মাইদুল ইসলাম মুকুল ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী কামাত আঙ্গারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের একদফা দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ওই মাদরাসার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৯সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ বিক্ষোভ কর্মসুচি পালন করে তারা।
জানাযায়, উক্ত মাদরাসার অফিস সহকারি শফিয়ার রহমান ও মাদরাসা সুপার সাইদুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। গত ২৯ আগস্ট মাহমুদুল হাসান নামের এক সাবেক শিক্ষার্থী প্রশাংসা পত্র তুলতে গেলে তার নিকট থেকে অফিস সহকারি শফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মাদরাসার সভাপতি বরাবর কৌশলে একটি দরখাস্ত লেখিয়ে নেন সুপার সাইদুর রহমান।
পরে মাহমুদুল হাসান বিষয়টি তার বন্ধুদের অবগত করলে সুপারের কুমতলবের বিষয় প্রকাশ্যে আসে। এর প্রেক্ষিতে উক্ত দরখাস্ত ফেরত চেয়ে ৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে মাহমুদুল হাসান এর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা মাদরাসার সকল কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। এসময় সুপার সাইদুর রহমান কৌশলে পালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় পরের দিন, ৯ সেপ্টেম্বর, সুপারের বিভিন্ন জাল-জালিয়াতি ও দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে মানব বন্ধনে নামে শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে উক্ত মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, সুপার সাইদুর রহমান আপাত মস্তক একজন দুর্নীতিবাজ। কিছুদিন আগে জালিয়াতির মাধ্যমে অফিস সহকারি শফিয়ার রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে তাকে এবতেদায়ী শিক্ষক পদের শিক্ষক দেখিয়ে উক্ত পদে তার ভাগ্নে খালেদুজ্জামানকে নিয়োগ দেন। দীর্ঘ ২২ বছর যাবত অফিস সহকারি পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ওই পদে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজসে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে অন্য একজনকে নিয়োগ দেয়া একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
গত ২২ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবরে এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী অফিস সহকারি শফিয়ার রহমান। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী দাখিল মাদ্রাসার ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে (এসিও) একটি পদ রয়েছে। ওই পদে ২০০২ সালে শফিয়ার রহমান নিয়োগ পান (ইনডেক্স ২৬৯২৩৩২) এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে উচ্চতর স্কেল প্রাপ্ত হন। উক্ত পদে প্রথম এমপিও কপিতে পদবি ছিলো টাইপিষ্ট কাম ক্লার্ক (সিটি)।
সেই থেকে তিনি ওই পদেই কর্মরত আছেন। পরবর্তীতে সিটি পদটি সংশোধন করে এসিও করা হয় এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তা সংশোধন করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তুু প্রতিষ্ঠান প্রধান সাইদুর রহমান তা সংশোধন না করে গত জানুয়ারি মাসের এমপিও সীটে সফিয়ার রহমানকে এবতেদায়ী জুনিয়র শিক্ষক (ইবি-টি) দেখিয়ে গোপনে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উক্ত পদে (এসিও) মোঃ খালেদুজ্জামানকে নিয়োগ দেন। যার ইনডেক্স (গ০০৫৪১৮০), এবং এমপিও ভুক্তির তারিখ মার্চ, ২০২৪ইং। এ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টি তদন্তের দাবি করে সফিয়ার রহমান বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস বিষয়টি সুরাহা করার চেষ্টা করে ব্যার্থ হন।
সর্বশেষ ছাত্রদের দিয়ে শফিয়ার রহমান এর বিরুদ্ধে দরখাস্ত লেখিয়ে তাকে হেনস্তা করার অপচেষ্টা করে সপার সাইদুর রহমান। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, দুর্নীতিবাজ সুপার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। এবিষয়ে মুঠোফোনে মাদরাসা সুপার সাইদুর রহমান কে ফোন করা হলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মিথ্যা।
তিনি আরও জানান, এবতেদায়ি জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে শফিয়ার এর নিয়োগ ২০০৫ সালে। তবে গত বিশ বছর অফিস সহকারি পদে শফিয়ার রহমান বেতন ভাতা উত্তোলন করলো কিভাবে এবং আগস্ট/২৪, একই ব্যক্তি অফিস সহকারি থেকে এবতাদায়ী জুনিয়র শিক্ষক পদে এমপিএ ভুক্ত হন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উক্ত মাদরাসার সভাপতি গোলাম ফেরদৌস জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীতে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিউএনবি/আয়শা/০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪,/বিকাল ৫:০০