ডেস্ক নিউজ : মঙ্গলবার (২৭ জুন) উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতাদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে সকাল থেকে কখনো অঝোর ধারায়, আবার কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তবে সময়ের গড়াতে বৃষ্টি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতার সংখ্যাও বাড়ছে।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে বসা ১৯টি হটের প্রায় সব হাটেই বিপুল সংখ্যক গবাদিপশুর সমাগম হয়েছে। তবে বিক্রেতা এবং ক্রেতারা দরদামেই আটকে থাকছেন। গরুর দাম বেশি থাকা নিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, ‘ইলিশ আর পাঙ্গাসতো এক না, তেমনি দেশি ও বিদেশি গরুও এক না।’
হাটে সরেজমিনে দেখা গেছে, এক ক্রেতা শুরুতে একটি গরুর দাম ৭০ হাজার টাকা বলেন, এরপর ৮০ হাজার টাকা বললেও বিক্রেতার সব শেষ দাম হলো ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ফলে অগত্যা ফিরে যেতে হলো ক্রেতাকে। সেই গরু বিক্রেতা জানান, ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হলে এই গরুটি বিক্রি করা সম্ভব। এ দামের থেকে কমে বিক্রি করলে আমার অনেক লোকসান গুণতে হবে।
দাম বেশি থাকার বিষয়ে বিক্রেতারা জানান, ক্রেতারা গরুর যে দাম বলছে, তাতে তাদের পোষাচ্ছে না। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কম দামে পশু বিক্রি করতে চান না তারা। তাছাড়া দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের বন্যা হওয়ার কারণে গবাদি পশুর পিছনে খরচও বেশি হয়েছে। তাই দাম বেশি হাঁকা হচ্ছে।
ফলে সকাল থেকে হাটে প্রত্যাশার তুলনায় গরু বিক্রি না হওয়ার কথা জানান বিক্রেতারা। তবে আরও একদিন সময় থাকায় তারা আশা করছেন আজ বিকেলের পর থেকে বা আগামীকাল বিক্রি বাড়বে। তবে গত দুদিনের তুলনায়, ব্যাপারীরা দাম একটু কম হাঁকছেন বলে জানান ক্রেতারা। তারা জানান, দাম কিছুটা পড়তির দিকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয় তো দাম আরও কমবে। যদিও তাদের দাবি, সেই দামও সহনীয় নয়।
গরুর দাম বেশি থাকার অভিযোগ করে এক ক্রেতা বলেন, গত বারের তুলনায় এবার গরুর দাম ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি হাঁকা হচ্ছে। উত্তরা দিয়াবাড়ি হাটের মতো, রাজধানীর বেশিরভাগ হাটের অবস্থাই একইরকম। একে তো বিক্রি কম, অন্যদিকে মরার ওপর খাড়ার ঘাঁ হয়ে হাজির হয়েছে বৃষ্টি। যে কারণে অনেকটাই ক্রেতাশূন্য রাজধানীর হাটগুলো। কখনো মুষলধারে, আবার কখনো ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি মাড়িয়ে, এরপরও যারা হাটে আসছেন তারা সবাই শুধু দরদামই করছেন। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটগুলোয় বাড়তে থাকে ক্রেতা সমাগম।
এক বিক্রেতা বলেন, আমি দুইটি গরু বিক্রি জন্য নিয়ে এসেছি। তার মধ্যে একটি বিক্রি করতে পেরেছি। আরেকটি এখনও বিক্রি করতে পারিনি। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি। এর জন্য ক্রেতা কম। আরেক বিক্রেতা বলেন, তিন দিন হলো এসেছি। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। ফলে গরুর খাওয়া ববাদ তো খরচ হচ্ছেই। হাটে ৩৭টি গরু আনা কথা জানিয়ে এক বিক্রেতা বলেন, এখনও একটি গরু বিক্রি করতে পারিনি। বাড়ি যাওয়ার ভাড়াও আয় হয়নি।
অবশ্য বরাবরের মতো ভিন্ন আক্ষেপ ক্রেতার। এক ক্রেতা বলেন, গরুর দাম চড়া। যে দাম চাচ্ছে তা দমাদামি করেও কমানো যাচ্ছে না। এত দামে গরু কেনা দুস্কর। তবে আগের দুই দিনের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা কমার কথাও জানান ক্রেতারা। এক ক্রেতা বলেন, গরুর দাম তো অনেক ছিল, তবে এখন কিছুটা কমছে। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে দিয়াবাড়ি হাট পরিদর্শনে আসেন উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্মার্ট হাটের কারণে সহজেই ঝুঁকিমুক্তভাবে মূল্য শোধ করছেন ক্রেতা।
অতিকুল ইসলাম জানান, ‘স্মার্ট বাংলাদেশে, স্মার্ট হাট। বাংলাদেশ ব্যাংক ও উত্তর সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এ কাজটি করেছে। ফলে ক্রেতার নগদ অর্থ নিয়ে হাটে আসার দরকার নেই। পাশাপাশি বিক্রেতারও এত পরিমাণ নগদ অর্থ নিয়ে মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার ঝুঁকি নেয়ারও দরকার নেই।’আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বাংলাদেশে ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে। এবার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ১৯টি কোরবানির পশুর হাট বসেছে।
কিউএনবি/আয়শা/২৮ জুন ২০২৩,/বিকাল ৪:১৪