বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে মোট ১৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। ওই পাঁচজন জেলায় তিনটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে। একটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী স্বতন্ত্র হওয়ায় সেখানেও ভোটের হিসেবে নিকেশে অনেকটা প্রভাব পড়বে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় মনোনয়ন ফরম কিনে চমক সৃষ্টি করেছেন সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য (এম.পি) হওয়ার পথ সুগম হলো আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের। তাঁর সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন বৃহস্পতিবার নিধারিত সময় নাগাদ আওয়ামী লীগের অন্য কেউ মনোনয়নপত্র জমা দেননি বলে তিনি অনেকটাই নির্ভার।
জেলায় ছয় আসনে মোট মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৫৫ জন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ছয়জন, জাতীয় পার্টির ছয়জন ও অন্যান্য ১২টি দলের ৩০ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। আজ রবিবার তাঁদের মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে।ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য বদরোজ্জামান মো. ফরহাদ হোসেন। এ আসনে মোট প্রার্থী নয়জন। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এটিএম মনিরুজ্জামান সরকার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রোমা আক্তারও রয়েছেন।শুধু এ আসন নয়, পুরো জেলাতেই চমক সৃষ্টি করেছেন স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াই করতে যাওয়া সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান। মনোনয়ন ফরম কেনার পর তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পদ তথা দলটি থেকে বহিস্কার হন। এছাড়া জেলা ও উপজেলা বিএনপি তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর হেভিওয়েট প্রার্থী সৈয়দ একরামুজ্জামান জানান, তিনি সরকারের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটের আশ্বাস পেয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া এলাকার স্বার্থে ও জনগণের চাপে তিনি ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ বরাবরের মতো এবারও এ আসনে ভোটের লড়াই জমে উঠবে। গত মাসে হওয়া উপ-নির্বাচনে জয়লাভ করা আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান আলম সাজুকেই আবার মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে থাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন দলীয় প্রার্থীর জন্য বেশ ভোগানোর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আসনটিতে জাতীয় পার্টির হয়ে আব্দুল হামিদের পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়া রেজাউল ইসলাম ভুইয়া মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এছাড়া রেজাউল ইসলামের শশুর ও সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা জিয়াউল হক মৃধাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তৃণমূল বিএনপি’র প্রার্থী হয়েছেন সদস্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুস সাত্তারের ছেলে মাইনুল হাসান। মূলত আওয়ামী লীগের ‘সমর্থন’ নিয়ে সর্বশেষ উপ-নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন প্রার্থী হয়ে বিএনপি থেকে বহিস্কৃত আব্দুস সাত্তার।মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন। এর আগের নির্বাচনে দলীয় নির্দেশে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনে না থাকলে শেষ পর্যন্ত এটা অংশগ্রহনমূলক হবে না। তাই আশা রাখছি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বলবে না।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় প্রার্থীতা অবৈধ ঘোষণা হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের আওয়ামী লীগ ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী ফিরোজুর রহমান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভ ও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে অংশ নিতে শতকরা এক ভাগ ভোটারের যে তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে সেটি নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। এ আসন থেকে মোট ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান, জাতীয় পার্টির রেজাউল ইসলাম ভ‚ঞা বাদে এ আসনে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রার্থী নেই। মোকতাদির চৌধুরী শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেছেন, ‘ভোট নিয়ে জনগণ আগ্রহ দেখাচ্ছে।’ কোথাও কোনো জবরদস্তি হলে সেটিও দেখার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি তিনি আহবান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনটিতে জাতীয় পার্টির তারেক আহমেদ আদেল, জাকের পার্টির মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ কংগ্রেসের বজলুর রহমান মিলন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাহীন খান, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ জাফরুল কুদ্দুস মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ওই প্রার্থীরা তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য মো. শাহ আলম ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা শ্যামল কুমার রায় মনোনয়ন পত্র কিনলেও জমা দেননি। স্বতন্ত্র ওই দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছে। দুই মেয়াদে মন্ত্রী ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড ও দেড় হাজারের বেশি যুবককে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি ভোটের মাঠে বেশ প্রভাব পড়বে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে এই একটি আসনেই বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন পাননি। সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি জমা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমানের জন্য ভোটের মাঠের হিসেব অনেক সহজ হলো।এ আসন থেকে মোট ১১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মো. মোবারক হোসেন ও মুফতি হাবিবুর রহমান তৃণমূল বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র থেকে তিন ও পাঁচটি দল থেকে পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ কোনো রকমের দ্বিধা না রেখেই এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলাম। আসনটিতে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র দাখিল করা ছয় প্রার্থীর মধ্যে জাতীয় পার্টির মো. আমজাদ হোসেনও রয়েছেন। এছাড়া অরো তিনটি দলের তিন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। যদিও তারা ভোটের মাঠে খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
কিউএনবি/অনিমা/০৩ ডিসেম্বর ২০২৩,/সকাল ১১:৩২