আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি মাসের শুরুতে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওই নারী চিকিৎসককে নির্মমভাবে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় ফুঁসে ওঠে পুরো দেশের মানুষ। ধর্ষণ ও হত্যার বিচারের দাবিতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
‘আমাকে এটা নিশ্চিত করো যেন বাবা সময়মতো ওষুধ খেয়ে নেয়। আর আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করো না’- কথাগুলোই ছিল মৃত্যুর আগে তার মাকে বলা শেষ কথা। এর কয়েক ঘণ্টা পরই তিনি তার কাজের জায়গায় বর্বরতার শিকার হন।
‘পরের দিন, আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু তার ফোন শুধু বেজেই যাচ্ছিল। কেউ রিসিভ করছিল না’- কলকাতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি সরু গলির বাসায় বসে বিবিসিকে বলছিলেন সেই নারী চিকিৎসকের মা।
সেদিন সকালে আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তার অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাতে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সঞ্জয় কর নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়; যে প্রায়েই হাসপাতালে যাতায়াত করত।
এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে সর্বস্তরের মানুষ। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে দেশব্যাপী ধর্মঘট পালন করেন চিকিৎসকরা। শুধুমাত্র বড় হাসপাতালগুলোতে জরুরি সেবা চালু রাখা হয়।
মেয়েকে হারানোর পর চারদিক শূন্য হয়ে গেছে তাদের। বিবিসিকে এ কথা জনান তারা। বাবা বলেন, ৬২ বছর বয়সে এসে আমার সব স্বপ্ন ধূলোয় মিশে গেছে।
তাদের মেয়ের ভয়ংকর হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তাদের বাড়িটি গণমাধ্যমের তদন্তের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। একটি পুলিশ ব্যারিকেডের পেছনে কয়েক ডজন সাংবাদিক এবং ক্যামেরা ক্রু দাঁড়িয়ে থাকছে, বের হলেই তাদের ওপর হামলে পড়া হবে- এমন অনুভূতির কথা বলেন বাবা।
১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ অফিসারের একটি দল স্থায়ীভাবে পাহারায় আছে; যাতে ক্যামেরা দিয়ে ভুক্তভোগীর বাসার ছবি তোলা না হয়।
গত ৯ আগস্ট রাতে কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজের ওই জুনিয়র ডাক্তার যিনি ৩৬ ঘন্টার ডিউটি শেষে বিশ্রাম নিতে সেমিনার রুমে যান, তখন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
‘আমাদের একমাত্র সন্তান, কতটা ভালো ছিল লেখাপড়ায়। একজন ডাক্তার হওয়ার জন্য কতটা কঠোর পরিশ্রম করত সে। আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। নিজেরাই সবকিছু তৈরি করেছি। যখন সে ছোট ছিল তখন আমরা আর্থিকভাবে লড়াই করতাম’- বলেন বাবা, যিনি পেশায় একজন দর্জি।
এমন সময় ছিল যখন মেয়ের প্রিয় ফল ডালিম কেনার মতো টাকাও ছিল না, বাবা বলেন। কিন্তু সে কখনই নিজের জন্য কিছু চাইত না। লোকেরা বলত, ‘তুমি তোমার মেয়েকে ডাক্তার বানাতে পারবে না’। ‘কিন্তু আমার মেয়ে সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছে এবং একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে’- বলেন তিনি।
মা বলেন, তার মেয়ে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ডায়েরি লিখত। সে লিখেছিল, সে তার মেডিকেল ডিগ্রিতে একটি স্বর্ণপদক জিততে চায়। একটি ভাল জীবন যাপন করতে চায় এবং আমাদেরও দেখাশোনাও করতে চায়।
বাবা, যিনি উচ্চ রক্তচাপের রোগী, বলেন, তাদের মেয়ে সবসময় খোঁজ নিত যে তিনি সময়মতো ওষুধ খেয়েছেন কিনা। তারা আজও বিশ্বাস করতে পারেন না কাজের জায়গায় এতটা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে পারে তাদের আদরের মেয়েটা!
(ভারতীয় আইনে ধর্ষণের শিকার ব্যক্তি বা তার পরিবারকে চিহ্নিত করা নিষিদ্ধ হওয়ায় পরিবারের সমস্ত নাম এবং বিবরণ মুছে ফেলা হয়েছে)
সূত্র: বিবিসি
কিউএনবি/আয়শা/২১ অগাস্ট ২০২৪,/রাত ৮:২৮