মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

শিশুকে কীভাবে খাওয়াবেন

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১২৪ Time View

লাইফ ষ্টাইল ডেস্ক : শিশু কম খাচ্ছে বা একেবারেই খাচ্ছে না, এ নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তাই ময়েরা, যেন সারাদিন শিশুকে খাওয়ানোতেই ব্যস্ত থাকেন। কোনো কোনো মা’দের ধারণা শিশু বুকের দুধ কম পাচ্ছে তাই ওজন বাড়ছে না। শিশুকে কীভাবে খাওয়াবেন তা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ শিশু সংক্রামক ব্যাধি চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন।

দুই-তিন বছরের শিশুর ক্ষেত্রে মায়েদের প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, শিশু খেতে চায় না, তাই আগের মতো বাড়ছে না। মনে রাখতে হবে, জন্মের শুরুতেই শিশুদের ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে এবং তারপর ধীরে ধীরে বাড়ে। প্রথম ৩ মাসে শিশুর ওজন দিনে প্রায় ২৮-৩০ গ্রাম বৃদ্ধি পায়। ৪ মাস থেকে ওজন বৃদ্ধি কমে প্রতিদিন প্রায় ২০ গ্রাম করে বৃদ্ধি পায়। ৬ মাস পর থেকে অনেক শিশুর প্রতিদিন প্রায় ১০ গ্রাম বা তার কম করে ওজন বৃদ্ধি পায়।

অর্থাৎ প্রথম ৬ মাসে প্রতি মাসে ৬০০ গ্রাম এবং ২য় ৬ মাসের প্রথম কয়েক মাস প্রতি মাসে ৫০০ গ্রাম, যা ৯-১০ মাসে ৪০০ এবং ১১-১২ মাসে ৩০০ গ্রাম ওজন বৃদ্ধি হল কাঙ্ক্ষিত বৃদ্ধি। সাধারণত শিশুর জন্ম ওজন ৬ মাস পর দ্বিগুণ এবং ১ বছরে তিনগুণ বৃদ্ধি হয়। প্রথম বছরের শেষে দ্বিতীয় বছরে পা রাখলেই শিশুর শারীরিক বৃদ্ধির হার কমে যায়; তখন ওজনের বৃদ্ধি কমে আর উচ্চতা বৃদ্ধির হার বেশি হয়। যেমন, প্রথম বছর ২৫ সেমি,

২য় বছর ১২ সেমি, ৩য় ও ৪র্থ বছর যথাক্রমে ১১, ৬ এবং ৫ম বছরে ৫ সেমি করে উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অথচ ১ম বছরে ২.৫ গ্রাম, আর তারপর প্রতি বছর ২ কিলো গ্রাম করে ওজন বৃদ্ধি পায়। এ সময় শিশুর প্রতিদিন একইরকমের খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়। এ বয়সে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই, শরীরের বৃদ্ধির হার অনুযায়ী খাবারের পরিমাণ নির্ধারণ করা ঠিক নয়।

যদিও কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক অসুস্থতা অরুচিকর অবস্থার জন্য দায়ী। তখন স্বাভাবিকভাবেই অপুষ্টি দেখা দেয়, রক্তশূন্যতা হয় এবং শারীরিক বৃদ্ধিও ব্যাহত হয়। ঘন ঘন জীবাণু সংক্রমণ হয়, ফলে খাওয়ায় রুচি আরও কমে যায়। শিশুর রক্তশূন্যতা হলে, অপুষ্টি থাকলে শিশুর চঞ্চলতা ও সচলতা কমে যায়।

