আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গাজা এবং ইসরাইল সীমান্তের কাছের গ্রাম কাফার আজা। এ গ্রামটি যেন যুদ্ধের প্রথম কয়েক দিনের একটি প্রতিচ্ছবি। এখান থেকে ধারণা পাওয়া যায়, এরপর কী ঘটতে পারে।
সীমান্তের কাছে ইসরাইলি অধ্যুষিত এলাকায় মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত লড়াই চলেছে। শনিবার সকালে সীমান্তের কাঁটাতার ভেঙ্গে হামাস সদস্যরা গ্রামে ঢুকে যাদের হত্যা করেছে তাদের মৃতদেহ সংগ্রহ করতেই এখন ব্যস্ত গ্রামবাসী।
সারাদিন ধরে বেসামরিক নাগরিকদের মৃতদেহের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন যেসব ইসরাইলি সেনা, তারা বলছেন সেখানে আসলে গণহত্যা হয়েছে। তাদের কাছে মনে হয়েছে শনিবার আক্রমণের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ইসরাইলের প্যারাট্রুপারদের একটি অভিজ্ঞ দলের ডেপুটি কমান্ডার দাভিদি বেন জায়ন জানিয়েছেন যে ইসরাইলি সেনাদের ১২ ঘণ্টা লেগেছে গ্রামটিতে পৌঁছাতে।
তিনি বলেন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমরা অনেক শিশু ও তাদের অভিভাবকদের জীবন রক্ষা করতে পেরেছি। দু:খজনকভাবে ককটেলে অনেকের শরীর পুড়ে গেছে।
কয়েক গজ দূরেই হামাসের এক মৃত বন্দুকধারীর শরীরের অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছিলো।
কিবুতয গ্রামের নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তারা আসলে সামরিক অভিজ্ঞতা আছে এমন গ্রামবাসীদের নিয়েই তৈরি হয়েছিলো। তারা হামলাকারীদের সাথে লড়াইয়ে নিহত হয়েছে।
অপরাপর ইসরাইলিদের মতো কালো প্লাস্টিক ব্যাগে করে গ্রামের কেন্দ্র থেকে তাদের মৃতদেহ সরানো হয়েছে মঙ্গলবার সকালে।
এর আগে ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরাইলি গ্রামগুলোর মানুষ বিভিন্ন সময়ে রকেট হামলা দেখেছে।
হামাসের হুমকি সত্ত্বেও কাফার আজা এবং অন্য ইসরাইলি কমিউনিটিগুলোতে একটি সুন্দর জীবনই উপভোগ করে আসছিলেন।
কিন্তু ঘরবাড়িগুলো বা কিবুতযের লন ও খোলা জায়গাগুলো কিংবা কংক্রিটের আশ্রয়স্থলগুলো হানাহানি থেকে দূরে ছিলো না।
ঘরগুলো সেইফরুম ছিলো। এর বাইরে বাগান, বারবিকিউ, বাচ্চাদের খেলার জায়গা এবং বিশুদ্ধ বাতাস- সবই ছিলো।
তবে ইসরাইলের অন্য সব জায়গার মতো এখনকার মানুষও ভাবতে পারেনি যে ইসরাইলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙ্গে হামাস সেখানে হামলা চালাতে পারে।
ভয় আর নৃশংসতার মধ্যে তারা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে দেখেছে রাষ্ট্র ও সামরিক বাহিনী নাগরিকদের সুরক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
নিহত হামাস বন্দুকধারীদের মৃতদেহ খোলা আকাশের নীচেই পড়েছিলো। সেখানেই ছিল তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলগুলো যেগুলো ব্যবহার করে তারা গ্রামটিকে এসেছিলো।
পাশেই দেখা গেছে প্যারাগ্লাইডারের ধ্বংসাবশেষ। এগুলোতে করে হামাস বন্দুকধারীরা এসেছিল।
ঘটনার পর তাদের আরেক অভিজ্ঞতা ছিলো গ্রামটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য ইসরাইলি সেনাদের লড়াই। সেখানে এখন মোতায়েন আছে অনেক সেনা।
একজন কমান্ডারকে দেখা গেল গাজার দিকে একটি ভবনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার আদেশ দিতে। এরপরই শোনা গেলো স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলির শব্দ।
গাজায় তখন বিমান হামলা চলছিল। শনিবারের ঘটনায় নিজেদের বহু নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো ইসরাইল এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
তবে গাজাতেও অনেক বেসামরিক মানুষ মারা গেছে। আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
কিউএনবি/অনিমা/১১ অক্টোবর ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:২৬