ডেস্ক নিউজ : ডলার সংকট কাটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে সময়ে সময়ে রেট বেঁধে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আবার বলা হয়, পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মূলত ডলারের রেট ইস্যুতে স্বয়ং গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার স্থির থাকতে পারছেন না।
গত অক্টোবরে এক অনুষ্ঠানে তিনি ঘোষণা দেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে ডলারের রেট বাজারভিত্তিক হবে। আবার গত শনিবার জানান, ডলার রেট বাজারভিত্তিক করা সম্ভব নয়। এই ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই ডলার কেনাবেচার মাধ্যমে রেট ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দেন তিনি। যা ২০০৩ সালের মে মাসেও একবার করা হয়েছিল। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। রোবাবর বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক ‘ক্লোজডোর’ বৈঠকে বাফেদা চেয়ারম্যান আফজাল করিমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে সীমা বেঁধে দিয়ে ডলারের রেট নির্ধারণের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউলহ হক বলেন, ‘জ্বালানিসহ নিত্যপণের খরচ মেটাতে ডলার বিক্রি করা হয়। এটা দেশের বৃহৎ স্বার্থেই করা হচ্ছে। যখন ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত ডলার থাকবে তখন ডলার বিক্রি করা হবে না। প্রয়োজনে কেনাও যেতে পারে। যেমন করোনার পরে ডলার ক্রয় করা হয়েছিল।’
অর্থনীতির ভাষায় ‘ক্রলিং পেগ’ হলো নিজের দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি ব্যান্ডের (সীমানা) মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য এবং হারের ব্যান্ডও ঘন ঘন সমন্বয় করা হয়। এখানে মুদ্রার রেটের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে ডলারের রেট নির্ধারণে বিশেষ দল কাজ করছে। মূলত ক্রলিং পেগ পদ্ধতির দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হলে ডলার বাজারে স্বস্তি ফিরতে পারে।’ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জানা যায়, ডলারের দরে লাগাম টানতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২৯ নভেম্বর দর ২৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক; যা ৩ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। এই ২৫ পয়সা কমানোর ফলে ডলারের ক্রয় দর হয় ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা। এর আগে গত ২২ নভেম্বর দীর্ঘ কয়েক বছর পরে প্রথমবারের মতো ৫০ পয়সা দর কমানো হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নীতিমালা প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিকভাবে ডলারের চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। তখন টাকার মূল্য জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল। এটা ধীরে ধীরে সমন্বয় করতে পারলে ডলার সংকট এত বেশি প্রকোপ আকার ধারণ করত না। আজকে ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে। তবে নতুন পদ্ধতি চালু হলে ডলার সংকট কমে আসবে। তখন বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক কিনবে এবং সরবরাহ কমলে তখন ডলার বিক্রি করা হবে। এতে মানুষের আস্থা ফিরবে। আর আস্থা ফিরলে ডলার বাজার স্থির হবে।
কিউএনবি/আয়শা/১১ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ৯:২০