এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় নিত্যপণ্যের দামে আগুন মধ্যবিত্তদেরও সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে প্রতিটি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, মসলা, শাক সবজিসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছেই চলছে। কাঁচা মরিচ ২৫০ কেজি, প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি ৮০/৮৫ টাকা। মাছ-মাংসে হাত দেয়ার উপায় নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলছে আলু, বেগুন, কলা, ঝিঙে ঢেরস-সহ সবজির দাম দিগুন বেড়ে গেছে। ফলে মধ্যবিত্ত ভোক্তাদের জন্যও বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।যাদের সংসার দুবেলা আলুভর্তা ও ডাল খেয়ে কোনোভাবে চলত। তারাও এখন নিরুপায়। বাড়তি চাল-ডালের দামের কারণে ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ পরিবার। মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে।রোববার (২৩ জুন) দেশের সীমান্তবর্তী চৌগাছা, পুড়াপাড়া, ধুলিয়ানী, চাঁদপাড়া, হাকিমপুর ও পাশাপোলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দিন প্রতি খাচি (৩০টি) ডিম বিক্রি হয়েছে ৩৮০ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে ১টি ডিম ১৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও কিছুটা কম ছিলো। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০/৮৫ টাকা। যা ২/১ দিন আগে ৬০/৭০ টাকা ছিল। রসুন প্রতিকেজি বিক্রি হচেছ ২২০। যা ১ সপ্তাহ আগেও ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি আদা বিক্রি হচেছ ৪০০-৫০০ টাকা। যা আগে ৩০০ টাকা ছিল। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচেছ ২৩০ টাকা। প্রতি কেজি আলু এখন ৬০-৬৫ টাকা। বেড়েছে সব ধরনের সবজির দামও।উপজেলা সদরে বাজার করতে আসা আব্দুল মান্নান, আক্কাচ আলী, অধ্যাপক আব্দুল খালেক ও রবিউল ইসলাম বলেন, মাসে যে টাকা ইনকাম হয়, স্ত্রী ছেলে মেয়ে ও পরিবার নিয়ে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাদের খাবার জোগাড় করতে মাসে ৫০ কেজির এক বস্তা চাল সাড়ে ৪ হাজার টাকা। ৫ লিটার তেল ৮৫০/৯০০টাকা। সবজি,মাছ, ব্রয়লার মুরগিসহ তরকারি রান্নার উপকরণ কিনতে ৫ হাজার। গ্যাস সিলিন্ডার বা কাঠ ২ হাজার, সাবান-ডিটারজেন্টও ৫শত, মুদি বাজার আরও ২ হাজার। বিদ্যুৎ বিল কমপক্ষে ১০০০ এবং মোবাইল টকটাইমে খরচহয় ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে যে টাকা খরচ হয় তা আয় করা এখন কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এছাড়া ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা, চিকিৎসা, যাতায়াত খরচ তো আছেই। ফলে নিত্যপণ্যের যেভাবে দাম বাড়ছে আর যে টাকা আয় করছি, তা দিয়ে এখন আমাদের সব খরচ বহন করতে হিমসিম খাচিছ। ক্রমাগত একটু একটু করে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ছি। বেঁচে থাকতে প্রয়োজনীয় খাবার রান্না ছাড়া কোনো ধরনের ভালোমন্দ খাবার জুটছে না। এমন পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করতেই খুব কষ্ট হচ্ছে । চৌগাছা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা ভ্যান চালক শামছুল আলম বলেন, বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। বিভিন্ন অজুহাত ও ভোক্তাকে জিম্মি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচেছন। দেখার যেন কেউ নেই। পরিস্থিতি এমন-ব্যয়ের সঙ্গে আয় না বাড়ায় দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই পণ্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে।ভোক্তরা জানান, আয় না বাড়ায় ক্রেতার বাড়তি দরে পণ্য কেনা এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্যকিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচেছ। পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সরকার যথেষ্টভাবে চেষ্টা করছেন। তাদের দাবি-বিশ্বে পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি অনেক চড়া। এদিকে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন। সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়তি রেখে ভোক্তাদের পকেট কাটছেন। অনেক সময় একই সিন্ডিকেট চক্র বারবার ভোক্তার পকেট কাটলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। তাই বাজার মনিটরিংয়ের এদিকে নজর দিতে জোর দাবী তাদের।চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা শাহা বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার ঠিক রাখতেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং করা হয়। তবে অসাধু পন্থায় কেউ পণ্যের দাম বাড়ালে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কিউএনবি/অনিমা/২৩ জুন ২০২৪,/দুপুর ২:৩১