সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন

শাহীন চাকলাদারের হোটেলে আগুন, নিহত বেড়ে ২৪

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ৬০ Time View

ডেস্ক নিউজ : যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাহীন চাকলাদারের মালিকানাধীন পাঁচতারকা হোটেল ‘জাবির ইন্টারন্যাশনালে’ অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ জন। নিহতদের মধ্যে একজন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। নিহতরা সবাই পুরুষ। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৪০ বছর মধ্যে।

সোমবার বিকালে বিজয় মিছিলে বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর করতে যায়। প্রায় দুই শতাধিক আন্দোলনকারীরা হোটেলটির বেজমেন্টে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে ১৪ তলা পর্যন্ত উঠে যায়। একপর্যায়ে নিচে থাকা বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন যুবক পেট্রল দিয়ে আগুন দিতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা কয়েকটি তলাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এতে দাউ দাউ করে পুরো ১৪ তলা কয়েক মিনিটের মধ্যে জ্বলতে থাকে। এতে উপরে থাকা বেশির ভাগ আন্দোলনকারীরা বের হতে পারেনি। ফলে আগুনের ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আটকে থেকে তারা মারা গেছে। হোটেলের ভিতর প্রবেশ করা আন্দোলনকারী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। যশোর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আর দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২১ জনের লাশ পেয়েছি। আহত ২৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আগামীকাল সকাল ৮টায় আবার মৃতের সংখ্যা আপডেট জানানো হবে। জানা যায়, সোমবার বিকালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের পর হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিজয় মিছিলে থাকা বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিন বিকাল ৪টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে সাড়ে ৯টার দিকে। এই ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩ জন।

যশোর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ও আহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে আছে হাসপাতাল চত্বর। আন্দোলনে এসে অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। ফলে সেই নিখোঁজদের স্বজনেরা হাসপাতাল ও মর্গের সামনে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ বা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীদের অনেকেই এখন হাসপাতালে থাকতে দেখা গেছে। তারা মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর, হোটেল থেকে মরদেহ হাসপাতালে আনার সড়ক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।

সবাই হাতেই বাঁশ, রড ও দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। মরদেহ শনাক্ত হলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন নিহতের স্বজনরা। মর্গের সামনে আহাজারি করতে দেখা যায় খড়কি এলাকার এক নারী (৪৫)। হোটেলে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছে তার ভাইপো রাতুল (১৭)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই নারী বলেন, আমার কলেজ পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে আমিও আন্দোলনে এসেছিলাম। পরে বিকালে বিজয় মিছিলটি জাবির হোটেলের সামনে দিকে যেতেই অনেক ছেলে-মেয়েরা হোটেলের মধ্যে প্রবেশ করে। আন্দোলনকারীদের ওই স্রোতের মধ্যে দিয়ে আমার মেয়েও ঢুকে যায়। পরে আগুন লাগলে আমার মেয়েরে খুঁজতে আমিও ভিতরে প্রবেশ করি। প্রবেশ করে দেখি হোটেলে কয়েক যুবকরা পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। তাদের অনুরোধ করলাম এই ক্ষতি করিস নে বাপ! এর পরে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে হোটেল। পরে আহত অবস্থায় আমার মেয়েকে উদ্ধার করি। পরে শুনি আমার ভাইপো মারা গেছে।

যশোর সিটি কলেজ থেকে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও হোটেলে প্রবেশ করা মারুফ হোসেন বলেন, আমাদের আন্দোলনে কিছু উগ্র ছেলেরা ছিল। বিজয় মিছিলে তারা জাবির হোটেলে ঢুকে পরে। তাদের সঙ্গে অনেক সাধারণ আন্দোলনকারীরাও ঢুকে পরে। তারা জাবির হোটেলে মূলত দেখতে গেছিল। সিঁড়িতে উঠতে উঠতে তারা হোটেলের বিভিন্ন তলাতে উঠে যায়। এদিকে ওদের সঙ্গে থাকা উগ্র ছেলেরা আগুন ধরায়ে দেয় বিভিন্ন তলাতে। তাদের বলতে শুনা যায়, আওয়ামী লীগের শাহীন চাকলাদার অনেক নেতাদের নির্যাতন করেছে, আওয়ামী লীগের শেষ নিশানা মুছে দিতে হবে। সমস্ত হোটেলে আগুন ছড়িয়ে পড়াতে অনেকেই আটকে পড়ে বিভিন্ন তলাতে।

তিনি বলেন, হোটেলে বার থাকাতে বারের অ্যালকোহল কারণে আগুন বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। মূল শিক্ষার্থীরা এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। বিভিন্ন রাজনীতিক ছত্রছায়াতে থাকা উগ্র ব্যক্তিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য। শহরতলী সুজলপুরের মফিজুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার আল আমিনকে কেউ দেখেছেন। সে রাজ্জাক কলেজে পড়ে। কেন যে সে আন্দোলনে এসেছিল। বিকাল থেকে তার ফোনে ফোন দিচ্ছি, রিং যাচ্ছে অথচ ফোন ধরছে না। তার বন্ধুরা বলছে, আলামিনও জাবিরে উঠেছিল। সে এখন কোথায়। আল্লাহ আলামিনকে বাঁচিয়ে দাও। এদিকে শাহীন চাকলাদারের কাঁঠালতলা এলাকার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শহরের চারখাম্বা মোড়ে অবস্থিত শেখ রাসেলের ভাস্কর্যও ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৬ অগাস্ট ২০২৪,/সন্ধ্যা ৭:০৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit