আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছে জাপানের মানবাধিকার সংগঠন নিহন হিদানকায়ো। পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়তে ভূমিকা রাখায় এই পুরস্কার পেয়েছে সংগঠনটি। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির যুক্তরাষ্ট্রের চালানো পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়াদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংস্থা।
নিহন হিদানকায়োর কো-চেয়ার তোশিউকি মিমাকি বলেন, শুক্রবার যখন তিনি শুনলেন যে তাদের সংগঠনকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে, তখন তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তার দুই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে, যখন তার সামনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি অব্যাহত বোমা হামলায় হতাহত রক্তাক্ত শিশুদের ছবি ভেঙে ওঠে।
পুরস্কার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরই জাপানের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে-তে সাক্ষাৎকার দেন ৮২ বছর বয়সি তোশিউকি। সাক্ষাৎকারে পরমাণু অস্ত্রের ভয়াবহতার পাশাপাশি বর্তমান বিশ্বের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। পরমাণু হামলার শিকার জাপানের সঙ্গে গাজা উপত্যকার তুলনা করে তোশিউকি বলেন, ‘গাজায় পিতামাতার কোলে রক্তাক্ত শিশুর ছবি দেখছি। এই দৃশ্য ৮০ বছর আগের জাপানের মতোই।
হিরোশিমা ও নাগাসাকির শিশুরা যুদ্ধে তাদের বাবাদের এবং পরমাণু বোমা হামলায় তাদের মায়েদেরকে হারায়। তারা সব এতিম হয়ে যায়।’আজকের রাজনীতিকদের সমালোচনা করে এই প্রবীণ বলেন, ‘জনগণ শান্তি চাইছে। কিন্তু রাজনীতিবিদরা যুদ্ধের জন্য জিদ করছেন। হুমকি-ধামকি দিয়ে বলছেন, আমরা জয়ী না হওয়া পর্যন্ত থামব না। এটা বর্তমান রাশিয়া ও ইসরাইলের বেলায় অনেকটাই সত্য এবং আমি সর্বদায় ভাবি যে জাতিসংঘের মতো এত বড় শক্তি এটাকে থামাতে পারে কিনা।
প্রবীণ এই মানবাধিকারকর্মী জোর দিয়েই বলেন, পরমাণু অস্ত্র কখনও শান্তি আনতে পারে না। তার কথায়, এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে বিশ্বে শান্তি বজায় রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শুধু সন্ত্রাসীরাই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। যদি রাশিয়া এটা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বা ইসরাইল গাজার বিরুদ্ধে ব্যবহার করে তবে এটা এখানেই থামবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন প্রায় শেষের পথে তখন ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়। তখন তোশিউকি মিমাকির বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। ওই হামলায় জাপানের ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। এর তিনদিন পর (৯ আগস্ট) আরেকটি বোমা নাগাসাকি শহরে আঘাত হানে। সেখানে নিহত হন আরও ৭০ হাজার মানুষ। এর এক সপ্তাহ পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে জাপান।
পরমাণু হামলার ঘটনায় যারা বেঁচে গিয়েছিলেন তারা মিলে ১৯৫৬ সালে নিহন হিদানকায়ো প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটি সেই থেকে গত প্রায় সাত দশক ধরে পারমাণবিক অস্ত্রের সম্পূর্ণ বিলুপ্তির পক্ষে লড়াই করে আসছে। এক বছরেরও বেশি সময় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। গত এক বছরের কয়েক হাজার টন বোমা ফেলেছে দেশটির সামরিক বাহিনী। অবিরাম হামলায় পুরো উপত্যকার কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ। উদ্বাস্তু হয়েছেন ২০ লাখ।
কিউএনবি/আয়শা/১২ অক্টোবর ২০২৪,/রাত ৯:০৫