শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

প্রেমের টানে ভারতে গিয়ে আটক বাংলাদেশি যুবক

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ১৮০ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পরতে পরতে এতটাই রোমাঞ্চ, সাসপেন্স, যে যেকোনো চিত্রনাট্যকেই হার মানাবে! প্রেমিকের হাত ধরে বাংলাদেশে গিয়ে ঘর সংসার করার স্বপ্ন ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এক কিশোরীর। তাকে দেশে নিয়ে যেতে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন বাংলাদেশি প্রেমিক, সাথে ছিল তারই দেশের এক বান্ধবী। যদিও কিশোরীর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ১৬ বছর বয়সী ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে ভারতীয় পুলিশ। অন্যদিকে আটক করা হয়েছে ওই বাংলাদেশি যুবক-তরুণীকে। 

পুলিশের অভিযোগ, ভারতীয় ওই কিশোরীকে পাচার করা হচ্ছিল। আর সেই অভিযোগে আটক করা হয়েছে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে। 

জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রায় আট মাস আগে বাংলাদেশের এক যুবকের সাথে পরিচয় হয় পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার কুমারগ্রাম থানার ওই ষোড়শীর। এরপর ধীরে ধীরে প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়ে ওই কিশোরীকে। রাতে বাড়ির সকলেই যখন ঘুমিয়ে পড়তো, তখন মুঠোফোনে খুলতো ওই প্রেমের পর্দা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলতো প্রেমের গল্প। একসময় বাংলাদেশি ওই যুবকের মিষ্টি কথায় ফেঁসে গিয়ে তার হাত ধরে বাংলাদেশ পাড়ি দিয়ে সেখানে ঘরসংসার পাতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে যায় ওই কিশোরী।

কিন্তু ঘরের মেয়ে যে দীর্ঘ আট মাস ধরে ক্রমশই প্রেমের অতলে তলিয়ে গিয়ে বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি কিশোরীর পরিবার। 

গত ২৭ অগস্ট আচমকাই ওই কিশোরী নিখোঁজ হয়ে যায়, আর তার পরই হুঁশ ফেরে পরিবারের। পরদিন ২৮ আগস্ট দিনের আলো ফুটতেই কুমারগ্রাম থানার পুলিশের কাছে ওই কিশোরীর নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে জানায় তার পরিবার। 

এরপরই ওই তরুণীর খোঁজে চরম তৎপরতা শুরু হয় আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের অন্দরে। কারণ, ঘটনার গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করে পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত ছিল যে বড়সড় পাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছে ওই কিশোরী।

এরপর ওই কিশোরী অন্তর্ধান রহস্য খুঁজে বের করতে কুমারগ্রাম থানার দুঁদে কর্মকর্তা (ইন্সপেক্টর-ইন-চার্জ) বাসুদেব সরকারের উপর দায়িত্ব দেন জেলার পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী।

পাশাপাশি পুলিশ সুপার নিজেও রাত জেগে ওই কিশোরীর মোবাইল ফোনে ট্র্যাকিং শুরু করতে থাকেন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায় যে, ঠিক যখন যখন ওই কিশোরী তার মোবাইল ফোনটি চালু  করেছে, তখন তখনই তাকে উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য অসমের দিকে এগোতে দেখা গেছে। 

তদন্তে উঠে আসে বাংলাদেশের এক যুবক মো. আবদুল সুফিয়ান ও তারই এক সহযোগী বাংলাদেশি তরুণী রুবা আখতারের নাম। তদন্তে এও জানা যায়, আবদুল ও রুনা-উভয়েই গত ২৮ আগস্ট গুয়াহাটির একটি হোটেলে রাত কাটায়। বাংলাদেশের ওই তরুণ ও তরুণী নিজেদের পাসপোর্ট দেখিয়ে স্বামী-স্ত্রী’র পরিচয় দিয়ে হোটেলে ঠাঁই নিয়েছিল। ওইদিন তাদের সাথেই ওই হোটেলেই অবস্থান করেছিল ওই ভারতীয় কিশোরীও। 

এরপর ওই দুই বাংলাদেশির পাসপোর্টে থাকা মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে তদন্তে আরও গতি আনে পুলিশ। দেখা যায় ২৯ অগস্ট শিলং হয়ে ওই তিনজন ত্রিপুরার দিকে অগ্রসর হয়। সঙ্গে সঙ্গেই ত্রিপুরার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সহায়তা চান আলিপুরদুয়ার জেলার পুলিশ সুপার। 

গত ৩০ আগস্ট সকালে উত্তর ত্রিপুরার উনাকাটা ও কুমারঘাট থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দল মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে আসা একটি বাসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে দুই বাংলাদেশি যুবক-তরুণীকে আটক করে। সেই সাথে ওই বাস থেকেই উদ্ধার করা হয় অপহৃত ওই কিশোরীকেও। এরপর তাদের তিন জনকেই আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

আর তাতেই যবনিকা পড়ে ওই কিশোরীকে ভুলিয়ে বাংলাদেশ পাচার করার ছক। তদন্তে উঠে এসেছে, প্রেমের জালে ফাঁসিয়েই আলিপুরদুয়ারের ওই কিশোরীকে বাংলাদেশে পাচার করে বেচে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ওই দুই বিদেশি নাগরিক। 

পুলিশ ওই দুই বাংলাদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও ফুঁসলিয়ে অপহরণের মামলা রুজু করে শনিবার আলিপুরদুয়ার জেলা দায়রা ও জজ আদালতে পাঠায়। আদালত অভিযুক্তদের ৬ দিনের পুলিশ রিমান্ডের নির্দেশ দেয়। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ওই দুই বিদেশীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে চায় ওই পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জেলার অন্য কোথাও ওই পাচার চক্রের জাল ছড়িয়েছে কি না।

যদিও পাচারের অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক আবদুল সুফিয়ান। সে জানায় ‘ওই মেয়েটি আমার সাথে ঘুরতে গিয়েছিল। পাচার করার অভিযোগ সব ভুল।’ 

কুমারগ্রাম থানার কর্মকর্তা বাসুদেব সরকার জানান ‘বাংলাদেশি ছেলেটির মোবাইল নম্বর ট্র্যাক করেই আমরা তাদের সন্ধান পাই। মাঝে মাঝেই ও মোবাইল নাম্বারটা চালু করছিল। তারাই ওই ভারতীয় মেয়েটিকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছিল। আমরা তাদের কাছ থেকে বাংলাদেশী পাসপোর্ট, ভিসা পেয়েছি। সবগুলোই জব্দ করা হয়েছে। যেখান থেকে তাদের আটক করা হয়েছে, ওই পথ দিয়েই তারা বাংলাদেশে যাচ্ছিল।’ 

তিনি আরো জানান ‘এদিন আলিপুরদুয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই মামলাটি ওঠে। আদালত ছয় দিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়েছে।’ 

আলিপুরদুয়ার জেলার পুুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘সত্যিই ওই অপহরণের ছক বাঞ্চাল করতে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের ক্লাইম্যাক্সের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের দক্ষতায় শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। একবার দেশের সীমান্ত পার করে ফেললে ওই কিশোরীর আর কোনো হদিশ পাওয়া যেতো না, তাতে আমরা নিশ্চিত।

কিউএনবি/অনিমা/০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩,/দুপুর ১:৩২

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit