রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
পরিবারে সুখ ফেরাতে বিদেশে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন শার্শার রনি শার্শায় গৃহবধূকে গনধর্ষণের অভিযোগ কোম্পানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তরুণের মৃত্যু মনিরামপুর প্রেসক্লাবের দাতা সদস্যের বোনের ইন্তিকাল মনিরামপুরে রশীদ বিন ওয়াক্কাসকে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা আটোয়ারীতে কিন্ডারগার্টেনের কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ পাঁচদোনা টু ডাঙ্গা চারলেন সড়ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে  চৌগাছায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের উল্টো রথযাত্রা অনুষ্ঠিত দৌলতপুরে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন চৌগাছায় ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে বিএনপি নেতাকে পিটিয়েছে প্রতিবেশী পুলিশ সদস্য

চিরভাস্বর আল্লামা ফুলতলী (র:)

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি।
  • Update Time : সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৭৯ Time View

শহিদ আহমেদ খান সাবের,সিলেট প্রতিনিধি : আল্লাহর দ্বীন প্রচার ও পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে রাসুল (সা.)-এর উত্তরাধিকারী হিসেবে আলেম উলামাগণ সমাজের আলোকবর্তিকা। যারা রাসুল (সা.)-এর অনুপম আদর্শ ও সুন্দরতম আখলাক নিজেদের মধ্যে লালন করতেন। তাঁরা মানুষের কল্যাণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন। সমাজ ও মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিতেন। আর উলামাগণের মধ্যে কতেক ছিলেন সুফী-সাধক বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী। শরীয়তের জ্ঞানের পাশাপাশি ছিল মা’রিফাত বা তাসাউফের জ্ঞান।

যারা সমাজের মানুষদেরকে যেভাবে ইলমে তাফসীর, ইলমে হাদীস, ইলমে ফিকহ সহ নানাবিধ জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে সমাজের একদল মানুষকে তাজকিয়াতুন নাফস বা আত্মার পরিশুদ্ধির দীক্ষা প্রদান করেছেন। তাযকিয়াতুন নাফস, ইলমে তাসাউফ বা আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে আল্লাহ’র প্রিয় বান্দা হিসেবে তৈরী করতে সবসময় যারা ছিলেন তৎপর। এসব ওলি-দরবেশের মধ্যে স্বার্থক একটি উজ্জ্বল নিদর্শন ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারী আমাদের প্রিয় রাহবার, জামানার শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ, মুর্শিদুনা শামসুল উলামা আল্লামা ফুলতলী (রহ.) অন্যতম।

আল্লামা ফুলতলী (রহ.) এর ধর্মীয় চেতনায় শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি আধ্যাত্মিক বিশ্বাস ও ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় সুফিবাদী চিন্তা চেতনার প্রকাশ ও প্রচার ঘটেছে উনার হাতে বিস্তর। তিনি ছিলেন ইলমে তাসাউফের ক্ষেত্রে উচ্চাসনে আসীন। যার কারণে, তিনি সমাজের সর্বসাধারণের কাছে সহজে মিশে গিয়ে ইসলামের বাণী প্রচার করতে পেরেছিলেন। তিনি আমাদের সমাজ ও জাতীয় জীবনে এমন একজন ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিভা, যিনি ধর্ম, আধ্যাত্মিকতা, সাহিত্য, সমাজচিন্তা, রাষ্ট্রনীতি, নৈতিকতা, জীবন ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও ইসলামি জ্ঞান এবং কোরআনের শিক্ষা বিস্তার ছাড়াও সাধনার প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন এক পূর্ণমহিরূহ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রতিটা মাহফিলে ইলমে শরীয়তের আলোচনার সাথে ইলমে মা’রিফাতকে গ্রহণ করতে জ্ঞানবানদেরকে নসীহত করতেন।

এমন খুব কমই মাহফিল ছিল যেখানে তিনি ইলমে শরীয়তের পাশাপাশি ইলমে মা’রিফাত গ্রহণের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা বলেননি। রাষ্ট্র, সমাজ, দেশের বিভিন্ন অন্যায়-অমূলক কার্যকলাপকে দূর করতে আন্দোলনের পাশাপাশি আল্লাহ’র আরো প্রিয় হতে খানকা, যিকির আর মাহফিলের আয়োজনে ছিলেন সদানিষ্ট। নিজেকে আল্লাহ তা’য়ালা ও তাঁর রাসুল (সা.) এর প্রিয় থেকে প্রিয়তম করে তুলতে নির্জনে আল্লাহ’র ধ্যানে মগ্ন হতেন। কখনও বা ছুটে যেতেন নির্জন নিরবে মাটির গুহায়। ৯৫ বছরের সুদীর্ঘ জীবনে তাঁর বহুমুখী প্রতিভা, সৃজনশীল কর্মদক্ষতা, পরমতসহিঞ্চুতা, ধর্মীয় উদার দৃষ্টিভঙ্গি, মানবীয় ব্যক্তিত্ব এবং সর্বোপরি তাঁর সহজ-সরল অনাড়ম্বর, নিরহংকার ও নির্লোভ ধর্মীয় জীবন সাধনায় তাকে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণে সহায়তা করেছে।

আল্লামা ফুলতলী (রহ.) এর জীবন শুধু জ্ঞান সাধনায়ই ভাস্বর ছিল না, কর্মসাধনায়ও ছিল সদা তৎপর। যার আপাদমস্তক ছিল রাসুল (সা.) এর আদর্শে উদ্ভাসিত। তাঁর প্রতিটি কাজে ইহসান পরিলক্ষিত হতো। তাঁর বয়ান-নসীহত, ইসলামের খেদমত বা ইবাদত বন্দেগীর মধ্যে উপলদ্ধি করা যেতো। ইহসান আধ্যাত্মিকতা ছাড়া অর্জন করা কঠিন। তাযকিয়াতুন নাফস বা আত্মার পরিশুদ্ধি ছাড়া মানুষ আল্লাহ’র প্রিয় হতে পারে না। আমাদের মুর্শিদুনা আল্লামা ফুলতলী (রহ.) ইলমে তাসাউফের দীক্ষায় ছিলেন দীক্ষিত। ইলমে তাসাউফের ক্ষেত্রে তাঁর সিলসিলা রাসুল (সা.) পর্যন্ত পৌঁেছছে। তিনি কুতবুল আওলিয়া বদরপুরী (রহ.) নিকট থেকে চিশতিয়া, কাদিরিয়া, নকশ্বন্দিয়া, মুজাদ্দিদিয়া ও মুহাম্মদিয়া তরীকার সিলসিলা গ্রহণ করেছিলেন।

এছাড়াও নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত এবং মজলুম মানুষের পক্ষে ছিলেন সু-উচ্চ কন্ঠস্বর। তাঁর সুদীর্ঘ জীবন দ্বীনী খিদমতের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বীন ইসলামের খিদমত আনজাম দিয়ে গেছেন, তাঁর দ্বীনী খিদমত এই পৃথিবীতে বিরল, তিনি তাঁর গোটা জীবন কুরআনের তরে উৎসর্গ করেছেন। তিনি ছিলেন জালিম ও রাসুল (সা.) এর শত্রুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। অবিভক্ত বাংলার রাজনৈতিক ঘটনাগুলোর ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপুরুষ। তিনি আমাদের সুদীর্ঘ গৌরবময় ধর্মীয় ও জাতীয় ঐতিহ্যের সত্যান্বেষী কালজয়ী ব্যক্তিত্ব। এ দেশে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠায় সর্বমহলে অর্জন করেছেন ঈর্ষণীয় খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতা। দ্বীনী খেদমতের পাশাপাশি সমাজসেবায় তাঁর অবদান অতুলনীয়।

মানব জীবন ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু কিছু মানুষ দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেও তাঁরা মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকেন যুগ থেকে যুগান্তর, কাল থেকে কালান্তরে। তাঁদের স্মৃতি-মহিমা কখনো ক্ষয় হয় না, লয় হয় না। আল্লামা ফুলতলী (রহ.) ছিলেন এক আদর্শ মহাপুরুষ। তাঁর জীবদ্দশায় আমরা তাঁকে পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের সাথে মিল খুঁেজ পাই। ইরশাদ হচ্ছে- ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন’ (সুরা: আনকাবুত, আয়াত-৬৯)। এই ক্ষণজন্মা মনীষী ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি রাত ২টার দিকে বিদায় নেন নশ্বর পৃথিবী থেকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর এ ওলীর দরজাকে বুলন্দ করে দিন এবং তাঁর সকল খিদমতগুলোকে সমৃদ্ধ করে দিন। আমিন।

 

 

কিউএনবি/আয়শা/২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩/সন্ধ্যা ৬:১৯

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

আর্কাইভস

July 2025
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৫-২০২৩
IT & Technical Supported By:BiswaJit