তবে শিশুদের খাওয়ার ব্যাপারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু অনিয়ম ও খাওয়ানোর অভ্যাসই শিশুর না খেতে চাওয়ার বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতিরিক্ত খাওয়ানো, জোড় করে খাওয়ানো, ভুলভাবে খাওয়ানো, খাবারে অ্যালার্জি শিশুর খাবারে অনীহা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় বাচ্চার আবদার মেটাতে গিয়ে অসময়ে অন্যকিছু খাইয়ে দেওয়া অর্থাৎ শিশুকে বিস্কুট, ফল, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খেতে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, অনেকে আবার শিশুকে রুটিনমাফিক বা সময় ধরে খাওয়ানো, সময় হলেই খাওয়াতে বসে যান, কিন্তু লক্ষ্য করেন না শিশুর পেটে ক্ষুধা আছে কি নেই। অনেকে আবার শিশুর কান্না শুনলেই মনে করেন, ক্ষুধার জন্য কাঁদছে। অথচ শিশুরা অনেক কারণেই কাঁদতে পারে। কেউ কেউ তার শিশু একবেলা একটু না খেলেই বেশ অস্থির হয়ে পড়েন। কেউবা আবার পেট ভরে খায়নি বলে এক ঘণ্টা পরই আবার খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন, এজন্য বাচ্চারা বিরক্ত হয়ে খেতে চায় না,

কারণ তার পেটে তখন ক্ষুধা থাকার কথা নয়। এসব অভ্যাসই শিশুর খেতে অনীহা সৃষ্টি করে থাকে। শারীরিক কোনো অসুবিধা বা অসুখ না থাকলে এবং শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি সঠিক মতো হলে ও ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলে শিশুদের না খাওয়ার ব্যাপারটি মায়েদের আবেগতাড়িত ধারণা প্রসূতই মাত্র।

এক্ষেত্রে নিুোক্ত বিষয়গুলোর দিকে শিশুর না খাওয়ার অন্যতম কারণ হিসাবে নজর দেওয়া দরকার :

▶ পুরোপুরি খিদে না লাগলে শিশুরা সাধারণত খেতে চায় না। এছাড়া ক্রমাগত এবং জোড় করে খাওয়ান চেষ্টা খাবারের প্রতি শিশুদের এক ধরনের অনীহা সৃষ্টি করে।

▶ শিশুদের রুটিন মাফিক খাওয়ানো ভালো। যখন-তখন খাবার দেওয়ার প্রবণতায় শিশুদের মধ্যে খাবার সম্পর্কে ভীতির জন্ম নেয় যখন খাবার দেখলেই পালাতে চায়। কারণ খাবারের নির্দিষ্ট সময় ছাড়া যখনতখন তার খিদে লাগার কথা না। অনেক শিশু স্কুল থেকে ফিরেই বিস্কুট, ফল বা ফলের রস ইত্যাদি খায়। তার এক ঘণ্টা পরই হয়তো দুপুরের খাবারের সময়। তখন তাই সে হয়তো খেতে চাইবে না,

কারণ ইতোমধ্যেই তার খিদে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক শিশু সারাদিন ইচ্ছামতো যখন-তখন বিস্কুট, ফল, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খেয়ে পেট ভরে রাখে। কিন্তু মূল খাবারের সময় তেমন কিছুই খেতে চায় না। এটা খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং, পিতা-মাতার উচিত রুটিনমাফিক পরিমিত সুষম খাবার খাওয়ানোর দিকে লক্ষ্য রাখা। অবেলায় বা খাওয়ার সময়ের আগে বিস্কুট, ফল, চকলেট, আইসক্রিম বা ফাস্ট ফুডজাতীয় খাবার খেতে না দেওয়া।

▶ খাবারের স্বাদের দিকে লক্ষ্য রাখুন। শিশুর পছন্দসই খাবার রান্না করুন। শিশু খাবারে যথাযথ স্বাদের খাবার না পেলে খেতে চাইবে না এবং ওই খাবারের প্রতি তার এক ধরনের বিরক্তি তৈরি হবে।

▶ সময়সূচি অনুযায়ী খেতে দিন। বয়সভেদে শিশুর ক্ষুধা লাগার সময়ে কিছুটা পার্থক্য আছে। আপনার শিশুকে সব সময় নিয়ম বা সময়সূচি অনুযায়ী খেতে অভ্যস্ত করে তুলুন। কী খাওয়াচ্ছেন, তারচেয়ে বড় কথা হলো, কখন খাওয়াচ্ছেন। শিশু খেতে চাইছে না বা খাচ্ছে না-এ অজুহাতে তাকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় খাবার দেবেন না। শিশু একেবারেই খেতে না চাইলে শিশুর ওজন বাড়ছে কিনা লক্ষ্য করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। যখন-তখন খাবার দিয়ে তার খাবারের প্রতি প্রচণ্ড অনীহা সৃষ্টি করবেন না।

▶ বয়স অনুযায়ী খাবারের বিরতির দিকে লক্ষ্য রাখুন। সাধারণত ৬ মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দুই থেকে তিন ঘণ্টা বিরতিতে দেওয়া উচিত। ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি সম্পূরক খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। দুই থেকে তিন বছর বয়সি বাচ্চাদের বিরতির এ সময়ে যদি অন্য কোনো খাবার সে না খায়, তবে যথাসময়ে তার ক্ষুধা লাগার কথা।

▶ অযথা জোর করা একদম উচিত নয়। শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। তাকে একবার জোর করে খাওয়ালে পরে যখনই তাকে খাওয়াতে চাইবেন, তখনই সে ভয় পাবে। খাবারের প্রতি তার আগ্রহ কমে যাবে।

▶ খাওয়ার সময় টিভি বা কার্টুন দেখানোর অভ্যাস খুবই খারাপ। শিশুদের টিভি বা কার্টুন দেখিয়ে খাবার খাওয়ালে এগুলোতে সে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। এমনিতেই বেশি সময় টিভি দেখা শিশুর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তার উপরে টিভি দেখিয়ে খাওয়ালে শিশুর বদহজম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। কারণ এ সময় টিভিতে মনোযোগ থাকার কারণে পাকস্থলি থেকে প্রয়োজনীয় পাচক রস নিঃসৃত হয় না।

▶ প্রায়ই চেষ্টা করুন খাবারে ভিন্নতা আনতে। প্রতিদিন এক ধরনের খাবার না দিয়ে খাবারে ভিন্নতা আনুন। যদি তার মনের ভাব সে প্রকাশ করতে পারে, তবে সে যা খেতে চায় তা জেনে নিন। তার পছন্দমতো খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করে খেতে দিন।

▶ বাইরের খাবারের বিশেষ করে ফাস্টফুডের অপকারিতা সম্পর্কে তাকে বলুন। বাইরের খাবার যে একেবারেই দেবেন না তা নয়। যখন বড়দের সঙ্গে কোথাও পার্টিতে যাবে বা পরিবারের সবার সঙ্গে কোথাও ঘুরতে যাবে, নিশ্চয়ই বাইরের খাবার সে খেতে পারবে। তবে তার জন্য আলাদা করে প্রতিদিন বাইরের খাবার ঘরে আনবেন না বা তাকে বাইরে খেতে নিয়ে যাবেন না।

▶ শিশু কৃমি সংক্রমিত কিনা সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে হবে। শিশুর কৃমি সংক্রমণ না খাওয়ার একটা অন্যতম কারণ। নিয়মিত পরিবারের সবাই এমনকী কাজের বুয়াকেসহ কৃমির ওষুধ খাওয়ান উচিত। শিশুকে কৃমিমুক্ত রাখলে শিশুর খাওয়ার রুচি ঠিক থাকবে। সবসময় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন জরুরি। শিশুর খাওয়ার রুচির সঙ্গে পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করলে এবং সুন্দর পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শিশুকে রাখা হলে শিশুর ঠিকমতো বেড়ে যায়।

কিউএনবি/অনিমা/১৪ অক্টোবর ২০২৩/দুপুর ১২:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit