নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত জনসভায় মানুষের ঢল নামলেও একই দাবিতে তাদের সমমনা দলগুলোর কর্মসূচিতে লোকজনের ব্যাপক সংকট ছিল।লোকের অভাবে কয়েকটি দল সংবাদ সম্মেলন করেই কর্মসূচি শেষ করে দেন। কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে মাঠেই ছিল না ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সংগঠন।
জানা যায়,১৯৯৮ সালে বিএনপির নেতৃত্বে জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টি নিয়ে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। জোটের ফসল হিসেবে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কে হারিয়ে বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি।২০০৭ সালে জরুরী অবস্থা জারির পর এই জোটে প্রথম মনোমালিন্য দেখা যায়। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তির দাবিতে মাঠে ছিল না জোটের নেতাকর্মীরা।
২০০৮ সালে মতিউর রহমান নিজামী জেলখানা আটক হলে জামায়াতের নেতারা নড়েচড়ে বসে। নিজামীর মুক্তির দাবিতে মাঠের আন্দোলনের সময় তারা খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মুক্তিও দাবি করে। ফলে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দুরত্ব কমে আসে।২০০৮ সালের একতরফা নির্বাচনে জামায়াতের নেতারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিতে বেগম খালেদা জিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করে বলে জানা যায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা খালেদা জিয়ার উপর ক্ষুব্ধ হন বলে জানা যায়। মঈন উদ্দিন এবং ফখরুদ্দিনের সেই সাজানো নির্বাচনে বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবি হয়। ফলে আবারও বিএনপির সাথে জামায়াতের দুরত্ব সৃষ্টি হয়।
২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের আপত্তি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর বৃহত্তর আন্দোলনের স্বার্থে বিএনপি তাদের জোট সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত নিলে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল বিএনপির সমমনা ১৭ টি দল নিয়ে চারদলীয় জোট থেকে ১৭ দলীয় জোটের সৃষ্টি হয়। একই বছর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য কর্ণেল অলি আহমদ এর নেতৃত্বে এলডিপি জোটে যোগদান করলে ১৮ দলীয় জোটের সৃষ্টি হয়।২০১৩ সালে বিএনপির নেতৃত্বে রাজপথে আন্দোলন চলাকালীন সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে এসে কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে জোট করলে ১৯ দলীয় জোটের সৃষ্টি হয়।২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী বিমল বড়ুয়ার সাম্যবাদী দলের নেতা সাঈদ আহমদ এর নেতৃত্বে একটি অংশ বিএনপির সাথে জোটে যোগদান করলে ২০ দলীয় জোটের সৃষ্টি হয়।২০১৫ সালে বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিতে জামায়াত ছাড়া অন্য দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের তেমন ভূমিকা ছিল না।
বিএনপি- জামায়াতের শত শত নেতাকর্মী পুলিশী নির্যাতনের শিকার হলেও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীদের মাঠে দেখা যায়নি।২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ডক্টর কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠিত হলে ১/১১ এর সময়ে কামাল হোসেনের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ২০ দলীয় জোট থেকে কয়েকটি দল বের হয়ে যায়। তবে এসব দল গুলোর একটা অংশ বিএনপির সাথে জোটে থেকে যায়। ফলে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট । ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ভরাডুবির পর ঐক্যফ্রন্ট অচল হয়ে যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জোট ভেঙে দিয়ে শরীক দল গুলোর সাংগঠনিক শক্তি পরীক্ষা করতে জোটের বাইরে থেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০ ডিসেম্বর থেকে ১০ দফা এবং ২৭ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করে আসছে সমমনা দল গুলো। কিন্তু তাদের কর্মসূচিতে বরাবরই লোকের অভাব দেখা যায়। আজ ১২ জুলাই (২০২৩) বুধবার বিকেলে বিএনপির নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি রাজপথে ফায়সালা করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মোড় বেছে নেয় সমমনা দলগুলোর নেতারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণ অধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়ার নেতৃত্বাধীন অংশের কর্মসূচিতে ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী মাত্র।। তাদের পশ্চিম পাশে সমমনা পেশাজীবীদের কর্মসূচিতে হাতেগোনা ১০-১২ জন লোকজন অংশগ্রহণ করেন। বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী লোকজন হবে সর্বোচ্চ ৫০জন,নয়াপল্টনের মসজিদ গলিতে লেবার পার্টির কর্মসূচিতে হাতেগোনা কয়েকজন লোক দেখা যায়।একই অবস্থা গণফোরাম সহ অন্যান্য দল গুলোর। লোকের অভাবে সংবাদ সম্মেলন করে এক দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন গণতন্ত্র মঞ্চ ও ১২ দলীয় জোট। গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং ১২ দলীয় সমমনা দলগুলো রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মাঠেই ছিল না ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সংগঠন:
কোটা সংস্কার আন্দোলন এর মূল প্লাটফর্ম
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর একাংশের আহবায়ক ইসমাইল হোসেন সম্রাটের সংগঠন আজকের কর্মসূচিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থাকার কথা থাকলেও তাকে এবং তার দলের কাউকে মাঠে দেখা যায়নি।ঐ সংগঠনের সাবেক কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, ইসমাইল হোসেন সম্রাট ঐ সংগঠনের স্বঘোষিত আহবায়ক কমিটির নেতা। সংগঠনের মূল আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব থাকাকালে তিনি সংগঠনের জন্য কিছুই করতে পারে নি।ঐ সংগঠনের আহ্বায়ক এপিএম সুহেল বর্তমানে নিষ্ক্রিয়।গত মার্চ মাসে নিজেই নিজেকে আহবায়ক ঘোষণা করেন তিনি। তিনি এক সময় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাক্তার ইমরান এইচ সরকারের সাথে শাহবাগের আন্দোলনে ছিলেন।পরে গণফোরামের ছাত্র সংগঠন “ছাত্র ফোরাম ” এর সদস্য সচিব হন।একই সঙ্গে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কে নিজের দখলে রাখেন। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর মাধ্যমে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। মূলত খসরুর মাধ্যমেই বিএনপির সমমনা দলগুলোর খাতায় নিজের নাম লিখান ভবঘুরে ইসমাইল হোসেন সম্রাট!
রাজনৈতিক সচেতন নাগরিকদের মতে,
“ওয়ান ম্যান , ওয়ান পার্টি” খ্যাত এসব দল গুলোর সুনির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক আদর্শ নেই। কোন সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মিশন এবং ভিশন নেই।।এসব নেতারা কোন না কোন রাজনৈতিক দল থেকে পদবঞ্চিত হয়ে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধরে নিজেরাই একটা দল গঠন করেছেন। নিজস্ব লোকের অভাবের রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার মতো শক্তি তাদের নেই। তাই তারা বড় দল গুলোর উপর ভর করে জাতীয় সংসদে যেতে মূলত জোটে যোগদান করেন।