মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন

ভাওতাবাজি চলছে গরুর মাংসের দাম নিয়েও

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৪৭ Time View

ডেস্ক নিউজ : গরুর মাংসের দাম নিয়ে ভোক্তার সঙ্গে চলছে ঠকবাজি। গত ৭-৮ মাস ধরে গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হলেও সম্প্রতি হঠাৎই সেই দাম নেমে যায় ৫৫০-৬০০ টাকায়। রাজধানীর খুচরা বাজার ও বিভিন্ন স্থানে একটু কম দামে মাংস বিক্রির খবরে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। আর্থিক কষ্টে অনেকেই মাসের পর মাস এক টুকরো মাংসের দেখা পাননি। তাদের ভিড় বেশি। কিন্তু ৮০০ টাকা কেজির মাংস কেমন করে ২০০-২৫০ টাকা কমে গেল। তাও পূর্ব ঘোষণা ছাড়া। এ নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল পেছনের রহস্য।

আগে দোকানে দুই থেকে তিনটি গরু জবাই হলেও এখন মূল্য কমিয়ে বিক্রি করায় ২০ থেকে ৩০টি গরু জবাই হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় একটি শক্তিশালী চক্র অতি মুনাফা করতে মাংসের দাম বাড়িয়েছিল। এখন বিক্রি কমায় নিজেরাই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। ফলে দাম কমিয়ে বিক্রি করছে। যে দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ায় এতেও তারা বাড়তি মুনাফা করছে। রোববার কথা হয় কাওরান বাজারের মাংস বিক্রেতা সুমনের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, এটা ঠিক প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি সম্ভব। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও সরকার সংশ্লিষ্টদের বারবার এই দাম নির্ধারণের কথা বলা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, কিছু দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে প্রতি কেজি ৫৫০-৬০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা মাইকিং করেও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন। এতে ক্রেতাদের কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। অনেক ক্রেতা, যারা মাংস কিনতে পারতেন না, তারাও গরুর মাংস কিনতে পারছেন। তবে বিক্রেতারা ক্রেতাদের সঙ্গে কারসাজি করছেন। যখন গরুর মাংসের কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল তখন অনেক দোকানে বিক্রি কমে যায়। ফলে তারা বিক্রি বাড়াতে ঠকবাজির ছক তৈরি করেছে। তারা আগে ক্রেতাকে ৮০০ টাকা কেজিতে সলিড (থান) মাংস দিলেও এখন ৫৫০-৬০০ টাকায় সলিড মাংস দিচ্ছে না। তারা গরুর মাথার অংশ, চর্বি, পা, কলিজাসহ সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করছে। শুধু চামড়া বাদে সব বিক্রি করে। কিন্তু ক্রেতা তা বুঝতে পারছেন না। 

তিনি জানান, ৮০০ টাকায় যখন ক্রেতা কিনতেন, তখন মাংসের বড় পিস টাঙিয়ে রাখা হতো। ক্রেতা যে টুকরা চাইতেন সেটা কিনতেন। এখন সবকিছু একসঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা নির্ধারণ করছেন বিক্রেতারাই। এক্ষেত্রে ভোক্তা ঠকছেন। লাভ যাচ্ছে বিক্রেতাদের পকেটে। ক্রেতা যদি ৫ কেজি মাংস কেনেন, সেখানে ৪ কেজি পাওয়া যাবে। তিনি জানান, গরুর মাংস বিক্রিতে সিন্ডিকেট আছে। সে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে কেজি ৫০০-৬০০ টাকা বিক্রি সম্ভব। 

এদিকে রোববার মাংস ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে এক সভায় গরুর মাংসের দাম নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান কেজিপ্রতি গরুর মাংসের দাম ৫০০ টাকায় বিক্রির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যথাযথ উদ্যোগ না নেওয়ায় গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। তিনি ব্যবসায়ীদের একক দাম নির্ধারণের দায়িত্ব দেন। সভায় শাজাহানপুরের মাংস বিক্রেতা খলিল আহমেদ বলেন, মাংসের দাম বাড়ায় তিনি আগে দিনে দু-তিনটি গরু জবাই করতেন। দাম কমিয়ে বিক্রি করায় এখন দিনে ৩০-৩২টি গরু জবাই করছেন। প্রতি কেজি মাংস ৫৯৫ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। খলিল আরও জানান, বিক্রি কমে যাওয়ায় তার লাভও কমে গিয়েছিল। এখন দাম কমিয়ে বিক্রি করায় তার লাভ আগের মতোই হচ্ছে।

মালিবাগের খোরশেদ গোস্ত দোকানের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, গ্রামে গরুর দাম কমেছে। তাই দাম কমিয়ে মাংস বিক্রি হচ্ছে। গরুর বাজার আরও কিছুদিন নিæমুখী থাকলে মাংসের দাম আরও কমবে। তিনি বলেন, কদিন আগেও গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। তখন দিনে ৫০ কেজি মাংস বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। ৬০০ টাকায় বিক্রি করায় বেচাবিক্রি আগের তুলনায় প্রায় চারগুণ বেড়েছে। আগে যেখানে তিনটি গরু জবাই হতো এখন সেখানে ২০-২৫টি গরু জবাই দিতে হচ্ছে। এতে বিক্রি বাড়ায় লাভও ভালো হচ্ছে। সঙ্গে ক্রেতাও কম দামে কিনতে পারছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, বুধবার বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি ও ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন মাংসের দাম নির্ধারণে সভা করবে। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেনের অফিসে বৈঠক হবে। সেখানে ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম নির্ধারণ করে তা ভোক্তা অধিদপ্তরকে জানাবেন। 

ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রির জন্য একটি সিন্ডিকেট এতদিন কারসাজি করেছে। কিছুদিন আগে আমরা ঢাকার বড় মাংস বিক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারাও ভোক্তা সহনীয় মূল্যে মাংস বিক্রি করতে চেয়েছিল। আমি মূল্য নির্ধারণের দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে গিয়েছি। কিন্তু কেউ গরুর মাংসের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে উদ্যোগ নেননি। তিনি জানান, মূল্য নির্ধারণ করে দিলে ক্রেতারা আরও কম দামে গরুর মাংস খেতে পারবেন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০৩ ডিসেম্বর ২০২৩,/রাত ১০:৩৮

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit