আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনে যুদ্ধের পাশাপাশি ইসরাইল সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশের পথও বন্ধ করে দিয়েছে। যেখানে গাজার বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ এই ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। এতে খাবার, পানি ও জ্বালানি সংকটে গাজাবাসীর জীবন অচল হয়ে পড়েছে। প্রায় ২৩ লাখ বিাসিন্দা কার্যত অনাহারে রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ইসরাইল-ফিলিস্তিন বিষয়ক পরিচালক ওমর সাকির। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) এক্স-এ এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘দুই মাসেরও বেশি সময় যাবৎ ইসরাইল সেনারা ইচ্ছাকৃতভাবে বেকারি, কারখানা, আবাদি জমি, পানির লাইন ধ্বংস করে বেঁচে থাকার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। যা একটি ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধ।’
আন্তর্জাতিক আইনেও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজাবাসীকে অনাহারে রাখার নীতি যুদ্ধাপরাধের মধ্যে পড়ে। এমনকি এ ধরণের যুদ্ধাপরাধের জন্য হামলাকারীর স্বীকারোক্তির প্রয়োজন হয় না। বরং সামরিক অভিযানের সামগ্রিক পরিস্থিতি থেকেও অনুমান করা যেতে পারে।
ফিলিস্তিনের গাজায় টানা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। হামাসকে নির্মূল করার কথা বললেও মূলত বেসামরিক নাগরিক ও তাদের ঘরবাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ফেলা হচ্ছে। হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল, মসজিদ এমনকি শরনার্থী শিবিরও। অবিরাম হামলার শিকার হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৯ হাজার ছাড়িয়েছে। যার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি।
ইসরাইলি সেনারা যখন ফিলিস্তিনে ত্রাশ করে বেড়াচ্ছে তখন পুরো বিশ্বই কার্যত নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। খোদ পশ্চিমা বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। তবে দিনশেষে প্রকাশ্যে ইসরাইলিদের সঙ্গেই হাত মেলাচ্ছে এবং তাদের সামরিক সহায়তাও দিচ্ছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা যখন যুদ্ধে যুদ্ধে বিধ্বস্ত, তখনই এখানে খাবার, পানি ও জ্বালানি প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা গাজাবাসীর জীবনযাত্রা। জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে বেশিরভাগ হাসপাতাল।
গাজাবাসীদের বরাত দিয়ে আল জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল শরিফ জানান, গাজাবাসীরা এখন আশ্রয় ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ জাবালিয়া আল-বালাদ হাসপাতালে গেছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। গাজার একজন বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, ’ইসরাইলি সেনারা মূলত নিরপরাধ শিশুদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। আমরা নিরাস্ত্র গাজাবাসীরা নিরুপায়। আমাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।’
গাজার আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘ইসরাইলি সেনারা গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। যথেষ্ট হয়েছে, এবার বিশ্ববাসীর ঘুম ভাঙা উচিৎ। আর কত ঘুমাবে বিশ্ববাসী? আপনাদের কি মনে হয় না, আমরাও মানুষ?’ গাজার এক চিকিৎসক বলছিলেন, ‘গাজায় দ্রুত যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন।’
কিউএনবি/আয়শা/১৮ ডিসেম্বর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:৪২