বিকৃত করে রায় দেন, খালেদা জিয়া আদালতে নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি দুর্নীতি করেছেন। বিচার বটে! এই রায় দিয়ে ওই কুলাঙ্গার হাসিনাকে খুশি করে উচ্চ আদালতে পদোন্নতি বাগায়। আর খালেদা জিয়া চরম অবিচারের শিকার হন। নিম্ন আদালতের এই রায়ের সঙ্গে সঙ্গে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সব চেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে কারাগারে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তখনও উচ্চ আদালতে আপিলের অবকাশ আছে। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি তখনও। অথচ জেলখাটা শুরু হয়ে গেল বেগম জিয়ার। তার স্বাভাবিক অধিকার ছিল জামিন পাওয়ার এবং মুক্ত অবস্থায় আপিল মামলা চালাবার। কিন্তু তাকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

বিচার ও রায়ের নামে এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন। সেখানে বিচারক ইনায়েতুর রহিম। দিনাজপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিমের পোলা এই ইনায়েত নিজে ছাত্রলীগের নেতা ছিল। সে সময় সে মার্ডার কেসের আসামি হয়। পরে সে ছিল হাইকোর্ট বারে আওয়ামী অ্যাক্টিভিস্ট। আওয়ামী মনোনয়নে সে হাইকোর্ট বার সমিতির সেক্রেটারি ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হয়। চিফ জাস্টিসের দরোজায় লাথি মারা ও এজলাস ভাঙচুরের সন্ত্রাসী ঘটনায়ও সে নেতৃত্ব দেয়। তাকেই হাসিনা হাইকোর্টের জজ বানায়। আর সে খালেদা জিয়ার আপিল মামলায় তার পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১০ বছরে করে দেয়। এই নজিরবিহীন রায়ের পুরস্কার হিসেবে হাসিনা তাকে প্রমোশন দিয়ে আপিল বিভাগের বিচারক বানিয়ে দেয়।

এসব কীর্তিকলাপ ও অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের ভেতরে কার্যকর কোনো প্রতিবাদ করার সুযোগ ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে ছিল না। তখন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার সংক্রান্ত বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্টে এই অবিচারের ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছিল- ‘খালেদা জিয়াকে নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক চক্রান্তের ছক সাজানো হয়েছে’। ফ্যাসিবাদ কবলিত দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের উথাল-পাথাল ঝঞ্ঝায় ২০২৪ সালের পাঁচ আগস্ট অন্যায়-অবিচারের সেই কালো ইতিহাসের পৃষ্ঠা উলটে গিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত জিয়া অরফানেজ-এর সাজানো মামলার কলুষিত রায়ের বিরুদ্ধে বেগম জিয়ার আপিলের শুনানি করে দিয়েছেন ঐতিহাসিক রায়। বিচারের নামে অবিচারের চক্রান্তের অবসান হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পেয়েছেন মিথ্যা অভিযোগ থেকে। কিন্তু এই মামলার নামে চক্রান্ত করে বেগম জিয়া ও তার দলকে যেভাবে কলঙ্কিত করে, নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রেখে অবাধে ফ্যাসিবাদ কায়েমের মাধ্যমে দেশের যে ক্ষতি করা হয়েছে, মানুষকে যতো নির্যাতন ও অধিকার-বঞ্চিত করা হয়েছে, যত সম্পদ লুট করে পাচার করা হয়েছে কে দেবে তার ক্ষতিপূরণ?

আজ খালেদা জিয়া খালাস পেলেন। কিন্তু জামিনের স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, আপিলের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এবং মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির আগেই নিম্ন আদালতের রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই খালেদা জিয়াকে জেলে ঢুকিয়ে তাকে গুরুতর অসুস্থ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কে দেবে তার ক্ষতিপূরণ? কে ফিরিয়ে দেবে ম্যাডাম জিয়ার অমিত সম্ভাবনার সেই সুবর্ণ  দিনগুলো? এর জন্য হাসিনা, তার আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আনিসুল হক, তার অ্যাটর্নি জেনারেল (বর্তমানে মৃত) মাহবুবে আলমের আদৌ কোনো বিচার হবে কিনা জানি না। আমি জানি না বিচারের নামে মহা অন্যায়কারী আখতারুজ্জামান ও ইনায়েতুর রহিমকে চিফ জাস্টিস, আপিল বিভাগ বা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তলব করে কোনো দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে পারেন কিনা। কিন্তু কিছু তো একটা দৃষ্টান্তমূলক প্রতিকার হওয়া উচিত, যাতে এ দেশে আর কখনো রাষ্ট্রক্ষমতার ইঙ্গিতে লোভের বশে আর কেউ বিচারের নামে কাউকে এভাবে ন্যায়বিচার বঞ্চিত এবং চরম ক্ষতিগ্রস্ত করার সাহস না পায়। 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক, বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেসসচিব। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৫ জানুয়ারী ২০২৫,/সন্ধ্যা ৭:৩৩

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit