খোরশেদ আলম বাবুল শরীয়তপুর প্রতিনিধি : জাজিরার বিলাসপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের ফের সংঘর্ষে ককটেলের আঘাতে একজনের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন সহ অন্তত ১৫ জন নারী ও পথচারী আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে দু’টি গ্রামের কমপক্ষে ২০টি বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে বলে অছিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিলাসপুরের ৫টি স্থানে মুহুর্মুহু শতাধিক ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধাওয়া পাল্টা ও এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয় গত ১ মাসের মধ্যে বিলাসপুরে ৪ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
৪ বারের সংঘর্ষের ঘটনায় জাজিরা থানার একাধিক মামলায় ১৫ জন আসামি গ্রেফতার করে জেলা হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ এলাকা থেকে ১৬টি ককটেলবোমা ও ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এর পরেও সুযোগ বুঝে বিচ্ছিন্নভাবে দুই পক্ষ সুযোগ বুঝে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল কুদ্দুস বেপারী এবং উপজেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারী থেকে এযাবত ৪টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোতে প্রায় দুই হাজার ককটেলবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে অর্ধশতাধিক লোক আহত হয়। ককটেলবোমা ফাটিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকার নারী, শিশু, বৃদ্ধ সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতংক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার ভোর ৬টা থেকে বিলাসপুরের ৫টি স্থানে ককটেলবোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে ককটেলের আঘাতে সুজন মাদবর (২৭) নামের একজনের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও আরো অন্তত ১৪ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালিন সময়ে চেরাগআলী বেপারী কান্দি ও সারেং কান্দি গ্রামের অন্তত ২০টি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
সংঘর্ষে আহতদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ও গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠাানো হয়েছে। ককটেলের আঘাতে হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া সুজন মাদবরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ এলাকা পরিদর্শন করে সতর্কবার্তা জারি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আব্দুল জলিল মাদবর বলেন, গতকাল কুদ্দুস বেপারীর লোকজন আমার সমর্থক সুজন মাদবরের বাড়িতে অতর্কিতে হামলা চালায়। আজও একই ভাবে আমার প্রতিপক্ষের লোকজন আমার সমর্থকদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালালে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় ককটেলের আঘাতে আমার সমর্থক সুজন মাদবরের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, আমার প্রতিপক্ষ সুযোগ পেলেই আমার সমর্থকদের বাড়ি-ঘর সহ আমার বাড়িতে হামলা চালায়। আজও অন্তত ২০-২৫টি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটায়। এতে আমার অন্তত ১০-১২ জন সমর্থক আহত হয়। জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ টহল আরো জোরদার করি। এলাকার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: কামরুল হাসান সোহেল জানান, ধারাবাহিক এই সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসন সহ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাথে যৌথভাবে জোর প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। এই সংঘর্ষের স্থায়ী সমাধানের জন্য আমরা সকলের সহযোগিতায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
কিউএনবি/আয়শা/০১ মার্চ ২০২৩,/সন্ধ্যা ৬:৫৮