স্বাস্থ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ধরলে দেখা যাবে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজই বেশি হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন স্থূলতা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব, ব্যায়াম না করা।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিভার রোগের সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে একটি। এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমা হয়।যারা স্থূলতা এবং টাইপ২ ডায়াবেটিসে ভুগছে তাদের জন্য এটি বিপদ সংকেত।
নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ দুই ধরনের হয়- একটি হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (এনএএফএল), যেখানে প্রদাহ ছাড়াই লিভারে চর্বি জমা হয়, যদিও লিভারের বৃদ্ধি ব্যথার কারণ হতে পারে।
আরেকটি হলো, নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (এনএএসএইচ) প্রদাহের সাথে থাকে এবং চিকিত্সা না করা হলে সিরোসিস হতে পারে।একটি সুস্থ শরীরে, লিভার টক্সিন অপসারণ করে এবং পিত্ত তৈরি করে, একটি সবুজ-হলুদ তরল যা চর্বিকে ফ্যাটি অ্যাসিডে ভেঙে দেয় যাতে তারা হজম হতে পারে।
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ লিভারের ক্ষতি করে এবং এটিকে যেমন কাজ করা উচিত তেমন কাজ করতে বাধা দেয়, তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলো এটিকে খারাপ হওয়া থেকে আটকাতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ফ্যাটি লিভারের আসলে কোনো চিকিৎসা নেই, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম ডায়েট, এক কথাই নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে। তাহলে জেনে নেয়া যাক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীরা খাবার তালিকায় কী কী রাখবেন-
১. কফি: কফি অস্বাভাবিক লিভারের এনজাইম কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ১ কাপ কফি আপনার লিভারকে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনথেকে জানা গেছে, যারা নিয়মিত কফি খান তাদের এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কম।
২. সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক এবং অন্যান্য শাক-সবজিতে পাওয়া যৌগগুলি ফ্যাটি লিভার রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা বলছে,পালং শাক খাওয়া বিশেষভাবে এনএএফএলডির ঝুঁকি কমিয়ে দেয়, এর সবুজ পাতায় নাইট্রেট এবং স্বতন্ত্র পলিফেনলের কারণে।
৩. মটরশুটি এবং সয়া: মটরশুটি এবং সয়া উভয়ই এনএএফএলডির ঝুঁকি কমানোর প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে। ডায়েট এবং লিভারের রোগের স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন এবং মটরশুঁটি শুধুমাত্র পুষ্টির দিক থেকে শুধু ভালো উৎস তা নয় এগুলোতে প্রতিরোধী স্টার্চও রয়েছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। এমনকি স্থূলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তের গ্লুকোজ এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪ টোফু: এটি একটি কম চর্বিযুক্ত খাবার যা প্রোটিনের একটি ভাল উৎস হিসেবে কাজ করে, যদি আপনি আপনার চর্বি ব্যবহার সীমিত করার চেষ্টা করেন তবে এটি একটি আদর্শ খাবার।
৫. মাছ: ফ্যাটি মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, টুনা এবং ট্রাউটে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে এই মাছগুলোতে। তাই প্রতিদিন এসব মাছ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬. ওটমিল: পুরো শস্য, ওটমিলের মতো ফাইবার-সমৃদ্ধ খাবার এনএএফএলডি-সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
যে খাবার খেতে মানা-
১. চিনি: ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু কিন্তু চিনি বা শর্করা, ফ্যাট নয়। সাদা চিনি এবং চিনিযুক্ত যেকোনো খাবার, ডেজার্ট, জুস বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়তি চিনিই ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে যকৃতে জমা হয়।
২. অ্যালকোহল: এই রোগে আক্রান্তদের অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকতে হবে। অ্যালকোহল পান করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সচেতন থাকুন।
৩.ভাজাপোড়া খাবার: উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা যেকোনো খাবার এড়িয়ে চলুন। চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, যেকোনো ফাস্ট ফুড আপনার জন্য নিষেধ।
৪. লবণ: দৈনিক ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি লবণ খাওয়া যাবে না। এর মানে রান্নায় যে লবণ ব্যবহৃত হয় এর বাইরে যেকোনো লবণ, লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার নিষেধ।
৫. রিফাইন গ্রেইন: ময়দার তৈরি পাউরুটি ও পরোটা, নান, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি যকৃতে চর্বি বাড়াবে। এর পরিবর্তে বেছে নিন লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড বা লাল চাল, তা-ও পরিমিত পরিমাণে।
৬. রেড মিট: রেড মিট, যেমন গরু বা খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মাসে এক বা দুই দিন দু-তিন টুকরা চর্বি ছাড়ানো মাংস খেতে পারেন। এর সম্পৃক্ত চর্বি আপনার জন্য ক্ষতিকর।
সূত্র: হেলথ লাইন ও মেডিকেল নিউজ টুডে
কিউএনবি/আয়শা/১৯ মে ২০২৪,/বিকাল ৩:৫১