শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, ধর্মপাশা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-দালাল পুজিবিরোধী আপোসহীন কৃষক জননেতা মতিয়র রহমান গতকাল ৩ আগষ্ট ২০২৩ খ্রি: তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ ঘটে সকাল ৯ ঘটিকায় তার নিজবাড়ী উপজেলার চকিয়াচাপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায় ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম গভীর শোক প্রকাশ করেন।
এছাড়াও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি সুরুজ আলী ও সাধারণ সম্পাদক ছাদেক মিয়া, বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ন-আহবায়ক সুজন আহমদ ও সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন আহমদ এক যৌথ শোক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। নেতৃবৃন্দ শোক সন্তোপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, প্রয়াত মতিয়র রহমান ১৯৪৪ সালের ১ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নেত্রকোণা সরকারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে পড়ার সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনামলে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়। এর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্ররা ফুসে উঠে এবং ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন সংগঠিত করে। এই আন্দোলনে মতিয়র রহমান অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হোন। পরবর্তীতে স্নাতক (পাস) সমাপ্ত না করেই তিনি কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির সাথে যুক্ত হোন। এ সময় উপজেলার গাবী গ্রামের বলাইডর মাঠে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান কৃষক সমিতির প্রাদেশিক সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা অজয় ভট্টাচার্যের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তৎকালীণ সময়ে শ্রমিক শ্রেণীর মহান রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক জোসেফ স্তালিনের মৃত্যুর পর সংশোধনবাদীরা পার্টির নেতৃত্বে এসে সংশোধনবাদী তিন শান্তি-নীতির তত্ত্ব গ্রহণ করে। এ পেক্ষিতে সংশোধনবাদীদের দ্বারা কমিউিনিস্ট আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও মার্কসবাদ-লেনিনবাদকে প্রতিষ্ঠায় বিশ^ব্যাপী আপোসহীন কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আমলে মার্কসবাদ-লেনিনবাদী তত্ত্বের আলোকে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে প্রতিষ্ঠায় কমরেড আবদুল হক, হেমন্ত সরকার, অজয় ভট্টাচার্য ও দীনেশ চন্দ্র চৌধুরীদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী কমিউনিস্ট তৎপরতা অগ্রসর হলে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে মতিয়র রহমান তিন শান্তি নীতির তত্ত্ব তথা ক্রুশ্চেভ সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউিনিস্ট পার্টির (এম-এল) এর ধারাবাহিকতায় এদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে ধারাবাহিক ভূমিকা অগ্রসর করেন। এ সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি সংশোধনবাদী তিনবিশ্ব তত্ত্ব সামনে আনলে এর বিরুদ্ধে তিনি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরেন।
১৯৮৪ সালের দিকে সুনামগঞ্জ জেলায় ভাসান পানির আন্দোলন শুরু হলে মতিয়র রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ৮৮ সালে সংঘঠিত হওয়া মারাম বাধ আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। উপজেলার গাবী গ্রামের ভূমিহীন কৃষক লালচান হত্যার প্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে তিনি ঐতিহাসিক ভূমিহীন আন্দোলন গড়ে তোলায় নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠা হলে তিনি ধর্মপাশা উপজেলায় ফ্রন্ট গড়ে তোলার কাজে উদ্যোগী ভূমিকা ও নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সাল থেকে পুনরায় শুরু হওয়া সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান ভাসান পানির আন্দোলনে মতিয়র রহমানের রয়েছে উদ্যোগী ও সাহসী নেতৃত্বের ভূমিকা। মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি কৃষক জনগণের মুক্তির আন্দোলনে নিরলস ভূমিকা রেখে যান। আজীবন বিপ্লবী এ নেতা জনগণের মুক্তির আন্দোলন অগ্রসর করতে অকৃতদার থেকে যান।
কিউএনবি/অনিমা/০৪ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ৯:৫৬