এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছায় সড়কের পাশে জেলা পরিষদের বড়-বড় গাছ গুলো কৌশল প্রয়োগ করে মেরে ফেলছে দুর্বৃত্তরা। নানা ভাবে গাছ হত্যা করলেও যেন দেখার কেউ নেই। গাছের গোড়ায় অতিমাত্রায় লবণ বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ, গাছের গায়ে এসিড নিক্ষেপ ও গোলাকার ভাবে বাকল উঠিয়ে করা হচ্ছে হত্যা। যাতে দ্রুত গাছ মারা যায় সে জন্য গাছের গোড়াই প্রতিদিন ঢালা হয় গরম পানি।জানা যায়, চৌগাছা-পুড়াপাড়া, চৌগাছা-নাভারণ, চৌগাছা-কোটচাঁদপুর, চৌগাছা-যশোর, চৌগাছা-ঝিকরগাছা ও চৌগাছা-মহেশপুর পাকা সড়কের দুই পাশে জেলা পরিষদের কয়েক হাজার বনজ বৃক্ষ রয়েছে। বর্তমানে এক একটি বৃক্ষের মূল্য প্রায় ২০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। গাছের সাথে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে যশোরের চৌগাছাউপজেলার বিভিন্ন সড়কে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। এমন কি কেউ বাধাও দিচ্ছেন না!।
মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে গাছের সাথে এমন নিষ্ঠুরতার প্রমাণ মিলেছে। চৌগাছা শহরের কুটি পাড়া এলাকায় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের কয়েকটি কড়ই গাছ গোলাকৃতিভাবে বাকল কেটে মেরে ফেলা হয়েছে। এসব গাছ সামান্য ঝড়ে ভেঙে পড়তে পারে। একই ভাবে চৌগাছা-কোটচাঁদপুর, চৌগাছা মহেশপুর, সড়কের দুই পাশে বেশ কিছু গাছ রাসায়নিক সার অথবা এসিড দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব গাছের বেশির ভাগ শাখা-প্রশাখা ও পাতা শুকিয়ে গেছে। গাছের বাকল (ছাল) কালো হয়ে গেছে। গাছগুলো অল্প কিছু দিনের মধ্যে শুকিয়ে মারা যাবে।স্থানীয় একটি চক্র রাতের অন্ধকারে গাছের বাকল কেটে ফেলছে। গোড়া থেকে দেড় থেকে দুই হাত ওপরে এমনটা করা হয়। এ ছাড়া কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কোনো কোনো গাছে এসিডও ঢেলে দেওয়া হয়। এমনকি গোড়ায় রাসায়নিক সার অতিমাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় লবণ। এসব পদ্ধতির ফলে ধীরে ধীরে কিছুদিনের মধ্যে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। পরে এই গাছ রাতের আধারে কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
চৌগাছা পৌর শহরের মধ্যে ডিভাইন সেন্টারের সামনে থেকে চৌগাছা-যশোর সড়কের কড়ইতলা এলকায় ডিভাইন গ্রুপের গার্মেন্টস পর্যন্ত বেশকিছু বড়-বড় কড়ই ও মেহগনি গাছ একই ভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। যাশুকিয়ে গেছে। অনেকেই বলেছেন গাছগুলো ইচ্ছাকৃত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারনা মড়ক লাগলে এলাকার রাস্তার ধারের সব গাছই মারা যেতো। শুধু স্থাপনার সামনের গাছ শুকিয়ে মারা গেছে। এ কারনেই এলাকাবাসির ধারনা রসায়নিক পদার্থসহ বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে গাছগুলো হত্যা করা হয়েছে স্থানীয়রা জানায়, গাছের পাশের জমির মালিক বা বাড়ীর মালিক রাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে কালো হয়ে যায় বাকল। এ সড়কে অনেক স্থানে বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মারা গেছে। অনেক স্থান থেকে গাছ কেটেও নেওয়া হয়েছে।এদিকে অন্য একটি সূত্র বলছে ,সড়কের মূল্যবান গাছ কাটার জন্য সংঘবদ্ধ একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। এদের সঙ্গে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের সখ্য রয়েছে।
এ ব্যাপারে চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, গাছের বাকল খাদ্য তৈরি ও সরবরাহে সহায়তা করে। উদ্ভিদ সূর্যের আলোর সাহায্যে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড দিয়ে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। গাছের উপরিভাগ ও মূলভাগের কোনোটিতে সংকট দেখা দিলে গাছ বা উদ্ভিদ মারা যায়। সে কারণে গাছের বাকল না থাকলে সেই গাছ বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না।এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, গাছের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না। সুনিদিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সকল জনগনকেও সচেতন হতে হবে।
কিউএনবি/অনিমা/৮ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ১০:১১