মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

হুন্ডি ও সোনা চোরাচালানের টাকার ভাগ নিয়ে ‘দ্বন্দ্বে খুন’ এমপি আজিম

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪
  • ১০৪ Time View

ডেস্ক নিউজ : ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে ভারতের মাটিতে হত্যার মাস্টারমাইন্ড হিসাবে তারই বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার আক্তারুজ্জামান শাহীনের নাম মুখে মুখে। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব ও অবৈধ সোনার ব্যবসা ছিল। এই ব্যবসার ভাগ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল।মুলত এই দ্বন্দ্বের জেরে আজিমকে দুনিয়া থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন শাহীন।স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্য জানা্ গেছে।

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ভাই শাহীন যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও মাঝে মাঝেই আসতেন এলাকায়। তার ছিল ব্যাপক ক্ষমতার দাপট। ভাইকে কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র পদে বিজয়ী করার নেপথ্যে শাহীনের কালো টাকা ও অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ ছিল। ভাই মেয়র হলেও শাহীনের ইশারায় চলত কোটচাঁদপুর পৌরসভা। 

শাহীন উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামে তিনি গড়ে তোলেন বিলাসবহুল বিশাল বাগানবাড়ি। যেখানে যাতায়াত ছিল শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তাদের। এখানে বসেই শাহীন চালাতেন আন্ডারওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম। এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে শাহীনের নাম উঠে আসায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী তার বাল্যবন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার শাহীন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও দেশে যাতায়াত ছিল নিয়মিত। দুই যুগের বেশি সময় ধরে অবৈধ হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানে আক্তারুজ্জামান শাহীন ও আনোয়ারুল আজিম আনারের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। সম্প্রতি তাদের মধ্যে অবৈধ স্বর্ণ চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়। সেই দ্বন্দ্বের জেরে বেয়াই আমানুল্লাহ সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়াকে নিয়ে শাহীন কলকাতায় এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই ভারতে যান আনার। 

আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন শাহীন ও আমানুল্লাহ। কলকাতার ব্যারাকপুরের যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়, সেটি শাহীনের নামেই ভাড়া নেওয়া ছিল। মিশন সফল করার পর শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশে ফিরে গ্রেফতার হয়েছেন তার বেয়াই ও চরমপন্থি নেতা খুলনার ফুলতলা এলাকার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,শাহীন কোটচাঁদপুরের এলাঙ্গী গ্রামের বাড়িতে ২৫ বিঘা জমির ওপর গড়েছেন বিশাল বাগানবাড়ি। এই বাড়িতে রয়েছে মিনি গলফ মাঠ, সুইমিংপুল, ৩টি শেফার্ড জাতের কুকুর, ৭টি গাভি, ১০-১২টি ছাগল। এই বাগান বাড়িতে রয়েছে প্রাচীন বাড়ির নকশায় ইট-পাথরে নির্মিত ডুপ্লেক্স ভবন। বাড়ির চারপাশ কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। সেখানে যাতায়াত ছিল উচ্চপদস্থ রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের। শাহীন তার অতিথিদের মনোরঞ্জনের জন্য রেখেছিলেন বিলাসবহুল ব্যবস্থা। রাতের বেলায় কাঁটাতারের চারপাশে আলো জ্বলে। ভেতরে কী হয় স্থানীয়রা কেউ জানতে পারে না। 

রাতে বিভিন্ন ব্রান্ডের দামি দামি গাড়ি আসত। সেই গাড়িতে নারীদেরও দেখেছেন অনেকে। দেশে এলে শাহীন এই বাগানবাড়িতে বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন তার আন্ডারওয়ার্ল্ড। এলাঙ্গী গ্রামের মোজাফফর নামের এক ব্যক্তি বলেন, দিনের বেলা বেশি গাড়ি ওই বাংলোতে প্রবেশ করে না। রাত ১০টার পর দামি দামি গাড়ি প্রবেশ করে। 

