সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫১ অপরাহ্ন

হামাস চায় ইসরাইলের ধ্বংস, ফাতাহ চায় সমঝোতা

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৪১ Time View

স্পোর্টস ডেস্ক : শক্তিশালী ইসরাইলি আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে শনিবার (৭ অক্টোবর) ভোরে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী বাহিনী হামাস। আক্রমণের পরপরই ফিলিস্তিনের ভূ-রাজনীতিতে দলটির শক্ত অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তবে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় হামাসের একচ্ছত্র রাজত্ব থাকলেও পুরো ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বেশ জটিল। মুক্তির সংগ্রামে বছরের পর বছর ধরে মার খাওয়া মধ্যপ্রাচের যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশটির পাঁচটি দলের প্রতিটিরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ইতিহাস। ইসরাইলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের সম্পর্ক নিয়েও পাঁচ দলের রয়েছে পঞ্চমত। সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ফাতাহ। তার পরেই আসে হামাসের নাম। হামাস ইসলামপন্থি দল। ফাতাহ ধর্মনিরপেক্ষ।

ফাতাহ
ফিলিস্তিনের নেতৃস্থানীয় দল ফাতাহ। ফাতাহ শব্দটির অর্থ ‘বিজয়’। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল-আরব যুদ্ধের সময় ৭০,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি আরবের বাস্তুচ্যুত এবং ক্ষমতাচ্যুত করার পর ১৯৫০ সালে কুয়েতে গঠিত হয় ফাতাহ। অসংখ্য ধর্মনিরপেক্ষ লোকের সমন্বয়ে জাতীয়তাবাদী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইয়াসির আরাফাত। সহযোগী ছিলেন খলিল আল-ওয়াজির, সালাহ খালাফ এবং মাহমুদ আব্বাস। প্রথম দিকে ফাতাহর উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম। দলের প্রধান সামরিক শাখা ছিল আল-আসিফাহ বা স্টর্ম। ইসরাইলে প্রথম হামলা চালায় ১৯৬৫ সালে। বেশির ভাগ সশস্ত্র অপারেশন জর্ডান এবং লেবানন থেকে পরিচালিত হয়েছিল। পরবর্তীতে এ রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে পরিবর্তন আসে। হামাসের সঙ্গে ফাতাহের মৌলিক পরিবর্তন এটিই। ১৯৬৭ সালে ইসরাইলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নির্মাণের আহ্বান জানায় ফাতাহ।

হামাস
হামাস অর্থ ‘উদ্যম’। এটি হারাকাত আল-মুকাওয়ামাহ আল-ইসলামিয়া বা ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত রূপ। ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ শুরুর পরপরই ১৯৮৭ সালে গাজায় প্রতিষ্ঠিত হয় দলটি। ইমাম শেখ আহমেদ ইয়াসিন এবং সহযোগী আব্দুল আজিজ আল-রান্টিসি দলটি গঠন করেন। ২০১৭ সালে হামাস নতুন একটি ধারা প্রকাশ করে যা ফাতাহর সম্পূর্ণ বিপরীত।  ইসরাইলের রাষ্ট্রত্বকে সম্পূর্ণ অস্বীকৃতি জানিয়ে বলা হয়, ‘হামাস বিশ্বাস করে যে ‘ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠা সম্পূর্ণ ‘অবৈধ’। 

ফিলিস্তিন ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)
পিআইজে হলো ফিলিস্তিনের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিকামী সামরিক গোষ্ঠী। এ দলের লক্ষ্যও হামাসের মতো। ইসরাইলকে ধ্বংস করে একটি সম্পূর্ণ ইসলামি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৮১ সালে মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্যদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, দলটি ইরান দ্বারা আর্থিকভাবে সমর্থিত। হামাস এবং পিআইজে মিত্র হলেও উভয় গ্রুপেরই আলাদা পরিচয় এবং কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইসরাইলের সংবাদপত্র হারেৎজ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পিআইজে একটি ছোট এবং অভিজাত দল। প্রায়ই সশস্ত্র সংগ্রামে নিবেদিত একটি গোপন বাহিনী। অন্যদিকে হামাস একটি অনেক বড় সম্প্রদায়ভিত্তিক সংগঠন, যা গাজায় সম্পূর্ণ সরকারি দায়িত্ব গ্রহণ করে।

ফিলিস্তিনের লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)
১৯৬৪ সালে মিসরের কায়রোতে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে দলটি গঠিত হয়। সে সময় এ দলের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র সংগ্রামে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করা। ফাতাহর প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৬৯ সালে পিএলওর চেয়ারম্যান হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বহাল ছিলেন। মাহমুদ আব্বাস এখনও সংগঠনের প্রধান। পিএলওর মতাদর্শ ফাতাহর সঙ্গে পরবর্তীতে মিলে যায়। ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে পিএলওর জন্য একটি বড় টার্নিং পয়েন্ট আসে। দলটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে দেয়। ফিলিস্তিনের পাশাপাশি ইসরাইলের রাষ্ট্রত্বকেও স্বীকৃতি দেয়।

ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ) 
ফিলিস্তিনের অথরিটি (পিএ) হলো একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ১৯৪৮ সালের নাকবা বা ‘বিপর্যয়’ এর প্রবাসী ফিলিস্তিনিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল। মতান্তরে ফাতাহ প্রভাবিত দল। ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ) নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসক সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৬৭ সালে সীমান্তে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করা এ দলের লক্ষ্য ছিল। মূলত এ দলটি ছিল ইসরাইলি সরকার এবং পিএলও-এর মধ্যে অসলো চুক্তির একটি অংশ।

উল্লেখ্য, ‘অসলো চুক্তি’ তৈরি হয়েছিল ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে সংকট নিরসনের একটি উপায় হিসেবে। চুক্তিতে, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি বাহিনী পর্যায়ক্রমে সরে যাবে। পাঁচ বছরের জন্য ‘অন্তর্বর্তী স্বশাসিত ফিলিস্তিনি অথোরিটি’ (পিএ) গঠিত হবে। এরপর জাতিসংঘের ২৪২ ও ৩৩৮ প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্থায়ী সমাধান হবে। সুস্পষ্টভাবে লিখিত না হলেও ইঙ্গিত থাকে একদিন ইসরাইলের পাশে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হবে। এই চুক্তি অনুসারেই ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি হিসাবে পিএলও ইসরাইল রাষ্ট্র মেনে নেয়।

ইসরাইলিরাও মেনে নেয় যে, ফিলিস্তিনি লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে। তবে আজ, সেই চুক্তিগুলো ছিন্নভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। ইসরাইল তার বসতি সম্প্রসারণ করেছে এবং পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে রাস্তাগুলোকে বাইপাস করে এমন ভূখণ্ডকে বাস্তবে সংযুক্ত করেছে যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হওয়া উচিত ছিল। তবে ২০১৪ সালে শেষ দফা আলোচনায় চুক্তিটি ভেঙে যায়।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/১৪ অক্টোবর ২০২৩,/রাত ৯:৩৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit