সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৭ অপরাহ্ন

আজ বিশ্ব বসতি দিবস: প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরই নিঃস্বদের আশ্রয়স্থল

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮১ Time View

ডেস্ক নিউজ : রাজধানীর রাজপথের পাশে রয়েছে ফুটপাত। এসব ফুটপাত দখল করে আছেন সহায়, সম্বলহীন, নিঃস্ব মানুষ। রেললাইনের দুপাশে সারি সারি ঝুপড়ি ঘর। ফুটপাত-রেললাইন ঘিরে বসতহীনদের অবস্থান। এসব স্থান থেকে দখলদার উৎখাতের আইনও রয়েছে। কিন্তু সেই আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

আজ (সোমবার) বিশ্ব বসতি দিবস। প্রতি বছর দিবসটি আসে-চলেও যায়। কিন্তু গত কয়েক বছরে প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার বসতি ঘর দেওয়ার মাধ্যমে গৃহহীনদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি ঘরে গড়ে ৩ জন করে বসবাস করলে- ৯ লাখ ৫৬ হাজার মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, নগর ও গ্রামের জীবনযাত্রার বৈষম্য দূরীকরণে সরকার কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। দেশের গৃহহীন-ভূমিহীনদের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’-এর মাধ্যমে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশে আর কোনো গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। 

কমলাপুর থেকে রেলপথ ধরে মাওয়া যেতেই বেশ কয়েকটি স্থানে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’-এর লাল রঙের বসতি ঘর চোখে পড়ে। রাজধানীর শ্যামপুর থেকে উড়াল রেলপথ ধরে খানিকটা সামনে গেলেই চোখে পড়ে সারি সারি বিশেষ ঘর। চারপাশে সবুজ-মধ্যস্থলে লাল বসতিগুলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া আখাউড়া আজমপুর সীমান্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া শত শত বসতি ঘরও আলো ছড়াচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা বিমানবন্দর এলাকা থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে গড়ে ওঠা লাল বসতিগুলো স্পষ্ট চোখে পড়ে। এ রকম প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে প্রায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮৫১টি ঘর।

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের কোনাইহাট সংলগ্ন খেকিডাঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর পেয়েছেন অন্ধ নূরুজ্জামান। সম্প্রতি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নূরুজ্জামান এই প্রতিবেদককে জানান, অন্ধ স্ত্রী ওরাইসা বেগমকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তিনি ভিক্ষা করতেন। কন্যা নূরী আক্তার নদী (১২) এবং ছেলে আব্দুর রবকে (৭) নিয়ে খেয়ে না-খেয়ে জীবন চলত। একটি বস্তির ঝুপড়ি ঘরের ভাড়া দিতে হতো ৪ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে  উঠতে তিনি এবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে লাল ঘরে যাচ্ছেন। কন্যা নদী জানাল, এটা আমাদের মোবাইল নম্বর (০১৯৮৯২৭৬৫২৪)। তার বাবা-মা জন্মান্ধ। সে এবং তার ভাই চোখে দেখে। প্রধানমন্ত্রী যেন তাদের ফোন করেন। ফোন করলে বাবা-মা শুনতে পারবেন। চোখে না দেখলেও প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠ শুনলে মা-বাবা, আমরা দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হব।

সরকারি হিসাবে দেশে বর্তমানে নিজের জমি নেই এমন মানুষের সংখ্যা ৯১ লাখ। ২০১০ সালে ভূমিহীনদের হার ছিল ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ। এক যুগের ব্যবধানে ভূমিহীনদের সংখ্যা কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ফলে অনেক ভূমিহীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয়-ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জনশুমারির হিসাব অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে উচ্চ দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা জনসংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জন।

বিবিএসের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ৩ কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ৬ জনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশের কোনো জমি নেই। জরিপ বলছে, দেশের ৫ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র বা নিম্ন দারিদ্র্যসীমার মধ্যে রয়েছে। দেশের জনসংখ্যার বিচারে এ সংখ্যা ৯৫ লাখ ১০ হাজার ৪১৯। দেশে ভূমিহীনের সংখ্যা ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫৪। অর্থাৎ দেশের প্রায় ৯১ লাখ মানুষের নিজের জমি নেই।

ভূমিহীনদের আশ্রয়ণের লক্ষ্যে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সর্বশেষ ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর জন্য ব্যয় হবে ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সারা দেশের ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা অনুযায়ী গৃহনির্মাণ ও পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম চলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজকল্যাণ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল ইসলাম খান বলেন, সমাজের মানুষের খাদ্য, বাসস্থানসহ মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন হবে, এটাই নিয়ম। সরকার গৃহহীনদের গৃহ করে দিচ্ছে, এটা নিশ্চয়ই খুব প্রশংসনীয়। এছাড়াও শত শত মানুষ এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। নিশ্চয় এদেরও একটি করে ঘর হবে। মানুষকে গৃহহীন রেখে উন্নয়নের যথাযথ সুফল পাওয়া যায় না। 

 

 

কিউএনবি/আয়শা/০২ অক্টোবর ২০২৩,/দুপুর ১২:৫৪

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

December 2025
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৬
IT & Technical Supported By:BiswaJit