আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্বের অন্যতম প্রধান শস্য ও তেলবীজ উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেন। সেই দেশের উৎপাদিত খাদ্যশস্য চাহিদা মেটায় প্রায় ৪০ কোটি মানুষের। শুধু তাই নয়, মোট খাদ্যশস্যের দুই-তৃতীয়াংশ আসে শুধু ইউক্রেন থেকে। এসব তথ্য জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (ডব্লিউএফিপি) থেকে ওঠে এসেছে।
পরে আরও কয়েকবার উভয়পক্ষ চুক্তিটি নবায়ন করে। এ যাত্রায় গত সোমবার (১৭ জুলাই) ছিল চুক্তিটি নবায়নের শেষ দিন। রাশিয়া বেশ আগে থেকেই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় মস্কো। পুতিন প্রশাসনের অভিযোগ, চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার সার ও শস্য রপ্তানি সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি।
এর আগে যুদ্ধের ফলে দেশটির এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তবে শস্যচুক্তি খাদ্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে বেশ সাহায্য করেছিল। লেবানন, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশে সহায়তা হিসেবে জাতিসংঘে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) যে পণ্য পাঠিয়েছিল, সেখানেও ইউক্রেন ৭ লাখ ২৫ হাজার ২০০ টন বা দুই দশমিক ২ শতাংশ সহায়তা করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় গোটা বিশ্বে খাদ্য সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি লাগামহীন হয়ে পড়বে খাদ্যের দাম। ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে গম, আটা ও ময়দা ছাড়াও এসব পণ্যের তৈরি সব খাবারের দাম। চরম অনিশ্চয়তায় পড়বে খাদ্য নিরাপত্তা। বৈশ্বিক খাদ্য ও পানি নিরাপত্তা প্রোগ্রামের পরিচালক কেটলিন ওয়েলস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ চুক্তি নবায়ন না হলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। কেননা অন্য উৎস থেকে আমদানি আরও সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হবে। ফলে খাদ্যের সংকট এবং দাম বৃদ্ধি অবধারিত।
চুক্তি থেকে মস্কোর বের হয়ে যাওয়া নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এরই মধ্যে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে করা শস্যচুক্তি থেকে রাশিয়ার বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে বিশ্বের কোটি কোটি ক্ষুধার্ত মানুষ বিপাকে পড়বে।
যেসব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
শস্যচুক্তির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অবরুদ্ধ ইউক্রেনীয় শস্য রপ্তানির পথ সুগম করে বিশ্বের খাদ্য সংকট দূর করা। সবশেষ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত চুক্তির অধীনে ইউক্রেন প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টন শস্য ও অন্যান্য খাবার সরবরাহ করেছে। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন সাধারণত ২ কোটি ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টন শস্য রপ্তানি করত।
রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোয় ইউক্রেনের খাদ্য শস্য রপ্তানি ও সরবরাহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বিপর্যয়কর প্রভাব পড়বে সেসব দেশের ওপর, যারা ইউক্রেনীয় শস্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। জলবায়ু পরিবর্তন, যুদ্ধ-সংঘাত ও অন্যান্য কারণে এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশই এরই মধ্যে চরম খাদ্য সংকট মোকাবিলা করছে।
বিশ্বে প্রতিবছর যত গম উৎপাদন হয় তার প্রায় ১০ শতাংশই উৎপাদন করে ইউক্রেন। আর ভুট্টা উৎপাদন করে ১৫ শতাশ। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই ইউক্রেনের এসব শস্যের প্রধান ক্রেতা। কম মাথাপিছু আয়ের এই দেশগুলোতে এরই খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য-উপাত্ত বলছে, ইউক্রেনের খাদ্যশস্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল দেশগুলোর তালিকার প্রথম দিকেই রয়েছে লেবানন, পাকিস্তান, লিবিয়া, ইথিওপিয়া, তিউনিশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন ও এশিয়ার পাকিস্তান খাদ্য সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও রয়েছে।
কিউএনবি/আয়শা/২১ জুলাই ২০২৩,/দুপুর ১২:৩৪