অনেক গাড়িতে তিনি নারী থাকতে দেখেছেন। ভেতরে হাঁটাহাঁটি করতেও দেখেছেন। এমপি আনারের এক বাল্যবন্ধু গোলাম রসুল বলেন, আনার ও শাহীনের মধ্যে প্রায় ৩০ বছরের সম্পর্ক। তাকে নিয়ে এমপি আনার দুবার এই বাংলোতে গিয়েছেন বলে তিনি জানান। এদিকে, শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য থাকায় কেউ শাহীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায়নি। কোটচাঁদপুর থানায় তার নামে নেই কোনো মামলা। 

এ বিষয়ে কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন বলেন, আক্তারুজ্জামান শাহীন আমেরিকার পাসপোর্টধারী। তিনি এলাকায় খুবই কম আসতেন। তার বিরুদ্ধে কোটচাঁদপুর থানায় কোনো মামলা নেই। 

স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ বছরে অগাধ সম্পদের মালিক বনে যান শাহীন। এলাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। কোটচাঁদপুর শহরে একাধিক মার্কেট, বাড়ি ও রিসোর্ট তৈরি করেছেন। তার বৈধ আয়ের উৎস সম্পর্কে এলাকাবাসী অন্ধকারে। 

তাদের ধারণা স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালানের মাধ্যমে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন শাহীন। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও ক্ষমতার দাপট ছিল প্রচণ্ড। প্রচুর অবৈধ টাকা উড়িয়েছেন নিজের ক্ষমতার দাপট ধরে রাখতে। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনে আপন ভাইকে মেয়র পদে বসাতে ক্ষমতার দাপট ও কালো টাকার যথেচ্ছ ব্যবহার করেছেন। শহিদুজ্জামান সেলিম মেয়র পদে বসলেও নেপথ্যের ক্রীড়নক ছিলেন শাহীন। 

কোটচাঁদপুর এলাকায় গড়ে তুলেছেন নিজস্ব বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা কোটচাঁদপুরে হাটবাজার ও মার্কেট দখল, মোড়ে মোড়ে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত ছিল। শাহীনের ক্ষমতার দাপটের কাছে তটস্থ ছিলেন এলাকাবাসী। তার অত্যাচারের প্রতিবাদ করার সাহস পাননি কেউ। হত্যা, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও স্বর্ণ চোরাচালানের নেপথ্যের কারিগর হলেও সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান শাহীন। 

রাজনীতির ময়দানে ভাই সেলিমকে সামনে রেখেছেন। আর নেপথ্যে থেকে চালিয়ে গেছেন নিজস্ব সাম্রাজ্য। অপরাধ জগতের দাপটশালী এই ব্যক্তি সব সময় থেকে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আনোয়ারুল আজিম হত্যাকাণ্ডে শাহীনের সম্পৃক্ততার খবরের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন নির্যাতিত অনেকেই। তবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছেন না শাহীনের আত্মীয়স্বজনরা। 

এ বিষয়ে শাহীনের ভাই কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, পত্রপত্রিকা ও টিভি মিডিয়ায় দেখছি এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে আমার ভাই শাহীন জড়িত বলে তথ্য উঠে এসেছে। এটা তদন্ত হোক। তদন্তে যদি তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলে তবে শাস্তি হবে। আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না আমার ভাই শাহীন এই কাজে জড়িত। তদন্তে সত্যতা মিললে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। 

প্রসঙ্গত, ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে কলকাতার দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউনে রহস্যজনকভাবে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। স্নায়ুরোগের চিকিৎসা নিতে তিনি ১২ মে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কিন্তু পরদিন থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। মূলত সেদিনই (১৩ মে) তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে বুধবার। ওইদিনই রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় ভারতের একটি তদন্তদল ঢাকায় পৌঁছে। 
 

কিউএনবি/অনিমা/২৪ মে ২০২৪,/বিকাল ৪:৪৬

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit