আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং তার স্ত্রী সোফি গ্রেগরি। অপ্রত্যাশিত এ ঘোষণা বিস্মিত করেছে অনেককে।
অনেকের কাছেই ‘ঈর্ষণীয়’ ছিল ট্রুডো-সোফির দাম্পত্য জীবন। এ নিয়ে চর্চাও হয়েছে বিস্তর। বিচ্ছেদের ঘোষণার পর তারা নতুন করে আলোচনায় আসেন। এ আলোচনায় ট্রুডো-সোফির পরিচয়, প্রেম, বিয়ের প্রসঙ্গও ঘুরেফিরে আসছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বুধবার (২ আগস্ট)।
বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আলোচ্য বিষয় এ দুজন। অনেকে আবার জানতে চান এই বিচ্ছেদ ট্রুডোর রাজনীতিতে কী প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। এ নিয়ে কানাডার সংবাদমাধ্যমেও লেখালেখি চলছে।
এ সূত্রে আলোচনায় উঠে এসেছেন জাস্টিন ট্রুডোর বাবা পিয়েরে ট্রুডো। ১৯৭১ সালে গোপনে মার্গারেট সিনক্লেয়ারকে বিয়ে করেন পিয়েরে ট্রুডো। ছয় বছর একসঙ্গে থাকার পর ১৯৭৭ সালে পিয়েরে ট্রুডো ও মার্গারিট ট্রুডো আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। ১৯৮৪ সালে তাদের চূড়ান্ত বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। পিয়েরে তখন কানাডার প্রধানমন্ত্রী।
ওই সময় পিয়েরে বলেছিলেন, জনগণের শোয়ার ঘরে রাষ্ট্রের কোনো জায়গা নেই।
তার কথাটি কানাডার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের প্রভাষক স্টুয়ার্ট প্রেস্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো কানাডায় কোনো রাজনীতিবিদের ব্যক্তিগত জীবন রাজনৈতিক সমালোচনা বা তদারকির আওতায় আসে না। যদি না সেটা কোনো বিতর্ক তৈরি করে।
ট্রুডো এবং সোফির বিয়ে বিচ্ছেদ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো বিতর্ক দেখা দেয়নি। তারা স্বাভাবিকভাবে বিচ্ছেদে সম্মত হয়েছেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধা অটুট রাখার কথাও বলেছেন ট্রডো।
তা ছাড়া তাদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের।
ট্রুডো-সোফির পরিচয়, প্রেম, বিয়ে নিয়ে ২০১৯ সালে একটি প্রতিবেদন করেছিল কানাডার অনলাইন সংবাদমাধ্যম ‘নার্সিটি’। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোফির সঙ্গে ট্রুডোর পরিচয়-প্রেম-বিয়ের গল্পটি ছিল অসাধারণ। তারা পরস্পরকে ছোটবেলা থেকেই চিনত, জানত। কারণ, সোফি ছিলেন ট্রুডোর ছোট ভাই মিশেলের সহপাঠী। এমনকি ছোটবেলায় ট্রুডোদের বাড়িতে সোফি আসা-যাওয়া করতেন, আড্ডা দিতেন।
২০০৩ সালে ট্রুডো ও সোফি একসঙ্গে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সে সময় তারা একে অপরের সঙ্গে ‘নতুন’ করে পরিচিত হন। তখন তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
কিছুদিন পর ট্রুডোকে ই-মেইল করেন সোফি। ই-মেইলে সোফি লেখেন, ট্রুডোর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ব্যাপারটি তিনি উপভোগ করেছেন। কিন্তু সোফির এই ই-মেইলের কোনো জবাব দেননি ট্রুডো।
একই বছরের গ্রীষ্মের শেষ দিকে সড়কে ট্রুডো-সোফি দেখা হয়ে যায়। এ দেখায় ট্রুডোকে উপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন সোফি। তবে এবার সোফিকে ট্রুডো তার সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন।
সোফি বলেছিলেন, ট্রুডোর যদি সত্যিই তার (সোফি) সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তবে তিনি যেন তাঁকে (সোফি) সেই ই-মেইলে জবাব দেন।
প্রথম ডেটে সোফিকে ট্রুডো বলেছিলেন, তিনি তার বাকি জীবন সোফির সঙ্গে কাটাতে চান। ট্রুডো জানিয়েছিলেন, এমন ঘোষণার পর তারা দুজনই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। কারণ, তারা দুজনই খুব সংবেদনশীল মনের মানুষ ছিলেন।
প্রথম ডেটের এক বছরের বেশি সময় পর সোফিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন ট্রুডো। ২০০৫ সালের ২৮ মে তারা বিয়ে করেন। ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন সন্তানের মা-বাবা হন।
বিভিন্ন সময়ে অবশ্য ট্রুডো তার রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক সফরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গেছেন। জনসমাবেশে তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে। তবে এ কারণে যে তাদের বিচ্ছেদ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে এমন কোনো আলোচনা কানাডায় ওঠেনি।
কানাডার বাজার পর্যবেক্ষক একটি প্রতিষ্ঠান ‘লেজার’র নির্বাহী ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু এনস এ বিষয়ে বলেন, যদি উভয়ের সম্মতিতে এ বিচ্ছেদ হয় এবং এ কারণে হয় যে (ট্রুডোর) কাজের চাপের কারণে; তাহলে রাজনীতিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়বে না। উল্টো তা ইতিবাচক হবে।
তিনি বলেন, যদি এমন হয় যে পরবর্তীতে কোনো ঘটনা বের হয়ে আসছে, তাতে ট্রুডোর রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে অ্যান্ড্রু এনস আরো বলেন, ট্রুডো সবসময় তার পারিবারিক বন্ধনকে রাজনীতির ময়দানে নিয়ে এসেছেন। ২০১৮ সালে পরিবারেরর সবাইকে নিয়ে তিনি ভারত ভ্রমণে যান। যা নিয়ে রাজনতিক মহলে আলোচনা ছিল। তবে শেষে দিকের কয়েক বছরে পরিবারকে তিনি খুব কমই প্রকাশ্যে এনেছেন।
তার আরো মন্তব্য, সম্প্রতি ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমেছে। এক জরিপে বলা হয়েছে ট্রুডো গত এক দশকে সবচেয়ে অযোগ্য প্রধানমন্ত্রী। তবে তার বিরোধীরা যদি চাঞ্চল্যকর তথ্য না পায়, তাহলে এ বিচ্ছেদ ভালো বা খারাপ কোনো কিছু যোগ করবে না ট্রুডোর রাজনৈতিক ভাগ্যে।
কিউএনবি/অনিমা/০৩ অগাস্ট ২০২৩,/রাত ১১:৩২