তিতাসের বালু হরিলুট তিন মাসে ১০-১২ কোটি টাকার বালু উত্তোলন
বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি
Update Time :
বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩
১৮৭
Time View
বাদল আহাম্মদ খান ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি : প্রায় তিন মাস ধরে বালু উঠছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। সেখানে একসঙ্গে পাঁচটি ড্রেজারে করে বালু উঠাতে দেখা যায়। ধারণা পাওয়া যায়, গত তিন মাসে উল্লেখিত স্থান থেকে ১০-১২ কোটি টাকার বালু উঠানো হয়। বালু উঠাতে গিয়ে বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘মধু’- এমনটাই জানালেন এলাকাবাসী। মধু বলতে এলাকাবাসী বুঝাচ্ছেন নগদ টাকা ও উত্তোলন করা বালুর অংশ। আর ‘মধু’ পাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মহলসহ সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে নির্বিঘ্নেই তারা কাজটি করতে পারছেন। এতে সরকার বড় ধরণের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই স্থানটিতে কোনো বালু মহাল নেই কিংবা কাউকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয়নি। বেশ কিছুদিন আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয় মাধ্যমে জানতে পেরে অভিযানের জন্য রওয়ানা হয়। তবে তাদের বহনকারি নৌকা ডুবে গেলে সেটি আর সম্ভব হয়নি।সম্প্রতি সরজমিনে গেলে সেখানে দায়িত্বরত এক ব্যক্তির সরল স্বীকারোক্তি, ‘ইডা ইজারা আনচি না। আনার লাই¹ দরখাস্ত দিছি। আমরা তো ভাই…সাবের এনো বালু দিতাছি। এরপরে যা থাহে গরীর লোকটিরে (ড্রেজারে কর্মরতরা) লইয়া চলবার লাই¹া কিছু বালু বেইচ্চা লাই। ইডির টেহা আবার এরে হেরে (ক্ষমতাসীন দলের নেতার নাম উল্লেখ করে) দেওন লাগে। আফনেরা যদি লেহালেহি কইরা বন্দ কইরা দেইন তাইলে ত অইতো না। আমডার লগে সমঝোতা কইরা লাইন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার কাউতলী নৌকাঘাট থেকে বালু উত্তোলনের জায়গাটিতে যেতে নৌকায় ৪০ মিনিটের মতো লাগে। স্থানীয়রা জানালেন, জায়গাটি পড়েছে বিজয়নগর উপজেলার মাশাউড়া। পাশেই জেলা সদর ও আখাউড়া উপজেলা।
সেখানে মোট পাঁচটি ড্রেজারে করে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। প্রত্যেকটি ড্রেজারের সামনে একটি করে নৌকায় বালু ভরাট করা হচ্ছে। অপেক্ষায় আছে একাধিক নৌকা। ওইস্থানে যাওয়ার পথে একাধিক নৌকাকে বালু নিয়ে যেতে দেখা যায়।
রাকিব ড্রেজার, মেঘনা আল্লাহর তরী ড্রেজার, আল্লাহ ভরসা ড্রেজার, দুলাল লোড ড্রেজার এর লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন মাস ধরে পাঁচ থেকে ১০টি ড্রেজারে করে এখানে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি দুই থেকে আড়াই ঘন্টায় একেকটি নৌকা বালু ভর্তি হয়ে যায়। একেক নৌকায় পাঁচ থেকে ছয় সাত হাজার ঘনফুট বালু নেওয়া হয়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি করে নৌকায় বালু নেওয়া হয়। প্রতিফুট বালু বিক্রি হয় পাঁচ থেকে নয় টাকা পর্যন্ত।একাধিক সূত্র জানায়, সোহেল মিয়া, নান্টু মিয়া, শাহ পরান, হেলাল মিয়া, তামিম চৌধুরী, আকাশসহ বেশ কয়েকজন বালু উত্তোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তারা মূলত জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা ও জনপ্রতিনিধির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গা ভরাটের নাম করে মাস তিনেক আগে বালু উত্তোলন শুরু করে। ওই জায়গাটি ইতিমধ্যেই ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। মোট বালু উত্তোলনের ৪০ শতাংশ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জায়গার জন্য দেওয়ার শর্তে তারা বালু উঠায়। আর বাকি বালু তারা বিক্রি করে। বিক্রির ওই টাকা থেকে জেলা ছাত্রলীগের একাধিক শীর্ষ নেতাকে প্রতিদিনই মাসোহারা দিতে হয়। ভাদুঘর থেকে শুরু করে দক্ষিণ পূর্ব দিকের কাঞ্চনপুর, কাছাইট, মাশাউড়া এলাকা থেকে তারা বালু উঠায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাদুঘর ও কাছাইট এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘যারা বালু উঠায় তারা নিজেরা যেমন প্রভাবশালী তেমনিভাবে একজন শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতার কাজে বালু ব্যবহারের কথা বলছেন। যে কারণে কেউ কিছু বলতে চাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকে কিছু দিনের মধ্যেই আশেপাশের এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হবে।
বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠা মো. নান্টু মিয়া বলেন, ‘আমি এটার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না। আমি ড্রেজার ভাড়া দিয়েছি। যতটুকু শুনেছি নদী খননের বালু জায়গা না থাকায় এক জায়গায় রাখা হচ্ছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’বালু উত্তোলনের তদারকিতে থাকা মো. সোহেল মিয়া বলেন, ‘এ জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে রাখা হয়েছে। আমরা ইজারা পাবো আশা করছি। বিশেষ দরকারে আগেভাগেই কিছু বালু উঠানো হচ্ছে। এখানে সবাই গরীব। বালুগুলো বিক্রি করে তাদের সংসার চলে।’সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, ‘ওই জায়গাতে বালু উত্তোলনের অনুমতি নেই। ওইখানে যা করা হয়েছে তা অবৈধভাবে করা হয়েছে।’ তিনি আরো জানান, অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদেরকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং একাধিক ড্রেজার ও নৌকা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।