মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫০ পূর্বাহ্ন

সহায়তা পেয়েও টাকা দিতে পারছে না দুর্বল ব্যাংক

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫৬ Time View

ডেস্ক নিউজ : অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য-সহায়তা দিচ্ছে। গত এক মাসে দুর্বল সাতটি ব্যাংককে প্রায় ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা ধার দিয়েছে সবল ১০টি ব্যাংক। যদিও তা দুর্বল ব্যাংকগুলোর চাহিদার চেয়ে কম। সহায়তা পেয়েও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না এসব ব্যাংক। কারণ অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে, এমন কয়েকটি ব্যাংক ধার দিতে অনীহা দেখাচ্ছে। তাই যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে, তাদের আরও সহায়তা দিতে অন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা যুগান্তরকে বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে আরও অর্থ সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক যে পদ্ধতিতে সহায়তা করেছে, তা পর্যাপ্ত নয়। তারল্য সহায়তা না বাড়ালে ব্যাংকগুলোর প্রতি গ্রাহকের আস্থা আরও কমে যাবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শাখায় গিয়ে গ্রাহক টাকা পাচ্ছেন না। গ্রাহকদের টাকা দিতে না পেরে হেনস্তা ও মারধরের শিকার হচ্ছেন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই আরও কিভাবে ব্যাংকগুলোর তারল্য পায় সে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে কয়েকটি ব্যাংক ২০-৩০ হাজার টাকার আমানতও ফেরত দিতে পারছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গ্যারান্টিতে দুর্বল ব্যাংক অর্থ সহায়তা নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার ৯৫ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৯২০ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ২৯৫ কোটি টাকা।

দুর্বল এসব ব্যাংককে সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে সোনালী ব্যাংক, যার পরিমাণ ৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সিটি ব্যাংক ১ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা, ঢাকা ব্যাংক ২৫০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২২০ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, তারল্য সংকটে থাকা ৯টি ব্যাংকের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গত দুই মাসে ব্যাংকগুলোর নতুন বোর্ড কতটা পরিস্থিতি উন্নতি করতে পেরেছে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। ব্যাংকগুলোর কোথায় কোথায় সমস্যা রয়েছে, তা জানতে চাওয়া হবে।

জানা যায়, ঋণ জালিয়াতি ও নানা অনিয়মের কারণে দুই বছর ধরে তীব্র তারল্য সংকটে রয়েছে দেশের প্রায় এক ডজন ব্যাংক। এর মধ্যে শেখ হাসিনার আমলে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে ছিল আটটি ব্যাংক। এর বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হয়। তবুও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে এসব ব্যাংক আরও বেশি তারল্য সংকটে পড়লে চলতি হিসাব ঘাটতি রেখেও লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়া হয়।

তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যত ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বন্ধ করে দেন। এতে ব্যাংকগুলোর সঠিক আর্থিক চিত্র বেরিয়ে আসতে শুরু করে। গ্রাহকের টাকা দিতে না পারার মতো ঘটনাও ঘটে। ফলে আওয়ামী লীগের আমলে প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক খাতে দখলকৃত অনেক ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন পর্যন্ত এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটি ব্যাংকসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

চলতি বছরের আগস্ট মাস শেষে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে অন্তত ৯টি ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঘাটতি ১৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এস আলম মুক্ত করা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাত হাজার ২৬৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তিন হাজার ৩৯৪ কোটি টাকার ঘাটতি স্যোশাল ইসলামী ব্যাংকের। দুই হাজার ৩৪২ কোটি টাকার ঘাটতি নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংক।

এছাড়া ইউনিয়ন ব্যাংকের দুই হাজার ২০৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের দুই হাজার ২০১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ৩৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। তাছাড়া পদ্মা ব্যাংকের চলতি হিসাবে ২৩৪ কোটি ৪৮ লাখ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৪ নভেম্বর ২০২৪,/দুপুর ১:০৫

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit