লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : কোনো পুরুষ বা নারীর একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর বিষয়টি এখন এই উপমহাদেশে এমনকি মোটামুটি রক্ষণশীল প্রায় সব দেশেই বাড়ছে। ভাঙছে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক, বাড়ছে ডিভোর্সের সংখ্যাও। আধুনিক সময়ে মানুষের এই বহুগামিতার জন্য কেউ কেউ হরমোনের প্রভাবকে দায়ী করেন। কিন্তু এটা কী সত্যি?
এর জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ভারতের ফর্টিস হাসপাতালের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. সত্যম চক্রবর্তী। তার ব্যাখ্যা উঠে এসেছে ভারতের সংবাদপ্রতিদিনের অনলাইনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুগামিতা বা পলিগ্যামি নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন, কৌতুহল। কেউ কেউ ভাবেন যে নারীরা সুন্দর তারা প্রেম বেশি করেন রূপের কারণে। তারা একের বেশি সঙ্গীকে আকর্ষণ করেন। আবার যে পুরুষরা বলিষ্ঠ, পৌরুষ সম্পন্ন তারাও একইভাবে অনেক নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান। নারীর বহুগামিতার জন্য ইস্ট্রোজেন, ইস্ট্রাডিয়ল এবং পুরুষের বহুগামিতার জন্য টেস্টোস্টেরন হরমোনই দায়ী? কেন তারা এমন করে? সাধারণের তুলনায় বহুগামি নারী-পুরুষদের এই হরমোনগুলোর ক্ষরণ বেশি হয়, তাই? আসল সত্যিটা কী?
এর উত্তরে শুরুতেই ভারতীয় ও চিকিৎসক বলেন, ‘না। একাধিক পুরুষ কিংবা নারীতে আকৃষ্ট হওয়ার নেপথ্যে হরমোনের কম-বেশিটা কোনও ‘ফ্যাক্টর’ই নয়। পুরোটাই মানসিক।’
প্রতিবেদনে তিনি ব্যাখ্যা করে জানান, মনোগোমাস হোক বা পলিগোমাস, ‘ফিমেল সেক্সুয়াল ডিজায়ার’তথা মেয়েদের যৌন আকাঙ্ক্ষায় হরমোনের ভূমিকা ঠিক কী? সেটা আগে বুঝতে হবে। ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরনের হার স্বাভাবিক আছে মানে তাদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ও স্বাভাবিক আছে বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু নারীদের ইস্ট্রোজেনের হার স্বাভাবিক আছে মানেই যে তাদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ স্বাভাবিক থাকবে, এটা কোথাও লেখা নেই। বরং বদলে ইস্ট্রোজেনের কোনও ভূমিকাই নেই যৌন আকাঙ্ক্ষা উদ্রেক করার ভূমিকায়। একটা বাচ্চা মেয়ের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেনের ভূমিকা হল ‘ডেভলপমেন্ট অফ আ ফিমেল সাইকি’ এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন গঠন-সহ নারীত্বের বহিঃপ্রকাশ। বয়োঃসন্ধিকালে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ একটি মেয়ের মধ্যে যৌনতার বিকাশ ঘটানো শুরু করে। আবার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় এই হরমোনের ক্ষরণ মেয়েদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। আরও একটু বয়স বাড়লে, এটি মেয়েদের মধ্যে মাতৃত্বের ভাবনা তৈরি করে। কিন্তু ইস্ট্রোজেন কখনও তার মধ্যে একের বেশি সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য আকর্ষণের জন্ম দেয় না।
এমনটা পুরুষের বেলাতেও একই। একটা হরমোনের প্রসঙ্গ টেনে কখনও বলা যায় না, কোনো নারী অথবা পুরুষ ‘পলিগ্যামি’তে জড়াবেন বা তাদের জীবনে একাধিক নারী-পুরুষ আসবেন। আর এ রকম কোনও বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা বা গবেষণাজনিত প্রমাণও নেই।
অনেক সময় নারীদের পিট্যুইটারি টিউমার ধরা পড়ে। ফলে গোটা পিট্যুইটারি গ্ল্যান্ড-টাই অস্ত্রপোচার করে ফেলে দিতে হয়। তখন তাদের ‘সেক্সুয়াল ডিজায়ার’ কমে যায়। তার মানে যদি সেই নারীদের তখন ইস্ট্রোজেন দেওয়া হয়, তাহলেই তাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠবে? উত্তর, না। পিট্যুইটারি টিউমার সার্জারির পর ইস্ট্রোজেন মহিলাদের দেওয়া হয় তাদের হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখার জন্য। তাদের ‘ফিমেল লিবিডো’ বা যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য নয়। পুরোটাই আসলে মানসিকতার ব্যাপার। মনে রাখতে হবে, নারীর যৌনাকাঙ্ক্ষায় হরমোনের ভূমিকা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। কিন্তু একইসঙ্গে ‘সাইকিক ইনফ্লুয়েন্স’ অর্থাৎ মানসিক ভূমিকা অনেক বেশি, ৬০-৭০ শতাংশ।
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ প্রাকৃতিকভাবে এমনিতেই পলিগ্যামিক বা বহুগামি। যদিও মানুষ চাইলেই বহুগামি হতে পারে না কারণ সামাজিক চাপের কারণে। সমাজ কী বলবে, সেই ভয় কাজ করে তার মনে। এই ভয় বা সংরক্ষণশীল মনোভাব যাদের মধ্যে আছে, তারাই ‘মনোগ্যামি’বা একক সম্পর্কে আবদ্ধ। আর এদের সংখ্যাই বেশি। তুলনায় অনেক স্বাধীন ভাবনাচিন্তার মানুষও আছেন, তারা সমাজের এই বাঁধাধরা নিয়মে, রীতিতে বিশ্বাস রাখেন না, তারা বহু সম্পর্কে নির্দ্বিধায় জড়ান। তারা যথার্থ অর্থেই ব্যতিক্রমী। আবার কিছু কিছু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মধ্যেও ‘পলিগ্যামাস’ প্রবৃত্তি দেখা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজে ‘পলিগ্যামাস’রা সংখ্যায় নগণ্য।
কিউএনবি/অনিমা/০৪ জানুয়ারী ২০২৪,/রাত ১০:০৬