খোরশেদ আলম বাবুল,শরীয়তপুর প্রতিনিধি : ২৯ বছরের তরুন আল আমীন পরিবারের সাথে সৌদি আরবে থাকতেন। ৪ মাস আগে দেশে ফিরে সাভার বাইপাল এলাকায় বাবার সাথে মুদি দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের মিছিলে যোগ দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। এরপর থেকে পরিবারের কাছে তার কোন সন্ধান ছিল না। গতকাল শনিবার শহীদ সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে তার লাশ খুজে পান পরিবারের সদস্যরা।শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের দক্ষিন মগর গ্রামের ইসমাইল মীরমালত ও জিয়াসমিন বেগম দম্পতির ছেলে আল আমিন। সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা-বাবা।
রোববার আল আমীনের লাশ নিয়ে যৌক্তিক আহবান নামের শরীয়তপুরের একটি সংগঠন শরীয়তপুর জেলা শহরে আসেন। তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে আল আমীনকে শহীদের মর্যাদা দেয়া, তাকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন করা ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরন দেয়ার দাবী জানান।আল আমীনের পরিবার জানান, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের দক্ষিন মগর গ্রামের ইসমাইল মীরমালত স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবে থাকতেন। আল আমীন তাদের বড় ছেলে। ১ বছর সপরিবারে দেশে ফিরে আসে। বাবার সাথে সাভার বাইপাল এলাকায় একটি মুদি দোকান খোলেন।
৫ আগস্ট সরকার পতনের মিছিলে যোগ দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন আল আমীন। এরপর আর বাসায় ফিরে যাননি। মিছিলে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শহীদ সোহওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ৬ আগস্ট মারা যান। পরিবারের সদস্যদের খুঁজে না পাওয়ায় অজ্ঞাত পরিচয়ের লাশ হিসেবে শহীদ সোহওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে রাখা হয় আল আমীনের লাশ। কিন্তু গত ১২ দিনে কোথায় তার সন্ধান মেলেনি।
গত শুক্রবার একটি সংবাদ মাধ্যমের সংবাদ দেখে আল আমীনের ছোট বোন আফলান সিনথিয়া ছুটে যান শহীদ সোহওয়ার্দী হাসপাতালে। শনিবার দুপুরে হাসপাতালের মর্গে আল আমীনকে সনাক্ত করেন বোন সিনথিয়া। এরপর রাতে তার মরদেহ নিয়ে বাড়ি পৌঁছান।এরপর যৌক্তিক আহবান নামের শরীয়তপুরের একটি সংগঠনের কর্মিরা আল আমীনের লাশ নিয়ে আসেন জেলা শহরে। রাত ৩টার দিকে লাশ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজে রাখা হয়। খবর পেয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ ও পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম হাসপাতালে ছুটে যান।
রোববার বেলা ১১টার দিকে ওই সংগঠনের কর্মিরা আল আমীনের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জরো হন। তারা সেখানে আল আমীনকে শহীদের মর্যাদা দেয়া, তাকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদায় দাফন করা ও তার পরিবারকে ক্ষতিপূরন দেয়ার দাবী জানান। পরে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার তাদের নিয়ে সভা করেন। সভায় সীদ্ধান্ত হয় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে লাশের দাফন হবে।
আল আমীনের বোন আফলান সিনথিয়া বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে সৌদি আরবে থাকি। দেশের রাজনীতি আমরা বুঝি না। আমার ভাই সেই নোংরা রাজনীতিতে পরে জীবন হারালো। বাবা-মায়ের ইচ্ছে ছিল ডিসেম্বরে ওকে বিয়ে দেয়ার। সেই আশা আর পুরন হলো না। আমরা ভাইকে হারিয়েছি। এটা কিছুতেই পোসাবে না। আমরা চাই তাকে যেন শহীদের মর্যাদা দেয়া হয়। এ কারণে তার লাশ নিয়ে প্রশাসনের কাছে এসেছি।আল আমীনের বাবা ইসমাইল মীরমালত বলেন, আমরা পরিশ্রম করে জীবন ধারন করছিলাম। কেন আমাদের ওপর এমন বিপর্যয় নেমে আসলো? ছেলের লাশটা ১২দিন বেওয়ারিশ হয়ে হাসপাতালের মর্গে পরেছিল। পিতা হিসেবে এই যন্ত্রনা কি তা আমি কাউকে বুঝাতে পারবনা। আমি ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে চাইবো?
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম বলেন, ছেলেটির মৃত্যুর ঘটনায় আমরাও ব্যথিত। ওর পরিবার ও একটি সংগঠনের কিছু দাবী তুলে ধরা হয়েছে। আইনের মধ্যে থেকে যা করা যায় আমরা সেই গুলো বাস্তবায়ন করার সীদ্ধান্ত নিয়েছি। আর ওই পরিবারটির পাশে স্থানীয় প্রশাসন ও আমরা সবসময় থাকব।
কিউএনবি/অনিমা/১৮ অগাস্ট ২০২৪,/রাত ৮:১৬